পুষ্টি মূল্য
পাকা আম ক্যারোটিনে ভরপুর। এছাড়া প্রচুর পরিমানে খনিজ পদার্থ থাকে।
ভেষজ গুণ
আমের শুকনো মুকুল পাতলা পায়খানা, প্রস্রাবের জ্বালা উপশমে ব্যবহার করা যায়। আম লিভার ও যকৃতের জন্য উপকারি।
ব্যবহার
চাটনি, আচার, জুস ও ক্যান্ডি।
উপযুক্ত জমি ও মাটি
উর্বর দোআঁশ উঁচু ও মাঝারি জমি আম চাষের জন্য উপযোগী ।
জাত পরিচিতি
বারি আম-১ (মহানন্দা)
প্রতি বছর নিয়মিত ফল দেয়। বাংলাদেশের সবখানেই এ জাতটির চাষ করা যায়। পাকা ফলের রং আকর্ষণীয় হলদে। ফলের ওজন গড়ে প্রায় ২০০ গ্রাম।
বারি আম-২
প্রতি বছর ফল ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন জাত। ফলের ওজন গড়ে ২৫০ গ্রাম। ফলের খোসা মধ্যম পুরু ও মসৃন। বাংলাদেশের সবখানেই এ জাতটির চাষ করা যায়।
বারি আম-৩ (আম্রপালি)
প্রতি বছর নিয়মিত ফল দেয়। ফলের শাঁস গাঢ় কমলা রঙের। আঁশহীন, মধ্যম রসালো, শাঁস ফলের শতকরা ৭০ ভাগ। গাছের আকৃতি মাঝারি। প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ১৫৫-১৭০ টি।
বারি আম-৪ (হাইব্রিড আম)
এটি একটি উচ্চ ফলনশীল, মিষ্টি স্বাদের নাবী জাত। ফজলী আম শেষ হওয়ার পর এবং আশ্বিনা আমের সাথে এ জাতের আম পাকে। এ জাতের আম কাঁচা অবস্থাতেও খেতে মিষ্টি।
বারি আম-৫
আমটি লম্বা ও ছোট আকারের, প্রতিটি আমের গড় ওজন ১৯০ গ্রাম, ১০ বছরের একটি গাছে ১৪০-১৬০ কেজি আম উৎপাদিত হয়, জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে আমটি সংগ্রহ করা হয়, পাকা অবস্থায় দেখতে হালকা হলুদ রঙের ও শাঁসের রং কমলা বর্ণের ও রসালো এবং মোট খাদ্যাংশ ৭০ ভাগ। আমের মিষ্টিমান (টি এস এস) ১৯-২০ % এবং সংগ্রহকাল ৫-৮ দিন। জাতটি রপ্তানীযোগ্য। হেক্টর প্রতি ফলন ১৫-২০টন।
বারি আম-৬
আমটি লম্বা আকারের, প্রতিটি আমের গড় ওজন ২৮০ গ্রাম, ১২ বছরের একটি গাছে ১৭০ কেজি আম উৎপাদিত হয়, জুন মাসের শেস সপ্তাহ হতে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে আমটি সংগ্রহ করা হয়, পাকা অবস্থায় দেখতে হালকা হলুদ রঙের ্র ও শাঁসের রং হলুদ এবং মোট খাদ্যাংশ ৭২ ভাগ। আমের মিষ্টিমান (টি এস এস) ২১ % এবং সংগ্রহকাল ৫-৯ দিন। এটি সংরক্ষণ গুণ ভালো। হেক্টর প্রতি গড় ফলন ১৬ টন।
বারি আম-৭
আমটি দেখতে গোলাকার, প্রতিটি আমের গড় ওজন ২৯০ গ্রাম, ৮ বছরের একটি গাছে ১৬০ কেজি আম উৎপাদিত হয়, জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে আমটি সংগ্রহ করা হয়, পাকা অবস্থায় দেখতে সিঁদুর লাল হতে হালকা হলুদ রঙের ্র ও শাঁসের রং হলুদ রঙের এবং মোট খাদ্যাংশ ৭৭ ভাগ। আমের মিষ্টিমান (টি এস এস) ১৯ % এবং সংগ্রহকাল ৯-১৩ দিন। বিদেশে রপ্তানীর জন্য যে বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার তার সবগুলোই এই আমে বিদ্যমান।
বারি আম-৮
এটি একটি সুস্বাদু ও উচ্চফলনশীল জাত। গাছ মধ্যম আকৃতির, উচ্চ ফলনশীল, প্রতিবছর ফল দেয় এবং আমের বাণিজ্যিক জাত ল্যাংড়ার সাথে থাকে। ফল লম্বাটে ডিম্বাকৃতির, আকারে মধ্যম, গড় ওজন ২৭০ গ্রাম, লম্বায় ১১.৩ সেমি ও প্রস্থে ৭.০ সেমি, পুরত্বে ৬.০ সেমি, পাকা ফলের রং হলুদাভ সবুজ, চামড়া পাতলা ও শাষের রং কমলা বর্ণের, স্বাদ মিষ্টি (টিএসএস ২১%), শাস হালকা আঁশমুক্ত, চামড়া সহজেই ছাড়ানো যায়, আঁটির ওজন ২৬ গ্রাম, খোসার ওজন ৫০ গ্রাম, ভক্ষণযোগ্য অংশ শতকরা ৭০ ভাগ এবং সংরক্ষণ ক্ষমতা ভাল (৫-৯ দিন), জাতটি পলিএম্ব্রায়োনিক হওয়ায় বীজ থেকে মাতৃগুণাগুণ সম্পন্ন চারা উৎপাদন করা যায়। দেশের সব এলাকায় এমনকি ঝড় প্রবণ উপকূলীয় অঞ্চলেও চাষ উপযোগী। হেক্টর প্রতি গড় ফলন ২০-২৫ টন।
বারি আম-৯ (কাঁচা মিঠা)
প্রতি বছর ফলদানকারী একটি উচ্চ ফলনশীল আগাম জাত। কাঁচা ফলের শাঁস সাদা, আঁশহীন, মধ্যম মিষ্টি। রাজশাহী অঞ্চলে চাষ উপযোগী। সাত বছর বয়স্ক গাছে হেক্টর প্রতি গড় ফলন ১.৩৫ টন।
চারা তৈরি
ক্লেফট গ্রাফটিং পদ্ধতিতে চারা তৈরি করা যায়।
চারা রোপণ
ষড়ভুজ পদ্ধতিতে আম চারা রোপণ করলে ১৫ ভাগ চারা বেশি রোপণ করা যায়। জৈষ্ঠ্য থেকে আষাঢ় (মধ্য মে থেকে মধ্য জুলাই) এবং ভাদ্র-আশ্বিন মাস (মধ্য আগস্ট থেকে মধ্য অক্টোবর) চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। প্রতি গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৮ থেকে ১০ মিটার রাখতে হয়।
সার ব্যবস্থাপনা
প্রতি গর্তে সারের পরিমাণ গোবর ২২ কেজি, ইউরিয়া ১৫০ গ্রাম, টিএসপি সার ৫৫০ গ্রাম, এমওপি সার ৩০০ গ্রাম, জিপসাম সার ৩০০ গ্রাম, জিংক সালফেট সার ৬০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয়। গর্ত ভর্তির ১০-১৫ দিন পর চারার গোড়ার মাটির বলসহ গর্তের মাঝখানে রোপণ করতে হবে।
একটি পূর্ণ বয়স্ক ফলন্ত আম গাছে বছরে ৫০ কেজি জৈব সার, ২ কেজি ইউরিয়া, ১ কেজি টিএসপি, ৫০০ গ্রাম এমওপি, ৫০০ গ্রাম জিপসাম ও ২৫ গ্রাম জিংক সালফেট প্রয়োগ করতে হবে। উল্লেখিত সার ২ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথমবার জৈষ্ঠ্য-আষাঢ় মাসে এবং দ্বিতীয়বার আশ্বিন মাসে প্রয়োগ করতে হবে।
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা: ফলন্ত গাছে মুকুল বের হওয়ার ৩-৪ মাস আগ থেকে সেচ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। তবে মুকুল ফোটার পর ও ফল মটর দানা হলে একবার বেসিন পদ্ধতিতে সেচ দেওয়া দরকার। গাছের গোড়া ও গাছের ডালপালা সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। কলমের গাছের বয়স ৪ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত মুকুল ভেঙে দিতে হবে।
আম গাছের রোগবালাই ব্যবস্থাপনা
আমের এ্যানথ্রাকনোজ রোগ দমন
ভূমিকা: এক ধরণের ছত্রাকের আক্রমনের কারণে এ রোগ হয়।
ক্ষতির নমুনা: গাছের পাতা, কান্ড, মুকুল এর ওপরে ধুসর বাদামি রঙের দাগ পড়ে। এ রোগে আক্রান্ত মুকুল ঝরে যায়, আমের গায়ে কালচে দাগ পড়ে এবং আম পচে যায়।
প্রতিকার: আমের মৌসুম শেষে গাছের মরা ডালপালা কেটে পুড়ে ফেলতে হয়। কাটা অংশে বোঁর্দো মিশ্রণ লাগাতে হয়। গাছে মুকুল আসার পর কিন্তু ফুল ফোটার আগে ডাইথেন এম-৪৫ বা টিল্ট-২৫০ ইসি প্রয়োগ করা দরকার।
আমের ভোমরা পোকা
ভূমিকা: আমের ভোমরা পোকার আক্রমনে ফলনে মারাত্মক ক্ষতি হয়ে থাকে।
ক্ষতির নমুনা: ভোমরা পোকার কীড়া আমের গায়ে ছিদ্র করে ভিতরে ঢুকে শাঁস খায়। সাধারণত কচি আমে ছিদ্র করে এরা ভিতরে ঢুকে এবং ফল বড় হওয়ার সাথে সাথে ছিদ্রটি বন্ধ করে দেয় এ জন্য বাইরে থেকে আমটি ভাল মনে হলেও ভিতরে কীড়া পাওয়া যায়।
প্রতিকার: আম গাছের মরা ও অতিরিক্ত পাতা শাখা এবং পরগাছা কেটে ফেলতে হবে। গাছে ফল আসার ১-২ সপ্তাহ পর অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা দরকার।
আমের শোষক পোকা
এ পোকা অন্য সব পোকার চেয়ে আমের বেশি ক্ষতি করে থাকে। বাংলাদেশের সর্বত্র এবং সবজাতে এ পোকা আক্রমণ করে থাকে। সারা বছর আমগাছে এই পোকাগুলো দেখা যায়।
ক্ষতির ধরন: আম গাছে কচি পাতা বা মুকুল বের হওয়ার সাথে সাথে এগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। এ পোকা নিম্ফ ও পূর্ণবয়স্ক উভয় অবস্থায় আমগাছের সব কচি অংশ থেকে গাছের রস চুষে খেয়ে বেঁচে থাকে। নিম্ফগুলো আমের মুকুল থেকে রস চুষে খায় এতে মুকুল শুকিয়ে বিবর্ণ হয়ে ঝরে পড়ে। একটি হপার পোকা দৈনিক তার দেহের ওজনের ২০ গুণ পরিমাণ রস শোষণ করে খায় এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত আঠালো রস মলদ্বার দিয়ে বের করে দেয়, যা মধুরস বা হানিডিউ নামে পরিচিত। এ মধুরস মুকুলের ফুল ও গাছের পাতায় জমা হতে থাকে যার ওপর এক প্রকার ছত্রাক জন্মায়। এই পোকার আক্রমণে আমের উৎপাদন শতকরা ২০-১০০ ভাগ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। তাছাড়া হপার আক্রান্ত গাছের বৃদ্ধি কমে যায়।
প্রতিকার
ক) আম বাগান সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে বিশেষ করে গাছের ডালপালা যদি খুব ঘন থাকে তবে প্রয়োজনীয় পরিমাণ ছাঁটাই করতে হবে যাতে গাছের মধ্যে প্রচুর আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে।
খ) আমের মুকুল যখন ৮-১০ সেন্টিমিটার লম্বা হয় তখন একবার এবং আম মটরদানার মতো হলে আর একবার প্রতিলিটার পানিতে ১ মিলি হারে সাইপারমেথ্রিন মিশিয়ে সম্পূর্ণ গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।
গ) আমের হপার পোকার কারণে শুটিমোল্ড রোগের আক্রমণ অনেক সময় ঘটে। তাই শুটিমোল্ড দমনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে সালফার জাতীয় ওষুধ ব্যবহার্য কীটনাশকের সাথে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ফল ছিদ্রকারী পোকা
আম ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ ১৯৯৫ সন থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় লক্ষ্য করা যায়। এরপর প্রায় প্রতি বছর এ পোকার আক্রমণ দেখা গেছে। বর্তমানে আমচাষিদের কাছে এ পোকা একটি অন্যতম সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত।
ক্ষতির ধরণ: আম মার্বেল আকারের হলেই এ পোকার আক্রমণ শুরু হয় এবং আম পাকার পূর্ব পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। পূর্ণ বয়স্ক স্ত্রী পোকা আমের নিচের অংশে খোসার ওপর ডিম পাড়ে। কয়েক দিনের মধ্যেই ডিম ফুটে কীড়া বের হয়। কীড়া খুব ছোট বিন্দুর মতো আম ছিদ্র করে আমের ভেতর ঢুকে পড়ে এবং আমের শাঁস খেতে থাকে। পরে আঁটি পর্যন্ত আক্রমণ করে। আক্রান্ত স্থানটি কালো হয়ে যায়। আক্রান্ত স্থানে জীবাণুর আক্রমণের ফলে পচন ধরে যায়। বেশি আক্রান্ত আম ফেটে যায় এবং গাছ থেকে পড়ে যায়।
প্রতিকার
ক) আক্রান্ত আম সংগ্রহ করে ধ্বংস করতে হবে অর্থাৎ মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে এবং গাছের মরা ডালপালা ছেঁটে ফেলতে হবে। ফলে পোকার আক্রমণ কম হবে।
খ) আম বাগান নিয়মিত চাষ দিয়ে আগাছামুক্ত ও পরিষ্কর পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
গ) পোকার আক্রমণ দেখা দেয়া মাত্র ফেনিট্রোথিয়ন বা ফেনথিয়ন প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি হারে স্প্রে করতে হবে। তাছাড়া কার্বারিল ২ গ্রাম/লিটার পানিতে দিয়ে স্প্রে করা যায়।
মাছি পোকা
মাছি পোকা দ্বারা পরিপক্ব ও পাকা আম আক্রান্ত হয়। ফজলি, ল্যাংড়া, খিরসাপাতসহ বিভিন্ন জাতের পরিপক্ব ও পাকা আম গাছে থাকা অবস্থায় এ পোকা আক্রমণ করে।
ক্ষতির ধরন
স্ত্রী পোকা ডিম পাড়ার অঙ্গের সাহায্যে গাছে থাকা অবস্থায় পরিপক্ব ও পাকা আমের গা চিরে ডিম পাড়ে অর্থাৎ খোসার নিচে ডিম পাড়ে। আক্রান্ত স্থান থেকে অনেক সময় রস বের হয়। বাইরে থেকে দেখে কোনটি আক্রান্ত আম তা ঝুঝা যায় না। আক্রান্ত পাকা আম কাটলে ভেতের সাদা রঙের কীড়া দেখা যায়। বেশি আক্রান্ত আম অনেক সময় পচে যায়। সাধারণত এ পোকা আমের ওপর এবং নিচ উভয় অংশে আক্রমণ করে।
প্রতিকার
ক) আম গাছে পাকার আগেই পরিপক্ব অবস্থায় পেড়ে আনা
খ) আক্রান্ত আম সংগ্রহ করে মাটির নিচে গভীর গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হবে
গ) প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমের রসের সাথে ৫ গ্রাম সেভিন মিশিয়ে বিষটোপ বানিয়ে এ বিষটোপ বাগানে রেখে মাছিপোকা দমন করা যেতে পারে।
ঘ) আম পরিপক্ব ও পাকার মৌসুমে আমবাগানে ব্লিচিং পাউডার প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম হারে স্প্রে করতে হবে
ঙ) আম পরিপক্ব ও পাকার মৌসুমে প্রতিটি আম কাগজ (ব্রাউন পেপার) দ্বারা মুড়িয়ে দিলে আমকে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করা যাবে।
চ) মিথাইল ইউজেনল ফেরোমন ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে প্রচুর পুরুষ পোকা মারা যাবে এবং বাগানে মাছি পোকার আক্রমণ কমে যাবে।
কান্ডের মাজরা পোকা
বাংলাদেশের সর্বত্রই কম বেশি এ পোকার আক্রমণ দেখা যায় এবং খুব কমসংখ্যক গাছে আক্রমণ দেখা যায়। তবে অনেক সময় সিরিয়াস পেষ্ট হিসাবেও দেখা যায়।
ক্ষতির ধরন: এ পোকা আমগাছের কান্ড ও শাখাকে আক্রমণ করে। আক্রমণ স্থান দিয়ে পোকার মল নিগৃত হয়। ছোট গাছ আক্রান্ত হলে গাছ মারা যেতে পারে। আক্রান্ত শাখাগুলো সহজেই ভেঙে যায়।
প্রতিকার
ক) গাছের কান্ড বা শাখায় কোনো ছিদ্র দেখা গেলে ঐ ছিদ্র পথে সুচালো লোহার শিক বা সাইকেলের স্পোক ঢুকিয়ে পোকাটির কীড়াকে খুঁচিয়ে মেরে ফেলতে হবে।
খ) ছিদ্রটি ভালোভাবে পরিষ্কার করে তার মধ্যে কেরোসিন বা পেট্রোল ভিজানো তুলা ঢুকিয়ে ছিদ্রের মুখ কাদা দিয়ে ভালোভাবে বন্ধ করে দিতে হবে।
পাতা কাটা উইভিল
নার্সারিতে চারা গাছের কচি পাতায় এ পোকার আক্রমণ বেশি দেখা যায়। তাছাড়া অনেক সময় বড় আমগাছের কচি পাতা কাটতেও দেখা যায়। এ পোকা সাধারণত আম ছাড়া অন্য কোনো গাছের ক্ষতি করে না।
ক্ষতির ধরন: এ পোকা আমগাছের শুধু কচি পাতা কেটে ক্ষতি করে। কচি পাতার নিচের পিঠে মধ্য শিরার উভয় পাশে স্ত্রী পোকা ডিম পাড়ে এবং পরে পাতাটির বোঁটার কাছাকাছি কেটে দেয়। ভালো করে দেখলে কেঁচি দ্বারা কেউ কেটেছে বলে মনে হয়। এ পোকার আক্রমণে গাছের নতুন পাতা ধ্বংস হয় বেশি আক্রমণে একটি ছোট গাছ পাতাশূন্য হতে পারে।
প্রতিকার
ক) নতুন কাটা পাতা মাটি থেকে সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
খ) গাছে কচি পাতা বের হওয়ার সংগে সংগে ফেনিট্রোথিয়ন বা ফেনথিয়ন ২ মিলি/লিটার পানিতে স্প্রে করলে পোকার আক্রমণ রোধ করা যায়। তাছাড়া কার্বারিল জাতীয় কীটনাশক ২ গ্রাম/লিটার পানিতে স্প্রে করলেও পোকার আক্রমণ রোধ করা যায়।
পাতার গল মাছি
ক্ষতির ধরন
কয়েক প্রকারে গল সৃষ্টিকারী পোকা আমগাছের কচি পাতায় আক্রমণ করে তাতে বিভিন্ন আকারের গল রোগের সৃষ্টি করে। পাতার ওপর কিংবা নিচের পৃষ্ঠে কিংবা উভয় পৃষ্ঠে গল দেখা যায়। গলগুলো বিভিন্ন রঙের যেমন- ধূসর, বাদামি, সবুজ, লাল ইত্যাদি। স্ত্রী পোকা আমের কচি পাতার নিচের দিকে ছিদ্র করে ডিম পাড়ে। ৩-৪ দিনের মধ্যে ডিম ফুটে ম্যাগোট বা বাচ্চা পোকা বের হয়। পরে পাতার কোষ এবং টিস্যুগুলোতে প্রবেশ করে রস খাওয়ার কারণে পাতায় গলের সৃষ্টি হয়। পাতায় গলের পরিমাণ বেশি হলে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটে। অনেক সময় গাছের পাতা শুকিয়ে মারা যেতে পারে।
প্রতিকার
ক) আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
খ) ঘনভাবে রোপণকৃত আম বাগানে ছায়া থাকে বিধায় আমগাছের পাতায় গলে আক্রমণটা বেশি হয়। এ জন্য আম পাড়ার পরে কিছু ডালপালা ছাঁটাই করা ভালো।
গ) ডাইমিথয়েট ২ মিলি/লিটার পানিতে দিয়ে স্প্রে করলে আমের পাতায় গল মাছি দমন করা যায়।
এপসিলা পোকা
অ্যাপসিলা আমের একটি মারাত্মক ক্ষতিকর পোকা। বর্তমানে এ পোকার আক্রমণ তেমন একটা দেখা যায় না। তবে অ্যাপসিলা পোকার আক্রমণ হঠাৎ করে বিক্ষিপ্তভাবে কোথাও কোথাও অল্প করে হলেও দেখা যায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় এটি তাবিজ পোকা নামে অনেকের কাছে পরিচিত।
ক্ষতির ধরন: কচি পাতায় পাড়া ডিমের ভেতর ভ্রূণাবস্থায় থাকা প্রথম ধাপের নিম্ফ পাতার ভেতর থেকে রস চুষে খায় এবং এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত করে যার কারণে পত্রকক্ষে সুচালো মুখবিশিষ্ট সবুজ রঙের মোচাকৃতি গলের সৃষ্টি হয়। এই গল সৃষ্টি হওয়ার কারণে প্রকৃতপক্ষে আর কোনো নতুন পাতা বা মুকুল বের হতে পারে না। গাছে বেশি পরিমাণে গল সৃষ্টি হলে গলযুক্ত ডগা শুকিয়ে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি কমে যায় ও সেই সাথে আমের ফলন কমে যায়।
প্রতিকার
ক) অক্টোবর-নভেম্বর মাসে সব আমগাছ থেকে নিম্ফসহ গল (তাবিজ) সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে
খ) মার্চ এপ্রিল মাসে আমগাছের পাতায় অ্যাপসিলা পোকার ডিম পাড়ার ক্ষতচিহ্ন দেখতে পাওয়া গেলে প্রতি লিটার পানির সাথে ডাইমিথয়েট ২ মিলিলিটার হারে মিশিয়ে পাতা ও ডালপালা ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ঝুল রোগ
লক্ষণ: ঝুল রোগের আক্রমণে পাতার উপর কালো আবরণ পড়ে। এই কালো আবরণ হচ্ছে ছত্রাকের দেহ ও বীজ কণার সমষ্টি। আমের শরীরেও কালো আবরণ দেখা দেয়।
বিস্তার : রোগের বীজকণা বা কনিডিয়া বাতাসের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে থাকে। হপার বা শোষক পোকা আমের মুকুলের মারাত্মক শত্রু। এ পোকা মুকুল থেকে অতিরিক্ত রস শোষণ করে এবং মধু জাতীয় এক প্রকার আঠাল পদার্থ (যা হানিডিউ নামে পরিচিত) নিঃসরণ করে। উক্ত হানিডিউ মুকুল ও পাতার উপর পতিত হয় তার উপর ছত্রাকের বীজকণা জন্মায় এবং কালো আবরণের সৃষ্টি করে। হপার ছাড়াও ছাতরা পোকা (মিলিবাগ)ও স্কেল পোকা হানিডিউ নিঃসরণ করে এবং ঝুল রোগের আক্রমণে সহায়তা করে। হানিডিউ ছাড়া এ রোগ জন্মাতে পারে না।
প্রতিকার :
ক. হানিডিউ নিঃসরণকারী হপার, মিলিবাগ বা স্কেল পোকা কীটনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে দমনে রাখতে পারলে ঝুল রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
খ. আক্রান্ত গাছে সালফার গ্রুপের ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ভালভাবে স্প্রে করে এ রোগ দমন করা যায়।
দাদ রোগ
লক্ষণ: আম মটর দানার মত হলেই এ রোগের আক্রমণ শুরু হতে পারে। আক্রান্ত আমের শরীর বাদামী রং ধারণ করে, খোসা ফেটে যায় ও খসখসে হয়ে উঠে। আক্রান্ত আমের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং কয়েক দিনের মধ্যে তা ঝড়ে পড়ে। রোগের আক্রমণে বাড়ন্ত আমের শরীরে বাদামী দাগের দৃষ্টি হয়। অনুকূল আবহাওয়ায় দাগগুলো বাড়তে থাকে এবং সম্পূর্ণ আমের শরীর ঢেকে ফেলে। আক্রান্ত স্থানে চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। আমের শরীর খসখসে অমসৃণ হওয়ার কারণে আমের বাজার দর কমে যায়।
প্রতিকার
রোগের আক্রমণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে রোভরাল (প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম) অথবা ব্যাভিস্টিন প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে ৭-১০ দিন পর পর ৩/৪ বার স্প্রে করে গাছ রোগমুক্ত রাখা যায়।
আম গাছে পাউডারী মিলডিউ রোগের আক্রমণ হলে ফুলে সাদা পাউডারের মতো গুড়া দেখা যায় এবংআক্রান্ত ফুল (পুষ্পমঞ্জুরী) কালো রঙের হয়ে যায়। মুকুল থেকে ফুল ঝড়ে পড়ে। এর প্রতিকার হলো:
খুব কুয়াশা থাকলেই সালফার জাতীয় যেকোন ছত্রাকনাশক (যেমন, থিওভিট/কুমুলাস ইত্যাদি) ৪০ গ্রাম ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ৩ বার স্প্রে করা। আক্রমণ বেশি হলে রিডোমিল গোল্ড এমজেড ৬৮ অথবা এমকোমিল ৭২ ডব্লিউপি ছত্রাকনাশক ৪০ গ্রাম ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ৩ বার স্প্রে করতে হবে।
আম গাছের গামোসিস বা আঠা ঝরা এবং হঠাৎ মড়ক রোগ ও তার প্রতিকারে করনীয়
বর্তমানে আম গাছের যে সমস্ত রোগ দেখা যায় তাদের মধ্যে আমের আঠা ঝরা এবং হঠাৎ মড়ক অন্যতম । বর্তমানে সব জেলাতেই এ রোগটির আক্রমন পরিলক্ষিত হচ্ছে । বিজ্ঞানী এবং আম চাষীদের মতে, আম গাছের গামোসিস বা আঠা ঝরা এবং হঠাৎ মড়ক সবচেয়ে মারাত্মক । কারণ এ রোগটি ছোট বড় সব বয়সী গাছেই আক্রমন করে এবং আক্রান্ত গাছ খুব অল্প সময়ের মধ্যে মারা যায় । গবেষনায় দেখা গেছে যে গামোসিস বা আঠা ঝরা এবং হঠাৎ মড়ক রোগে আক্রান্ত বড় একটি গাছ (৫০ বছরের উর্ধে বয়স) ৩-৬ মাসের মধ্যেই মারা যায়।
রোগের কারণ: এক প্রকার ছত্রাকের কারনে এ রোগটি হয়ে থাকে ।
রোগের লক্ষণ
১. প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত গাছের কান্ড বা ধড় বা শাখাপ্রশাখার কিছু কিছু জায়গা থেকে ক্ষুদ্র বিন্দুর মত হালকা বাদামি থেকে গাঢ় বাদামি বা কালো রঙের আঠা বা রস বের হতে থাকে ।
২. আক্রমন বাড়ার সাথে সাথে কান্ড এবং শাখা-প্রশাখার অনেক স্থানথেকে আঠা বা রস বের হতে থাকে । আক্রান্ত ডগাটির কোষ বিবর্ণ হয়ে উঠে। আক্রান্ত গাছের ডগা এবং শাখাপ্রশাখা লম্বালম্বিভাবে কাটলে বাদামী লম্বা দাগের নজরে পড়ে । বেশী আক্রান্ত ডগা বা ডালটি অল্প দিনের মধ্যেই মারা যায়। এ অবস্থায় মরা ডালে পাতাগুলো ডগায় আঁটকে থাকে ।
৩. কোন কোন ক্ষেত্রে পাতাগুলো কিছুদিন পর ঝরে পড়ে । কিছুদিন পর দেখা যায় আরেকটি ডাল একই ভাবে মারা যাচ্ছে। এভাবে এক পর্যায়ে সম্পূর্ণ গাছ মারা যেতে পারে।
৪. এ রোগটির উল্লেখযোগ্য একটা বৈশিষ্ট হচ্ছে যে সব গুলো ডাল একসাথে মারা যাবে না। একটা একটা করে পর্যাযক্রমিক ভাবে আক্রান্ত হবে এবং মারা যাবে । সবশেষে সম্পূর্ণ গাছটিই মারা যাবে
প্রতিকার
১. আঠা বা রস বের হওয়ার স্থানের ছাল/বাকল কিছু সুস্থ অংশসহ তুলে ফেলে দিয়ে উক্ত স্থানে বোর্দো পেষ্টের ( ১০০ গ্রাম তুঁতে ও ১০০ গ্রাম চুন ১ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে পেষ্ট তৈরী করা যায়) প্রলেপ দিতে হবে।
২. গাছে আক্রান্ত বা মরা ডাল পালা থাকলে তা কিছু সুস্থ অংশসহ কোটে ফেলতে হবে । কাটা ডাল পালা গাছের নীচে জমা না রেখে যত শীঘ্র সম্ভব পুড়ে ফেলতে হবে। কাটা অংশে বোর্দো পেষ্টের প্রলেপ দিতে হবে।
৩. যে সকল গাছে পেষ্টের প্রলেপ দেওয়া সম্ভব না সেক্ষেত্রে বোর্দোমিক্সার অথবা কপার অক্সিক্লোরাইড জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন- কুপ্রাভিট প্রতি লিটার পানিতে ৭ গ্রাম হারে মিশিয়ে সেপ্র্র করতে হবে
৪. গাছে নতুন পাতা বের হলে মেনকোজেব গ্রূপের ছত্রাকনাশক যেমন-ডায়থেন এম ৪৫/ পেনকোজেব/ইন্ডোফিল/কাফা ইত্যাদি প্রতি লিটার পানিতে ২-৩ গ্রাম হারে অথবা কার্বেন্ডাজিম গ্রূপের ছত্রাকনাশক যেমন- ব্যভিষ্টিন প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে ৭-১০ দিনের ব্যবধানে ৩/৪ বার সেপ্র্র করতে হবে।
৫. আক্রান্ত গাছে পর্যাপ্ত পরিমান গোবর /আবর্জনা পঁচা/ কম্পোসট এবং রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে এবং নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে ।
আমগাছের ‘অন-ইয়ার’ও ‘অফ-ইয়ার’সমস্যা ও প্রতিকার
আমগাছের বহু সমস্যার মধ্যে একটি বড় সমস্যা হলো প্রতি বছর ফুল ও ফল না আসা। দেখা গেছে, একেবারেই ফুল হয় না বা হলেও কোনো কোনো বছর খুব কম হয়। যখন অনেক গাছে এক বছর খুব ফুল হয় আর পরের বছর একেবারেই হয় না বা খুব সামান্য হয় এবং তৃতীয় বছর আবার খুব বেশি ফুল আর চতুর্থ বছর কিছুই না বা কম অর্থাৎ এরা একটু ছন্দের মতো চলে। এই রকম হলে বলা হয় ‘অলটারনেট বা বায়িনিয়াল বেয়ারিং’। আবার যেসব গাছে হয়তো এক বছর খুব বেশি ফুল হলো, তারপর দু-তিন বছর হলো না বা কম হলো, কিংবা পরপর দু’তিন বছর বেশ ফুল হলো তারপর এক বছর বা কয়েক বছর বন্ধ থাকে অর্থাৎ এরা একটু এলোপাতাড়ি ধরনের। এদের বলা হয় ‘ইরেগুলার বেয়ারার’। এই দুটি সমস্যা অনেক আমগাছে দেখা যায়। যে বছর খুব বেশি ফুল হয়, সেই বছরটিকে উদ্যান বিজ্ঞানে বলা হয় ‘অন ইয়ার’, আর বিনা ফলন বা কম ফলনের বছরকে বলা হয় ‘অফ-ইয়ার’।
সম্ভাব্য কারণ
ক. জাতের বৈশিষ্ট্য
আমের যে জাতগুলো কেবল শাখার অগ্রভাগে ফুল ধারণ করে জাতগুলোর পর্যায় ক্রমিক অর্থাৎ এক বছর অন্তর ফল উৎপাদন হয়। এই সমস্যা সব জাতের আমের মধ্যে দেখা যায় না কিন্তু কিছু ভালো আমের জাতের মধ্যে যেমন ল্যাংড়া, খিরসাপাত, গোপালভোগ ইত্যাদিতে সমস্যাটি ভালোভাবে দেখা যায়। আর কিছু কিছু আমের জাত আছে যাদের ‘অফ ইয়ারে’ ফুল ও ফল হয়, তবে অপেক্ষাকৃত কম যেমন-ফজলি। আবার যে জাতগুলো শাখার অগ্রভাবে প্রথম বছর ও পরের বছর শাখার কক্ষে পুষ্পমুকুল উৎপন্ন করতে পারে সে জাতগুলো নিয়মিতভাবে কম/বেশি ফল উৎপাদন করতে পারে, যেমন- বারি আম-১, বারি আম-২, বারি আম-৩, বারি আম-৪ ইত্যাদি।
খ. গাছের বয়স
যেসব জাতের মধ্যে সমস্যাটি দেখা যায় যেমন- ল্যাংড়া। কিন্তু যখন ওই ল্যাংড়া গাছের বয়স কম তখন সমস্যাটি থাকে না অর্থাৎ প্রথম দিকে প্রতি বারেই ফুল হয় কিন্তু সাধারণত ১৫-২০ বছর বয়সের পর তারা এই গুণটি হারিয়ে ফেলে।
গ. গাছের ডালের বয়স
মুকুল ধরার জন্য ডালের বয়স কমপক্ষে ৪-৫ মাস হওয়া দরকার।তবে যেসব ডালের বয়স ৮-১০ মাসের হয় সেসব ডালে বেশি মুকুল ধরে।
ঘ. পাতাওয়ালা মুকুল
আমের মুকুল বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ডালের ডগায় আসে এবং ওপর দিকে আস্তে আস্তে সুচালো হয়ে যায়, যা দেখতে পিরামিডের মতো। উপ-শাখাগুলো ফুলে ভরা থাকে, তাতে পাতা থাকে না। কিন্তু কিছু কিছু জাতের গাছ আছে,যাদের মুকুলে শুধু ফুলই থাকে না, সেই সঙ্গে পাতাও থাকে। বারি আম-৩, বারি আম-৪ ইত্যাদিতে বেশি পাতাওয়ালা মুকুল দেখা যায়। ফজলি গাছেও কিছুসংখ্যক পাতাওয়ালা মুকুল হয়, তাই এই জাতগুলো প্রায় প্রতি বছর মোটামুটি ফল আসে। অন্যান্য জাতেও মাঝে মধ্যে কিছু কিছু পাতাওয়ালা মুকুল দেখা যায়। পাতাওয়ালা প্যানিকলকে মিঙড প্যানিকল বলে।
ঙ. ডালে শর্করা ও নাইট্রোজেনের অনুপাত
আমের একটি ডালে মুকুল আসতে হলে, ফুল আসার আগে ডালটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে শর্করা ও নাইট্রোজেন দুই-ই থাকতে হবে আর শুধু তাই নয়, শর্করার ভাগ নাইট্রোজেনের ভাগের চেয়ে যথেষ্ট বেশি থাকতে হবে তবেই মুকুল আসবে। আর যদি দুটির ভাগ সমান হয় বা বিশেষ করে ডালটির নাইট্রোজেনের মাত্রা শর্করার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে ঐ ডালটির ডগায়, বসন্তকালে মুকুল আসার বদলে পাতা এসে যাবে।
চ. উদ্ভিদ হরমোনের বৈষম্য
আম গাছের এই সমস্যাটির জন্য উদ্ভিদ হরমোন ‘অক্সিন’, ‘জিবেরেলিন’ ও বিশেষ করে ‘গ্রোথ ইনহিবিটর’ জাতীয় হরমোনগুলো দায়ী বলে মনে করা হয়।
প্রতিকার
গাছের বয়স অনুযায়ী সারের পরিমা
উত্তর সমূহ