পুষ্টি মূল্য
গম হতে যে আটা হয় তার প্রতি ১০০ গ্রাম আটায় আমিষ ১২.১ গ্রাম, শর্করা ৬৯.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৪৮ মিলিগ্রাম, লৌহ ১১.৫ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ২৯ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি-১ ০.৪৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-২ ০.২৯ মিলিগ্রাম, আাঁশ ১.৯ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ২.৭ গ্রাম এবং জলীয় অংশ থাকে ১২.২ গ্রাম।

ব্যবহার

গম সাধারণত মানুষের রুটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া গমের কুঁড়া গো-খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

উপযুক্ত জমি ও মাটি

উঁচু ও মাঝারি দোআশ মাটি গম চাষের জন্য বেশী উপযোগী। লোনা মাটিতে গমের ফলন কম হয়।

জাত পরিচিতি

বর্তমানে এদেশে অধিক আবাদকৃত গম জাতের মধ্যে কাঞ্চন, আকবর, অঘ্রাণী ও প্রতিভা রয়েছে। তাছাড়া সৌরভ (বারি গম-১৯) ও গৌরব (বারি গম-২০) নামে ২টি উচ্চ ফলনশীল নতুন জাত অনুমোদিত হয়েছে।

গমের জাত
কাঞ্চন
গাছের উচ্চতা ৯০-১০০ সেমি। কুশির সংখ্যা ৬-৭টি। গাছের নিশান পাতা খাড়া। শীষ বের হতে ৬০-৬৮ দিন সময় লাগে। প্রতি শীষে ৩৫-৪০টি দানা থাকে। দানা সাদা এবং হাজার দানার ওজন ৪৮-৫২ গ্রাম। অন্যান্য জাতের তুলনায় দানা আকারে বড়। চারা আবস্থায় প্রাথমিক কুঁশি মাটির উপরে অবস্থান করে। বোনা থেকে পাকা পর্যন্ত ১০৬-১১২ দিন সময় লাগে। এ জাতটি দীর্ঘ সময় ধরে চাষাবাদ হচ্ছে। বর্তমানে পাতার মরিচা দাগ রোগে আক্রান্ত হওয়ায় জাতটির ফলন কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে হেক্টর প্রতি ৩.৫-৪.৬ টন ফলন হয়। জাতটি দেশের সকল অঞ্চলে চাষের জন্য উপযোগী। বর্তমানে সারা দেশে কাঞ্চন গম খুবই জনপ্রিয়। বাংলাদেশে প্রায় ৮০ ভাগ এলাকায় কাঞ্চন গমের আবাদ হচ্ছে।
আকবর
এ জাতের গাছের উচ্চতা ৮৫-৯০ সেমি। কুশির সংখ্যা ৬-৭টি। পাতা কিছুটা হেলানো। নিশান পাতা খুবই চওড়া ও লম্বা। শীষ বের হতে ৫০-৫৫ দিন সময় লাগে। প্রতি শীষে ৫০-৫৫টি দানা থাকে। দানা সাদা, আকারে মাঝারি এবং হাজার দানার ওজন ৩৭-৪২ গ্রাম। পাতার গোড়ায় সাদা অরিকল থাকে। ফসল বোনা থেকে কাটা পর্যন্ত ১০৩-১০৮ দিন সময় লাগে। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে  ফলন হেক্টরপ্রতি ৩.৫-৪.৫ টন হয়। জাতটি পাতার দাগ রোগ সহনশীল। বৃহত্তর ময়মনসিংহ, যশোর, কুষ্টিয়া ও খুলনা জেলায় এ জাতের ফলন বেশী হয়। তবে আকবর জাতের গম দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও চাষের জন্য উপযোগী।
অঘ্রাণী
এ জাতের গাছের উচ্চতা ৮৫-৯০ সেমি, কুশির সংখ্যা ৫-৬টি। পাতা কিছুটা হেলানো, নিশান পাতা বড়। গাছের পাতা ও কান্ডে পাতলা মোমের আবরণের মতো বস্তু লক্ষ্য করা যায়। শীষ বের হতে ৫৫-৬০ দিন সময় লাগে। প্রতি শীষে ৫০-৫৫টি দানা থাকে। দানার রং সাদা, আকারে মাঝারি এবং হাজার দানার ওজন ৩৮-৪২ গ্রাম। পাতার গোড়ায় বেগুনি অরিকল থাকে। বোনা থেকে পাকা পর্যন্ত ১০৩-১১০ দিন সময় লাগে। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে ফলন হেক্টরপ্রতি ৩.৫-৪.০ টন হয়। জাতটি পাতার দাগ (ব্লাইট রোগ সহনশীল)। দেরীতে বপনের জন্য অঘ্রাণী জাতের গম বিশেষভাবে উপযোগী।
প্রতিভা
গাছের উচ্চতা ৮৫-৯৫ সেমি। কুশির সংখ্যা ৬-৭টি। গাছের নিশান পাতা খাড়া। শীষ বের হতে ৬০-৭০ দিন সময় লাগে। শীষ লম্বা ও প্রতি শীষে ৩৫-৪৫ টি দানা থাকে। দানা সাদা, আকারে বড় ও হাজার দানার ওজন ৪২-৪৮ গ্রাম। ফসল বোনা থেকে পাকা পর্যন্ত ১০৫-১১০ দিন সময় লাগে। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে হেক্টরপ্রতি ৩.৮-৪.৫ টন ফলন পাওয়া যায়। গমের প্রতিভা জাত পাতার মরিচা ও পাতার দাগ রোগ সহনশীল।প্রতিভা জাতের গম দেশের সকল অঞ্চলে চাষ করা যায়।
সৌরভ

গাছের উচ্চতা ৯০-১০০ সেমি। কুশির সংখ্যা ৫-৬টি। পাতা চওড়া, হেলানো ও গাঢ় সবুজ। নিশান পাতা চওড়া ও হেলানো। নিশান পাতার নীচের তলে মোমের মতো পাতলা আবরন থাকে। কান্ড মোটা ও শক্ত, ঝড় বৃষ্টিতে হেলে পড়ে না। নীচের গ্লুমের ঠোঁট বড়, প্রায় ৫ মিমি। শীষ বের হতে ৬০-৭০ দিন সময় লাগে। শীষ লম্বা, প্রতিটি শীষে দানার সংখ্যা ৪২-৪৮টি, দানার রং সাদা এবং হাজার দানার ওজন ৪০-৪৫ গ্রাম। বোনা থেকে পাকা পর্যন্ত ১০২-১১০ দিন সময় লাগে। উন্নত পদ্ধতিতে আবাদ করলে হেক্টরপ্রতি ফলন ৩.৫-৪.৫ টন পাওয়া যায়। জাতটি পাতার দাগ রোগ সহনশীল এবং পাতার মরিচা রোগ প্রতিরোধী। সৌরভ গম দেশের প্রায় সকল অঞ্চলে চাষের জন্য উপযোগী।
গৌরব
গাছের উচ্চতা ৯০-১০২ সেমি। কুশি ৫-৬টি। পাতা গাঢ় সবুজ। নিশান পাতা খাড়া, সরুও ইষৎ মোড়ানো। নীচের গ্লুমের ঠোঁট ছোট প্রায় ২ মিমি। শীষ বের হতে ৬০-৬৫ দিন সময় লাগে। শীষ লম্বা, অগ্রভাগ সরু। প্রতি শীষে ৪৫-৫০টি দানা থাকে। দানার রং সাদা এবং হাজার দানার ওজন ৪০-৪৮ গ্রাম। জীবনকাল ১০০-১০৮ দিন। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে হেক্টরপ্রতি ৩.৬-৪.৮ টন ফলন পাওয়া যায়। জাতটি পাতার মরিচা রোগ প্রতিরোধী এবং পাতার দাগ রোগ সহনশীল। এ জাতটি তাপ সহিষ্ণু তাই দেরীতে বপন করলে ভাল ফলন দেয়। বর্তমানে গম জাতসমূহের তুলনায় এ জাত ১০-১২ ভাগ বেশী ফলন দেয়।
বারি গম-২১ (শতাব্দী)
গাছের উচ্চতা ৯০-১০০ সেমি। কুশির সংখ্যা ৪-৬টি। পাতা চওড়া ও হালকা সবুজ। শীষ লম্বা এবং প্রতি শীষে দানার সংখ্যা ৪০-৪৫টি। শীষ বের হতে ৬৫-৬৯ দিন সময় লাগে। দানার রং সাদা ও আকারে বড়। হাজার দানার ওজন ৪৬-৪৮ গ্রাম। ফসল বোনা থেকে পাকা পর্যন্ত ১০৫-১১২ দিন সময় লাগে। উপযুক্ত পরিবেশে হেক্টরপ্রতি ফলন ৩.৬০-৫.০০ টন। উপযুক্ত সময়ে বা দেরিতে বপনে কাঞ্চনের চেয়ে শতকরা ১০-২০ ভাগ বেশী ফলন দেয়। জাতটি পাতার দাগ রোগ সহনশীল এবং মরচিা রোগ প্রতিরোধী। জাতটি তাপ সহনশীল এবং আমন ধান কাটার পর দেরিতে বপনের জন্যও জাতটি উপযুক্ত।
বারি গম-২২ (সুফী)
চার পাঁচটি কুশি বিশিষ্ঠ গাছের উচ্চতা ৯০-১০২ সেমি। পাতা চওড়া ও গাঢ় সবুজ। শীষ বের হতে ৫৮-৬২ দিন এবং বোনা থেকে পাকা পর্যন্ত ১০০-১১০ দিন সময় লাগে। জাতটি পাতার দাগ রোগ সহনশীল এবং মরিচা রোগ প্রতিরোধী। এটি তাপ সহনশীল ও চিটা প্রতিরোধী, পাউরুটি তৈরীর জন্য খুবই উপযোগী। জাতটি ডিসেম্বর মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত বপন করা চলে এবং দেরিতে বপন করলেও দানার আকার প্রায় স্বাভাবিক থাকে। উপযুক্ত পরিবেশে হেক্টরপ্রতি ফলন ৩.৬-৪.৮ টন এবং দেরিতে বপনে জাতটি কাঞ্চনের চেয়ে শতকরা ১০-২০ ভাগ ফলন বেশি দেয়।
বারি গম-২৩ (বিজয়)
চার পাঁচটি কুশি বিশিষ্ঠ গাছের উচ্চতা ৯৫-১০৫ সেমি। পাত চওড়া ও হালকা সবুজ। শীষ বের হতে ৬০-৬৫ দিন এবং বোনা থেকে পাকা পর্যন্ত ১০৩-১১২ দিন সময় লাগে। শীষ লম্বা এবং প্রতি শীষে দানার সংখ্যা ৩৫-৪০টি। দানার রং সাদা, চক্চকে ও আকারে ছোট। জাতটি পাতার দাগ রোগ সহনশীল এবং মরিচা রোগ প্রতিরোধী। জাতটি তাপ সহনশীল। আমন ধান কাটার পর দেরিতে (ডিসেম্বর মাসের ১৫-২০ তারিখ পর্যন্ত) বপনের জন্যও এ জাতটি উপযোগী। উপযুক্ত পরিবেশে হেক্টরপ্রতি ফলন ৪.৩-৫.০ টন এবং দেরিতে বপনে জাতটি ভাল ফলন দিতে সক্ষম।
বারি গম-২৪ (প্রদীপ)
চার পাঁচটি কুশি বিশিষ্ঠ গাছের উচ্চতা ৯৫-১০০ সেমি। পাতা চওড়া ও গাঢ় সবুজ। শীষ বের হতে ৬৪-৬৬ দিন এবং বোনা থেকে পাকা পর্যন্ত ১০২-১১০ দিন সময় লাগে। শীষ লম্বা এবং প্রতি শীষে দানার সংখ্যা ৪৫-৫৫টি। দানার রং সাদা, চক্চকে ও আকারে বেশ বড়। জাতটি পাতার দাগ রোগ সহনশীল এবং মরিচা রোগ প্রতিরোধী। আমন ধান কাটার পর দেরিতে বপনের জন্য এ জাতটি খুবই উপযোগী। উপযুক্ত পরিবেশে হেক্টরপ্রতি ফলন ৩.৫-৫.১ টন এবং দেরিতে বপনে জাতটি কাঞ্চনের চেয়ে শতকরা ১০-২৫ ভাগ ফলন দেয়।
বারি গম ২৫
গম গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত বারি গম ২৫ একটি উচ্চ ফলনশীল লবণাক্ততা সহিষ্ণু গমের জাত। জাতটি ৬ এপ্রিল ২০১০ জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক জাত হিসেবে অনুমোদন লাভ করে এবং চাষাবাদের জন্য অবমুক্ত করা হয়। এ জাতটি দেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ অন্যান্য এলাকায় চাষের উপযোগী। গাছের উচ্চতা ৯৫-১০০ সেমি, কুশির সংখ্যা ৪-৫টি, পাতা চওড়া ও হালকা সবুজ। শীষ বের হতে ৫৭-৬২ দিন সময় লাগে। জীবনকাল ১০২-১১০ দিন। শীষ লম্বা এবং প্রতি শীষে দানার সংখ্যা ৪৫-৫৫টি। দানা সাদা, চকচকে ও আকারে বড়। হাজার দানার ওজন ৫৪-৫৮ গ্রাম। জাতটি পাতার দাগ রোগ সহনশীল এবং মরিচা রোগ প্রতিরোধী। জাতটি চারা অবস্থায় ৮-১০ ডিএস/মিটার মাত্রার লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। জাতটি স্বল্প মেয়াদী ও তাপ সহিষ্ণু হওয়ায় দেরিতে বপনেও  ভাল ফলন দেয়। উপযুক্ত পরিবেশে হেক্টর প্রতি ফলন ৩৮০০-৫০০০ কেজি।
বারি গম ২৬
গম গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত বারি গম ২৬ একটি ইচ্চ ফলনশীল তাপ সহিষ্ণু গমের জাত। জাতটি ৬ এপ্রিল ২০১০ জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক দেশের সকল অঞ্চলে চাষাবাদের জন্য অবমুক্ত করা হয়। এ জাতটি উপযুক্ত সময়ে ও দেরিতে বপনে ভাল ফলন দিতে সক্ষম। গাছের উচ্চতা ৯২-৯৬ সেমি, কুশির সংখ্যা ৫-৬টি, পাতা চওড়া ও গাঢ় সবুজ। শীষ বের হতে ৬০-৬৫ দিন সময় লাগে।    জীবনকাল ১০৪-১১০ দিন।  শীষ মাঝারী ও প্রতি শীষে দানার সংখ্যা ৪৫-৫০টি। দানা সাদা, চকচকে ও আকারে বড়।  হাজার দানার ওজন ৪৮-৫২ গ্রাম। জাতটি পাতার দাগ রোগ সহনশীল ও মরিচা রোগ প্রতিরোধী। জাতটি কান্ডের মরিচা রোগ (ইউ জি ৯৯) প্রতিরোধী। জাতটি তাপ সহিষ্ণু হওয়ায় আমন ধান কাটার পর দেরিতে বপনের জন্য খুবই উপযোগী। উপযুক্ত পরিবেশে হেক্টর প্রতি ফলন ৪০০০-৫০০০ কেজি।

বপনের সময়
গমের উচ্চ ফলনশীল জাতসমূহের বপনের উপযুক্ত সময় হল কার্তিক মাসের শেষ থেকে অগ্রহায়ণর তৃতীয় সপ্তাহ (নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ হতে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত)। যে সব এলাকায় ধান কাটতে ও জমি তৈরী করতে বিলম্ব হয় সে ক্ষেত্রে কাঞ্চন,আকবর, অঘ্রাণী, প্রতিভা ও গৌরব বপন করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়।  

       
বপনের পদ্ধতি
সারিতে বা ছিটিয়ে গম বীজ বপন করা যায়। সারিতে বপনের জন্য জমি তৈরীর পর লাঙ্গল দিয়ে সরুনালা তৈরী করে ২০ সেমি দূরত্বের সারিতে ৪-৫ সেমি গভীরে বীজ বুনতে হয়।

সার ব্যবস্থাপনা
সেচসহ চাষের ক্ষেত্রে নির্ধারিত ইউরিয়া সারের দুই তৃতীয়াংশ এবং সম্পূর্ণ টিএসপি, এমওপি ও জিপসাম শেষ চাষের পূর্বে প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকী এক তৃতীয়াংশ ইউরিয়া প্রথম সেচের সময় উপরি প্রয়োগ করতে হবে। সেচছাড়া চাষের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সার অর্থাৎ ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি ও জিপসাম শেষ চাষের সময় জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। গম চাষে নীচে উল্লেখিত হারে সার ব্যবহার করা প্রয়োজন।

 

সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা
মাটির প্রকার ভেদে সাধারণত ২-৩টি সেচের প্রয়োজন হয়। প্রথম সেচ চারার তিন পাতার সময় (বপনের ১৭-২১ দিন পরে), দ্বিতীয় সেচ গমের শীষ বের হওয়ার সময়। (বপনের ৫৫-৬০ দিন পর) এবং তৃতীয় সেচ দানা গঠনের সময় (বপনের ৭৫-৮০ দিন পর) দিতে হবে। জমিতে আগাছা দেখা দিলে সাথে সাথে আগাছা দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে।

রোগ ব্যবস্থাপনা
গমের পাতার মরিচা রোগ দমন
পাক্সিনিয়া রিকন্ডিটা নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে। প্রথমে পাতার উপর ছোট গোলাকার হলুদাভ দাগ পড়ে। শেষ পর্যায়ে এই দাগ মরিচার মত বাদামি বা কালচে রংয়ে পরিনত হয়। হাত দিয়ে আক্রান্ত পাতা ঘষা দিলে লালচে মরিচার মত গুড়া হাতে লাগে। এ রোগের লক্ষণ প্রথমে নিচের পাতায়, তারপর সব পাতায় ও কান্ডে দেখা যায়। দেশের উত্তরাঞ্চলে এ রোগ বেশী হয়ে থাকে।
প্রতিকারঃ
১.    রোগ প্রতিরোধী গমের জাত কাঞ্চন, আকবর, অঘ্রাণী, প্রতিভা, সৌরভ ও গৌরবের চাষ করতে হবে।
২.    সুষম হারে সার প্রয়োগ করতে হবে।
৩.    টিল্ট ২৫০ ইসি ছত্রাক নাশক (০.০৪%) ১ মিলি আড়াই লিটার পানিতে মিশিয়ে ১২-১৫ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

গমের পাতার দাগ রোগ দমন
বাইপোলারিস সরোকিনিয়ানা নামক ছত্রাক এ রোগ ঘটায়। গাছ মাটির উপর আসলে প্রথমে নীচের পাতাতে ছোট ছোট বাদামি ডিম্বাকার দাগ পড়ে। পরবর্তীতে দাগ সমূহ আকারে বাড়তে থাকে এবং গমের পাতা ঝলস দেয়। রোগের জীবাণু বীজে কিংবা ফসলের পরিত্যক্ত অংশে বেঁচে থাকে। বাতাসের অধিক আদ্রতা এবং উচ্চ তাপমাত্রা (২৫ ডিগ্রী সে.) এ রোগ বিস্তারের জন্য সহায়ক।
প্রতিকার
১.    রোগমুক্ত জমি হতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
২.    গাছের পরিত্যক্ত অংশ সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
৩.    প্রতি কেজি গম বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম ভিটাভেক্স-২০০ মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।
৪.    টিল্ট-২৫০ ইসি (০.০৪%) এক মিলি প্রতি আড়াই লিটার পানিতে মিশিয়ে ১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

গমের গোড়া পচা রোগ দমন
স্কেলেরোশিয়াম রলফসি নামক ছত্রাক দ্বারা গমের এ রোগ হয়। এই রোগের ফলে মাটির সমতলে গাছের গোড়ায় হলদে দাগ দেখা যায়। পরে তা গাঢ় বাদামি বর্ণ ধারণ করে এবং আক্রান্ত স্থানের চারিদিক ঘিরে ফেলে। পরবর্তীতে পাতা শুকিয়ে গাছ মারা যায়। রোগের জীবাণু মাটিতে কিংবা ফসলের পরিত্যক্ত অংশে দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকে। সাধারণত বৃষ্টির পানি, সেচের পানি দ্বারা এক জমি হতে অন্য জমিতে বিস্তার লাভ করে।
প্রতিকারঃ
১.    রোগ প্রতিরোধী কাঞ্চন, আকবর, অঘ্রাণী, প্রতিভা, সৌরভ ও গৌরব জাতের চাষ করতে হবে।
২.    মাটিতে সব সময় পরিমিত আর্দ্রতা থাকা প্রয়োজন।
৩.    ভিটাভেক্স-২০০ নামক ঔষধ প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।

গমের আলগা ঝুল রোগ দমন
আসটিলেগো ট্রিটিসি নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়। গমের শীষ বের হওয়ার সময় এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। উক্ত ছত্রাকের আক্রমণের ফলে গমের শীষ প্রথম দিকে পাতলা পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে। পরে তা ফেটে যায় এবং দেখতে কালো ঝুলের মত দেখায়। ছত্রাকের বীজকণা সহজেয় বাতাসের মাধ্যমে অন্যান্য গাছে এবং অন্য জমির গম গাছে সংক্রমিত হয়। রোগের জীবাণু বীজের ভ্রুণে জীবিত থাকে। পরবর্তী বছর আক্রান্ত বীজ জমিতে বুনলে বীজের অংকুরোদগমের সময় জীবাণুও সক্রিয় হয়ে উঠে।
প্রতিকার
১.    রোগ প্রতিরোধী কাঞ্চন, আকবর, অঘ্রাণী, প্রতিভা, সৌরভ ও গৌরব জাতের চাষ করতে হবে।
২.    রোগমুক্ত জমি হতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
৩.    ভিটাভেক্স-২০০ ঔষধ প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।

গম বীজের কালো দাগ রোগ দমন
ডেক্সলেরা প্রজাতির ও অলটারনারিয়া প্রজাতির ছত্রাক দ্বারা গমের এ রোগ হয়। এ রোগের ফলে গমের খোসায় বিভিন্ন আকারের বাদামি অথবা কালো দাগ পড়ে। বীজের ভ্রুণে দাগ পড়ে এবং পরবর্তীতে দাগ সম্পূর্ণ বীজে ছড়িয়ে পড়ে। এ রোগের জীবাণু বীজের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়ে থাকে।
 

প্রতিকার
১.    সুস্থ্য বীজ সংগ্রহ করে বপন করতে হবে।
২.    ভিটাভেক্স-২০০ নামক ঔষধ প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।

ফসল সংগ্রহঃ
 চৈত্র মাসের প্রথম থেকে মধ্য-চৈত্র (মার্চের শেষ থেকে এপ্রিলের প্রথম) পর্যন্ত কেটে গম সংগ্রহ করতে হয়।