তাল একটি অতি প্রাচীন অপ্রচতি ফল। বাংলাদেশের সব এলাকায় কমবেশী তাল উৎপাদন হলেও ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, রাজশাহী ও খুলনা এলাকায় সবচেয়ে বেশী উৎপাদন হয়। তালের জন্মস্থান মধ্য আফ্রিকা বলে ধারণা হলেও অনেকে বলেন এটি আমাদের উপ-মহাদেশীয় বৃক্ষ।
পুষ্টিমান ও ওষুধি গুণঃ পাকা তালের খাদো্যপযোগী প্রতি ১০০ গ্রামে জলীয় অংশ ৭৭.২ গ্রাম, খনিজ ০.৭ গ্রাম, আঁশ ০.৫ গ্রাম, আমিষ ০.৭ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম শর্করা ২০.৭ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৯ মিলিগ্রাম ও খাদ্য শাক্তি ৮৭ কিলোক্যালরী রয়েছে। তালের রস শ্লেষ্মানাশক।এটি মূত্র কর , প্রদাহ ও কোষ্ঠাঠিন্য নিবারণ করে। রস থেকে তৈরি তালমিসরি সর্দি কাশির মহৌষধ, যকৃতের দোষ নিবারক ও পিত্তনাশক।
তালের ব্যবহারঃ তালের রস বিভিন্ন প্রকার পিঠা , মিছরি ও গুড় তৈরীতে ব্যবহার হয়। সদ্য আহরিত তালের রস সুস্বাদু পানীয়। তালগাছের পাতা ও আঁশ পাখা ও অন্যান্য কুটির শিল্পজাত দ্রব্য তৈরীর জন্য ব্যবহার করা যায়। বয়স্ক তালগাছ থেকে উৎকৃষ্ট মানের কাঠ পাওয়া যায় যা গৃহ নির্মান ও সৌখিন দ্রব্য প্রস্তত করা জন্য ব্যবহার করা হয়। পাকা তালের রস কনফেকশনারীতে শুকনো খাবার প্রস্তত করনের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
জাতঃ তালের কোন অনুমোদিত জাত নেই। তবে এদেশে বিভিন্ন আকার ও রংয়ের তাল দেখা যায়। আবার কোন কোন তাল গাছের বারমাসই কমবেশী তাল ধরে থাকে।
উৎপাদন পদ্ধতিঃ প্রায় সব ধরনের মাটিতেই তাল ফসলের আবাদ করা যায়। তবে উঁচুজমিতে এবং ভারী মাটি ইহা চাষের জন্য বেশী উপযোগী। এদেশে বাগান আকারে কোন তাল ফসলের আবাদ নেই। বাগান আকারে চাষ করতে হলে নির্বাচিত জমি ভাল করে চাষ ও মই দিয়ে জমি সমতল এবং আগাছা মুক্ত করে নিতে হবে।
আগষ্ট মাস থেকে তাল পাকতে শুরু করে এবং অক্টোবর মাস পর্যন্ত পাকা তাল পাওয়া যায়। তাল বীজ সংগ্রহ করে নির্বাচন করা উত্তম। তবে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নির্বাচিত মাতৃবৃক্ষ হতে তালের বীজ সংগ্রহ করা উচিত। ভাদ্র হতে কার্তিক মাস বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। সারি থেকে সারি ৭ মিটার এবং চারা থেকে চারা ৭ মিটার। গর্তের আকার হবে ১ মিটার চওড়া ও ১ মিটার গভীর। গর্ত করার ১০-১৫ দিন পর প্রতি গর্তে ১৫-২০ কেজি জৈব সার, ২৫০ গ্রাম টি এস পি এবং ২০০ গ্রাম এমপি মাটির সাথে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করতে হবে। বীজের মাধ্যমে তালের বংশ বিস্তার হয়ে থাকে। দুই ভাবে তাল গাছ লাগানো যায়। একটি পদ্বতি হলো সরাসরি বীজ বপন করে অথবা বীজতলায় চারা উৎপাদন করে চারা রোপণের মাধ্যমে এর আবাদ করা যায়। মৌসুমী বৃষ্টিপাত আরম্ভ হওয়ার পরপরই পলিব্যাগে উত্তোলিত ৩০-৩৫ সে. মি. লম্বা দু’পাতা বিশিষ্ট চারা মাঠে রোপন করা উচিত। তবে মাটিতে প্রচুর পরিমাণে আর্দ্রতা থাকলে অথবা পানি সেচের ব্যবস্থা থাকলে চারা এপ্রিল-মে মাস পর্যন্ত লাগানো যেতে পারে।সমতল ভূমিতে অন্যান্য বৃক্ষ প্রজাতির পলিব্যাগের চারার মতোই এ চারা লাগাতে হবে। চারা লাগানোর নির্দিষ্ট স্থানে পলিব্যাগের আকৃতি অনুসারে অগার দিয়ে গর্ত করে পলিথিন ছিড়ে পলিব্যাগের মাটিসহ চারা গর্তে বসাতে হবে। গুড়ো মাটি দিয়ে গর্তের ফাঁক ভরাটসহ ভালভাবে চারার গোড়ার মাটি চেপে দিতে হবে। চারাগুলো আগাছমুক্ত রাখা ও গবাদি পশুর উপদ্রব থেবে রক্ষার ব্যবস্থা দিতে হবে। চারা রোপণের পর অন্তত প্রথম তিন বছর রোগ-বালাই ও কীট-পতঙ্গের আক্রমণের হাত হতে চারা রক্ষা করা আবশ্যাক।
পরিচর্যাঃ প্রতি বছরই বর্ষার আগে ও পরে ১০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ১০০ গ্রাম পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে। গাছের বয়স বাড়ার সাথে প্রতি বছর সারের মাত্রা ১০% হারে বাড়িয়ে দিতে হবে। পূর্ণবয়স্ক গাছে প্রতিবছর ১৫-২০ কেজি গোবর,ইউরিয়া ১ কেজি, টি এসপি ৫০০ গ্রাম, এমপি ৫০০ গ্রাম সার প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের পর পরই পানি সেচ দিতে হবে। সার প্রয়োগ ছাড়াও আগাছা পরিস্কার , সেচ ও নিস্কাশনের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। নিয়মিত যত্ন ও পরিচর্য্যা নিশ্চিত করা হলে ১০- ১২ বছরের মধ্যেই তাল খাওয়া যায়। তাল গাছে কোন পোকামাকড়- ও রোগবালাই দেখা যায় না ।
ফল সংগ্রহঃ মধ্য পৌষ থেকে মধ্য চৈত্র (জানুয়ারি থেকে মার্চ) মাসে ফুল আসে এবং শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে ফল পাকতে শুরু করে। প্রতি গাছে প্রায় ১৫০-২৫০ টি ফল ধরে।
উত্তর সমূহ