মরিচ বাংলাদেশের একটি অর্থকরী ফসল। এটি বাংলাদেশের নিত্য ব্যবহৃত মশলা। মরিচ কাঁচা ও পাকা দুই অবস্থায় খাওয়া হয়। বাংলাদেশের সব জায়গায়ই এর চাষ হয়। মরিচ শুধু মশলা বা রসনাতৃপ্তিতে ব্যবহার হয় না। পরিমিত এবং নিয়মিত খেলে এটি ভিটামিন এ, বি, সি-এর যোগান দেয়।
ব্যবহারঃ রান্না-বান্না ও মুখরোচক খাবার তৈরি ছাড়াও মরিচ বিভিন্ন ধরনের আচার তৈরির উপাদান হিসেবে ব্যবহার হয়। অনেকে মরিচের আচারও করে থাকেন।
উপযুক্ত জমি ও মাটিঃ প্রচুর আলো-বাতাস এবং পানি, সেচ ও নিকাশের ব্যবস্থা আছে এমন দো-আঁশ মাটি মরিচ চাষের জন্য উপযোগী।
যে সব জায়গায় বেশি পরিমাণে চাষ হয়ঃমরিচ চাষে বৃহত্তর বরিশাল জেলা অনেক এগিয়ে। তাছাড়া বগুড়া, ফরিদপুর, নোয়াখালী, জামালপুর, মেহেরপুর, বরিশাল, কুমিলস্না, চট্রগ্রাম এবং ময়মনসিংহে প্রচুর পরিমাণে মরিচ চাষ হয়।
জাত পরিচিতিঃ ঝাল ও মিষ্টি এ ধরনের মরিচ দেখা যায়। ঝাল মরিচের মধ্যে বগুড়া, চাঁদপুরী, ফরিদপুরী উল্লেখযোগ্য। এছাড়া কামরাংগা, আকালী ও কালো মরিচ খুব ঝাল।
চারা তৈরিঃ জমি ভালভাবে চাষ ও ও মই দিয়ে ও আগাছা বাছাই করে ৩x১ মিটার আকারের বীজতলা করে সেখানে বীজ বপন করা হয়। শীতকালের জন্য ভাদ্র-আশ্বিণ মাসে ও বর্ষা মৌসুমের জন্য ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বীজতলায় বীজ বপন করা হয়। চারা ১০ সে.মি. উঁচু হলে রোপণের উপযোগী হয়।
চারা রোপণঃ আগাছা পরিষ্কার করে ৪-৫ টি চাষ ও মই দিয়ে জমি প্রস্ততির পর চারা রোপণ করা হয়। চারা রোপণে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০-৭০ সে.মি. ও চারা থেকে চারার দূরত্ব ৩০-৪০ সে.মি. রাখা হয়। চারা বিকেলে লাগাতে হবে এবং ২-৩ দিন সকাল বিকাল পানি দিতে হবে।
সার ব্যবস্থাপনাঃ মরিচের জমিতে প্রতি হেক্টরে গোবর ১০ টন, ইউরিয়া ২৫০ কেজি, টিএসপি ২০০ কেজি এবং এমওপি সার ১৫০ কেজি প্রয়োগ করা হয়। জমি তৈরির সময় সমুদয় গোবর, টিএসপি ও ৫০ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করা হয়। চারা রোপণের ২৫ দিন পর ৮৪ কেজি ইউরিয়া ও ৩৪ কেজি এমওপি সার প্রথম উপরি প্রয়োগ করা হয়। লাগানোর ৫০ দিন পর ২য় ও ৭০ দিন পর তৃতীয় কিস্তির উপরি সার প্রয়োগ করা হয়। ২য় ও ৩য় কিস্তির প্রতিবারে ৮৩ কেজি ইউরিয়া ও ৩৩ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করা হয়।
সেচ ব্যবস্থা ও আগাছা দমনঃ গ্রীষ্মকালে ৪ থেকে ৫ দিন এবং শীতকালে ১০ থেকে ১২ দিন পরপর সেচ দিতে হবে। তাছাড়া প্রতি কিস্তি সার প্রয়োগের পরে সেচ দেয়া প্রয়োজন। সেচের কয়েক দিন পর মাটিতে চটা দেখা দিলে ভেঙ্গে দিতে হবে যাতে শিকড় প্রয়োজনীয় আলো ও বাতাস পায়। এতে গাছের বৃদ্ধি বেশি হয়। আগাছা দেখা দিলে তা পরিষ্কার করতে হবে এবং উপরি সার প্রয়োগের সময় কোদাল দিয়ে কুপিয়ে আলগা করে দিতে হবে।
লক্ষ্যণীয়ঃ ছে ফুল আসার সময় এবং তার ২০ থেকে ৩০ দিন পর অনুমোদিত হরমোন জাতীয় ওষুধ ১০ থেকে ১২ লিটার পানিতে ২ মিলি হারে বা ৪ থেকে ৫ লিটার পানিতে ১ মিলি সেলমন দ্রবন তৈরি করে গাছে প্রয়োগ করলে মরিচ অকালে ঝরে পড়ে না ও ফলন বাড়ে।
রোগবালাই ব্যবস্থাপনাঃ
পোকার নামঃ সাদা মাছি
খুব ছোট আকারের এ পোকা পাতার রস চুষে খায়। ফলে গাছের বাড়বাড়তি ব্যহত হয়। তাছাড়া এ পোকা কালো সুটি মোল্ড নামক ছত্রাক পাতায় জন্মাতে সহায়তা করে এবং ভাইরাস রোগ ছড়ায়। সাদা রংয়ের এ পোকা গাছের পাতার নিচের দিকে থাকে। লম্বায় ১ মিলিমিটারের চেয়ে সামান্য বড়। গাছের পাতা সামান্য নাড়া দিলে উড়ে চলে যায়। এ সকল পোকার শরীর সাদা মোম জাতীয় পদার্থ দ্বারা ঢাকা থাকে।
ক্ষতির নমুনাঃ পাতার নিচের দিক হতে প্রাপ্ত বয়স্ক ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক (নিম্ফ) পোকা পাতার রস চুষে খায় ফলে পাতা কুঁচকে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। আক্রমণে প্রথমে পাতায় সাদা বা হলদেটে রং দেখা যায় পরে দাগগুলো একত্রে হয়ে সবুজ শিরাসহ পাতা হলুদ হয়ে যায়। এ পোকা খাওয়ার সময় আঠালো মিষ্টি রস নি:সরণ করে বিধায় ঐ আঠাতে কালো ছত্রাক জন্মাতে সহায়তা করে। এ পোকা ভাইরাস রোগ ছড়ায়। উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়া এ পোকা বিস্তারের জন্য সহায়ক।
জীবন চক্রঃ এ পোকা সাধারনত পাতার নিচের দিকে অতি ক্ষুদ্র সাদা ডিম পাড়ে। ডিম পরে বাদামী রং ধারণ করে ও ৩-১৭ দিন পর ডিম ফুটে নিম্ফ (বাচ্চা) বের হয়। বাচ্চা সবুজাভ সাদা, ২-৬ সপ্তাহ নিম্ফ অবস্থায় থেকে পূর্ণাঙ্গ পোকায় পরিণত হয়। পূর্নাঙ্গ পোকা ১০-১৫ দিন বাঁচে।
ব্যবস্থাপনাঃ হলুদ রংয়ের আঠালো ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে। প্রতি লিটারের ৫ গ্রাম কাপড় কাঁচা সাবান মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। অনুমোদিত কীটনাশক নির্ধারিত মাত্রায় ব্যবহার করতে হবে।
পোকার নামঃ থ্রিপস
এ পোকা ছোট কিন্তু পাতার রস চুষে খায় বিধায় গাছ দূর্বল হয়ে পড়ে। সে কারনে ক্ষেতের মধ্যে পাতা বিবর্ণ দেখালে কাছে গিয়ে মনোযোগ সহকারে দেখা উচিৎ, তা না হলে ফলন অনেক কমে যাবে। পোকা আকৃতিতে খুব ছোট। স্ত্রী পোকা সরু, হলুদাভ। পূর্ণ বয়স্ক পুরুষ গাঢ় বাদামী। বাচ্চা সাদা বা হলুদ। এদের পিঠের উপর লম্বা দাগ থাকে।
ক্ষতির নমুনাঃ এরা রস চুষে খায় বলে আক্রান্ত পাতা রূপালী রং ধারণ করে। আক্রান্ত পাতায় বাদামী দাগ বা ফোঁটা দেখা যায়। অধিক আক্রমণে পাতা শুকিয়ে যায় ও ঢলে পড়ে। রাইজোম আকারে ছোট ও বিকৃত হয়।
জীবন চক্রঃ স্ত্রী পোকা পাতার কোষের মধ্যে ৪৫-৫০ টি ডিম পাড়ে। ৫-১০ দিনে ডিম হতে নিম্ফ (বাচ্চা) বের হয়। নিম্ফ ১৫-৩০ দিনে দুটি ধাপ অতিক্রম করে। প্রথম ধাপে খাদ্য গ্রহণ করে এবং দ্বিতীয় ধাপে খাদ্য গ্রহণ না করে মাটিতে থাকে। এরা বছরে ৮ বার বংশ বিস্তার করে। এবং স্ত্রী পোকা পুরুষ পোকার সাথে মিলন ছাড়াই বাচ্চা দিতে সক্ষম।
ব্যবস্থাপনাঃ সাদা রংয়ের আঠালো ফাঁদ ব্যবহার। ক্ষেতে মাকড়সার সংখ্যা বৃদ্ধি করে এ পোকা দমন করা যায়। আক্রমণ বেশি হলে পারফেকথিয়ন/মেটাসিসটক্স এক চা চামচ ৫ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
পোকার নামঃ জাব পোকা
র্পূনাঙ্গ ও নিম্ফ (বাচ্চা) পাতা, ফুল, কচি ফল ও ডগার রস চুষে খায়। অধিক আক্রমনে গাছের বাড় বাড়তি কমে যায় ও ফলন কম হয়। এ পোকা ভাইরাস রোগ ছড়ায়। জাব পোকা অতি ছোট, দেহ নরম ও উজ্জ্বল কাল রংয়ের হয়ে থাকে। পাখাওয়ালা জাব পোকা উড়তে পারে কিন্তু নিম্ফ বা পাখা বিহীন উড়তে পারে না। এরা দল বদ্ধ ভাবে বাস করে।
ক্ষতির নমুনাঃ পূর্নাঙ্গ ও নিম্ফ পাতা, ফুল কচি ফল ও ডগার রস চুষে খায়। পাতা কুঁকড়ে যায়, গাছের বৃদ্ধি ও ফুল, ফল ধারণ বাধাগ্রস্থ হয়। এ পোকা থেকে নি:সৃত মধুরসে কালো শুটি মোল্ড ছত্রাক জন্মায়। বাতাসে আর্দ্রতা বেশী ও মেঘলা আকাশ থাকলে পোকার আক্রমণ বেশি হয়।
জীবন চক্রঃ এ পোকা কোন যৌন মিলন ছাড়াই ১০-১২ দিনের মধ্যে ৮-৩০ টি নিম্ফ জন্ম দিতে পারে। নিম্ফ অবস্থা ৫-৮ দিন থাকে। পাখা বিহীন জাব পোকা ২৪ ঘন্টার মধ্যে বাচ্চা দিতে পারে। এরা সারা বছর বংশ বিস্তার করে।
ব্যবস্থাপনাঃ আক্রমনের প্রাথমিক অবস্থায় হাত দিয়ে পিষে মেরে ফেলা। লেডি বার্ড বিটলের পূর্নাঙ্গ ও কীড়া (গ্লাব) এবং সিরফিড ফ্লাই এর কীড়া জাব পোকা খায় বিধায় এদের সংরক্ষণ ও সংখ্যা বাড়ানো গেলে জাবপোকা অতিদ্রুত খেয়ে ফেলে। আক্রমণ বেশি হলে অনুমোদিত কীট নাশক ব্যবহার করতে হবে।
পোকার নামঃ ফলছিদ্রকারী পোকা
এ পোকার মথ নিশাচর এবং রাতের আলোতে আকৃষ্ট হয়। পোকার কীড়ার আক্রমণে মরিচ ছিদ্র যুক্ত দেখায় ও বাজার মূল্য কমে যায়। মা পোকাকে (মথ) সাধারনত রাত ছাড়া দেখা যায় না। কীড়াকে (বাচ্চা) ফলের মধ্যে দেখা যায়। কীড়া লম্বায় প্রায় ২ ইঞ্চি। কীড়ার গায়ের রং কালচে ধূসর থেকে হালকা বাদামী এবং শরীরের উভয় পার্শ্বে লম্বালম্বি হালকা কাল ও বাদামী রংয়ের দাগ দেখা যায়।
ক্ষতির নমুনাঃ কীড়া ফলের বোটার কাছে ছিদ্র করে ভেতরের অংশ খায়। একটি পোকা একাধিক ফলে আক্রমন করতে পারে এবং ফলের ভেতর কীড়ার বিষ্ঠা ও পচন দেখা যায়। আক্রান্ত ফল অসময়ে পাকে।
জীবন চক্রঃ মথ পাতার নিচে ২০০-৩০০ ডিম পাড়ে। ৩-৪ দিনে ডিম ফোটে কীড়া বের হয়। ছোট কীড়া একত্রে থাকে তবে বড় হলে সারা মাঠ ছড়িয়ে পড়ে। কীড়া ১৪-১৬ দিন পর পুত্তলিতে পরিণত হয়। পুত্তলি ২-৩ ইঞ্চি মাটির গভীরে থাকে। ১০-১৫ দিন পর পুত্তলি হতে পূর্ণাঙ্গ মথ বের হয়। জীবনচক্র সম্পন্ন করতে ৩০-৩৫ দিন লাগে। এরা বছরে ৮ বার বংশ বিস্তার করে।
ব্যবস্থাপনাঃ জমি থেকে ডিম ও কীড়া সংগ্রহ করে নষ্ট করা। প্রতি বিঘায় ১৫ টি হারে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে পুরুষ মথ মেরে ফেলা। প্রতি সপ্তাহে একবার করে পরজীবী পোকা; ট্রাইকোগ্রামা কাইলোনিজ ব্যবহার (প্রতি হেক্টরে ১ গ্রাম ডিম) করা। আক্রমণ বেশি হলে অনুমোদিত কীট নাশক ব্যবহার করতে হবে।
নামঃ চওড়া মাকড়
এদের পা ৮ টি বলে মাকড় বলে। বালিকণার মত ক্ষুদ্র বলে দেখা যায় না কিন্তুু এদের আক্রমণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে থাকে। মাকড় অতি ক্ষুদ্র, খালি চোখে দেখা যায় না, রং সাদা বা হলদে। এরা পাতার নিচে মধ্য শিরা ঘিরে দলবদ্ধভাবে বসবাস করে। দেহ নরম, ডিম্বাকৃতির। এরা কাঁকড়ার মত দেখায়।
ক্ষতির নমুনাঃ পাতার নীচে থেকে রস চুষে খায় ফলে পাতার শিরার মধ্যকায় এলাকার বাদামী রং ধারণ করে ও শুকিয়ে যায়। আক্রান্ত পাতা কুঁকড়িয়ে যায় এবং কচি পাতার নীচের দিকে বেঁকে পেয়ালা আকৃতির হয়ে যায় ও পাতা সরু হয়। ব্যাপক আক্রমণে পাতা ভেঙ্গে যায়। ফলন ব্যাপকভাবে কমে যায়।
জীবন চক্রঃ স্ত্রী মাকড় পাতার নীচে ৩০-৭৬ টি ডিম পাড়ে। ২-৩ দিনের মধ্যে ডিম থেকে কীড়া বের হয়। ২-৩ দিন পর কীড়াগুলো নিম্ফে পরিণত হয় এবং ১ দিন পর পূর্ণাঙ্গ মাকড়ে পরিণত হয়। পূর্ণাঙ্গ স্ত্রী মাকড় ৮-১৩ দিন বাঁচে ও পুরুষ মাকড় ৫-৯ দিন বাঁচে।
ব্যবস্থাপনাঃ আক্রমণের শুরুতে হাত দিয়ে আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে ধ্বংশ করতে হবে। প্রতি লিটার পানিতে নিম তেল ৫ মিলি+৫ মিলি ট্রিকস্ মিশিয়ে পাতার নিচের দিকে স্প্রে করতে হবে। পাইরিথ্রয়েড জাতীয় কীটনাশক প্রয়োগ যথা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। অনুমোদিত মাকড়নাশক প্রয়োগ করতে হবে।
রোগের নামঃ ক্ষত, এনথ্রাকনোজ বা ডাইব্যাক
কলিটোট্রিকাম ক্যাপসিসি নামক ছত্রাক দ্ধারা এ রোগ হয়। এ রোগের আক্রমণে গাছ বড় হয় না, পাতায় দাগ পড়ে ও ডগা থেকে শুরু হয়ে পুরো গাছ মরে যেতে পারে। মরিচে আক্রমন হলে মরিচের ফলন কম হয় এবং রং বিবর্ণ হওয়ায় বাজার মূল্য কমে যায়।
ক্ষতির নমুনাঃ চারা ও বয়স্ক গাছের পাতা, ডাল, ফুল ফল আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত পাতা ঝরে যায় ও ডগা উপর হতে মরতে শুরু করে। আক্রান্ত গাছ ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করে, দুর্বল হয়ে যায় ও ফল ধারণ ক্ষমতা কমে যায়। ফলের উপর গোলাকার কাল দাগ পড়ে এবং দাগের চারিদিকে গাঢ় হলুদ রিং বা বলয় থাকে। এ দাগ বৃদ্ধি পেয়ে ফল পঁচিয়ে দেয় ও ঝরে পড়ে। আক্রান্ত গাছ দ্রুত মরে যায়। আর্দ্র আবহাওয়া ও অধিক বৃষ্টিপাত এ রোগ বিস্তারে সহায়তা করে। গাছের পরিত্যাক্ত অংশ, বিকল্প পোষক হতে বায়ু, পানি, ইত্যাদির মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। তাছাড়া বীজের মাধ্যমে ও এ রোগের বিস্তার হয়।
ব্যবস্থাপনাঃ সুস্থ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। আক্রান্ত গাছের পরিত্যাক্ত অংশ ধ্বংশ করতে হবে। অনুমোদিত ছত্রাকনাশক দ্ধারা বীজ শোধন করে বীজ বপন করতে হবে। ক্ষেতে রোগের আক্রমণ দেখা মাত্র টিল্ট-২৫০ ইসি (০.০৫%) ব্যাভিস্টিন (০.১%) বা নোইন (০.২%) ১০ দিন পরপর স্প্রে করতে হবে।
রোগের নামঃ পাতা পঁচাঃ ছত্রাকের আক্রমনে এ রোগ হয়। ক্ষেতে আক্রমণ বেশী হলে সম্পূর্ণ ফসল নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে। এ কারনে রোগের আক্রমনের শুরু থেকেই সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
ক্ষতির নমুনাঃ চারা ও বয়স্ক গাছের শাখা প্রশাখা, পাতা ফুল ও ফল এ রোগে আক্রান্ত হয়। প্রথমে পাতায় পানি ভেজা দাগ দেখা যায়। পরে এ দাগ বৃদ্ধি পায় ও আক্রান্ত অংশ বিবর্ণ হয়ে কালচে রং ধারন করে এবং পাতা দ্রুত পঁচে যায়। অনুকুল পরিবেশে ৫-৭ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ গাছ মরে যেতে পারে। উচ্চ তাপ মাত্রা ও স্যাঁত স্যাঁতে আবহাওয়ায় এ রোগ দ্রুত ছড়ায়। বায়ু, আক্রান্ত অংশের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়।
ব্যবস্থাপনাঃ ফসলের পরিত্যাক্ত অংশ নষ্ট করতে হবে। আক্রান্ত অংশ টিল্ট-২৫০ (০,০৫%), রিডোমিল গোল্ড (০.২%), কুপ্রাভিট (১.০%) অথবা ডাইথেন এম-৪৫ (০.২%) স্প্রে করতে হবে।
রোগের নামঃ লিফ কার্ল
একপ্রকার ভাইরাসের আক্রমণে এ রোগ হয়। যে কোন বয়সের গাছ আক্রান্ত হতে পারে তবে বয়স্ক গাছই বেশী আক্রান্ত হয়। পাতা কুঁকড়িয়ে যায় বলে গাছের সাধারণ বৃদ্ধি ব্যহত হয় ও ফলন কমে যায়।
ক্ষতির নমুনাঃ আক্রান্ত গাছের পাতা কুঁকড়িয়ে যায় ও সাধারণ পাতা অপেক্ষা পুরু হয়। গাছের পর্ব মধ্য ছোট হয় ও গাছ খাট আকারের হয়। ফুল ও ফল ধারণ ক্ষমতা কমে যায়। ভাইরাস আক্রান্ত গাছ মরে যায় না তবে পুনরায় স্বাভাবিক ও হয় না।
ব্যবস্থাপনাঃ আশপাশের সোলানেসি পরিবারের (বেগুন জাতীয়) অন্যান্য পোষক উদ্ভিদ ধ্বংশ করতে হবে। চারা অবস্থা থেকে পারফেকথিয়ন-৪০ ইসি বা টাফগার-৪০ ইসি জাতীয় কীটনাশক ১ লিটার পানিতে ১ মিলি স্প্রে করে বাহক পোকা দমন করতে হবে।
ফসল সংগ্রহঃ ফুল আসার পর ১৫-২০ দিনের মধ্যে কাঁচা মরিচ তোলা হয়। তবে মরিচের রং লাল হলে তুলে রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায়। প্রতি হেক্টরে ফলন কাঁচা ১০-১১ টন ও শুকনো ১.৫-২.০ টন।
ফসল সংগ্রহের পর করণীয়ঃ মরিচ সাধারণতঃ অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা, ছায়াযুক্ত এবং শুকানো জায়গায় ২৮ সে. তাপমাত্রা ৬০% আপেক্ষিক আর্দ্রতায় ১ থেকে ২ সপ্তাহ রাখলে মরিচের কোন ক্ষতি হয় না।
বাছাই করাঃ কাঁচা মরিচ সংগ্রহের পর ‘ভাঙ্গা ও পঁচা’ এবং ‘ভালো’ এই দুইভাবে ভাগ করতে হবে। শুধুমাত্র ভালগুলি বাজারে বিক্রি করতে হবে।
শুকনো মরিচ দুইভাবে বাছাই করা হয়-
১) সাদা হয়ে যাওয়া ও বোটা খুলে যাওয়াগুলো নিজের ব্যবহারের জন্য রেখে দেওয়া যায় এবং ২) শুধুমাত্র ভালগুলি সংরক্ষণ করতে হবে।
সংরক্ষণ পদ্ধতিঃ মরিচের পাকা ফল গাছ থেকে তুলে, শুকিয়ে তা সংরক্ষণ করা হয়। সূর্য্যের আলোর সাহায্যে ফল শুকানো আমাদের দেশে একটি প্রচলিত পদ্ধতি। কিন্তু একটু খেয়াল না করলে বেশি সূর্যের তাপে ফল সাদাটে রং ধারন করে। সংগ্রহকৃত ফলে বৃষ্টি বা শিশির পড়লে ‘ফল পঁচা’ রোগ দেখা দেয়। মরিচ শুকানোর সময় মরিচের বোটা যেন খুলে না যায় সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। মরিচ ৬৫০ সে. তাপমাত্রার গরম পানির মধ্যে ৩ মিনিট রাখলে ফলের শুকানোর সময়টা কমে যায় ফলে মরিচের রং ধারন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং মরিচ সংগ্রহের পরের ক্ষতি কম হয়। মরিচ শুকানোর পর মাচার উপরে টিনের ডোল, গোলা, বেড়ি, পলিথিন বা ড্রামে রাখতে হবে। মরিচের গোলা এমন হওয়া উচিৎ যেন বাইরে থেকে বাতাস ঢুকতে না পারে। যে সব ঘরের উপর গাছের ছায়া পড়ে না এবং স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় অবস্থিত নয় কেবলমাত্র সেসব ঘরেই মরিচের গোলা তৈরী করা দরকার।
বীজ উৎপাদনঃ মরিচ চাষীরা সহজেই এর বীজ উৎপাদন করতে পারে। তবে বীজ উৎপাদনের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন এই জাতের মরিচের জমির চারপাশে অন্ততঃ ১৩০০ ফুটের মধ্যে অন্য কোন মরিচের জাত না থাকে। পরিপক্ক, পুষ্ট এবং উজ্জ্বল লাল রং-এর মরিচ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। সাধারণতঃ একটি মরিচে ৭০ থেকে ৭৫ টি বীজ থাকে এবং ১০০০টি বীজের ওজন প্রায় ৫ গ্রাম। প্রতি একরে ৩২ থেকে ৩৫ কেজি বীজ উৎপাদন করা সম্ভব।
উত্তর সমূহ