পেঁপে গাছের গুটি কলম

পেঁপে গাছের গুটি কলম

পেঁপে (carica papaya) বাংলাদেশে জনপ্রিয় ফল, সবজি হিসেবেও  এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। সাধারণত পেঁপের বংশবিস্তার বীজের মাধ্যমে করা হয় কিন্তু বীজের মাধ্যমে মাতৃগুণাগুণ সমৃদ্ধ চারা পাওয়া যায় না এবং হাইব্রীড পেঁপের বীজ হতে গাছ উৎপাদন সম্ভব নয় ফলে পরীক্ষামূলকভাবে সম্পূর্ণ মাতৃগাছের গুণাগুণ সমৃদ্ধ চারা পাওয়ার লক্ষ্যে হর্টিকালচার সেন্টার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, হাটহাজারী, চট্টগ্রামে পেঁপে গাছে গুটি কলম করা হয়। প্রচলিত গুটি কলম হতে একটু ভিন্নভাবে কলমটি করা হয় এবং কলমটি সফল হয়েছে।

 

উপকরণসমূহঃ

1.       নারিকেলের ছোবড় (রুটিং মিডিয়া)

2.      প্লাস্টিকের প্যাকেট

3.      প্লাস্টিক সূতা

4.       কাঁঠিঁ / বাশেঁর অংশ

5.      পেঁপে গাছের অংশ

 

 পেঁপে গাছে গুটি কলম করার ধাপসমুহঃ

 

১. প্রথমে মাতৃগাছ নির্বাচন করতে হবে। (রোগমুক্ত, সুমিষ্ট এবং উচ্চ ফলনশীল)

2. নির্বাচিত মাতৃগাছে অবশ্যই পার্শ্ব শাখা তৈরি করে নিতে হবে ( গাছটির প্রধান শাখাকে কেটে দিলে অনেকগুলো প্বার্শ শাখা উৎপন্ন হবে)।

3. নির্বাচিত শাখার ঠিক মাঝামাঝি স্থান নির্ধারণ করা এবং নিচ হতে উপরের দিক বরাবর 45 ডিগ্রী বাঁকা করে প্বার্শ শাখার কান্ডের 1/3   

    অংশ ধারালো চাকু ‍দিয়ে কেটে ফেলা।

4. চাকু দিয় কেটে ফেলা অংশকে কাঠি/ বাঁশ দিয়ে পৃথক করে রাখতে হবে যেন কাঁটা অংশ গুলো একসাথে লেগে না যায়।

5. কাটা অংশটির চারদিকে খুব সাবধানে রুটিং মিডিয়াকে স্থাপন করতে হবে।

6. রুটিং মিডিয়াটিতে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন শুকিয়ে না যায় এজন্য মাঝে মাঝে পরিমানমতো ছত্রাক নাশক মিশ্রিত পানি প্রয়োগ করতে   

     হবে।

7. এভাবে 30 দিনের মধ্যে মিডিয়াতে শিকড়ের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাবে।

8. শিকড়ের রং গাঢ় খয়েরি হলে ধারালো ছুরি দিয়ে কাংখিত প্বার্শ শাখাটিকে কেটে ফেলুন এবং পূর্বের নির্ধারিত (উঁচু ও রৌদ্রময় জায়গা)

   গর্তটিকে মাটি শোধনপূর্বক রোপন করতে হবে এ সময় মনে রাখতে হবে যেন শাখাটিতে বেশি পাতা, ফুল বা ফল না থাকে, থাকলে

   সেগুলো অপসারণ করে ফেলতে হবে।

9. সদ্য রোপনকৃত গাছটিতে খুঁটি দেওয়া যাতে অতিরিক্ত বাতাস, ঝড় এবং বৃষ্টির পানি জমে কোন ক্ষতি না করতে পারে।

10. সময়মতো আগাছা পরিষ্কার, মালচিং, সার প্রদান ও পানি নিষ্কামনের ব্যবস্থা করতে হবে (পেঁপে গাছের জন্য খুবই গুরুত্বপূ্র্ণ।

11. পরবর্তীতে মাত্র 40 ‍দিনের মধ্যে ফুল আসা শুরু করবে এবং কাঙ্খিত ফল সংগ্রহ করা যাবে।

12. মাতৃগাছ হতে 2য় ও 3য় কলমটি সফলভাবে আলাদা করা হয়েছে।

 

কেন পেঁপে গাছে গুটি কলম?

01.   শতভাগ মাতৃ গুনাগুণ সম্পন্ন গাছ পাওয়া সম্ভব শুধু অঙ্গজ বংশবিস্তার পদ্ধতির মাধ্যমে।

02.   হাইব্রিড পেঁপে গাছের বীজ হতে গাছ উৎপাদন করা যায় না আর হলেও সেটিতে ফলন হয় না।

03.  স্বল্প সময়ের মধ্যে ফলন পাওয়া সম্ভব।

04.   শতভাগ স্ত্রী গাছ পাওয়অ যায়।

05.   রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি।

06.  চারার কান্ড পঁচা রোগ হতে রক্ষা পাওয়া সম্ভব, যা পেঁপে গাছের চারা তৈরি করতে অন্যতম সমস্যা।

07.   ফলন কম দেওয়া গাছটিকে সম্পূর্ণ কেটে না ফেলে আগাটি কেটে ফেলে প্বার্শ শাখা উৎপাদন করে সেগুলোকে চারা বানানো সম্ভব।

08.   ভাইরাস মুক্ত চারা উৎপাদন সম্ভব।

09.   হাইব্রিড বীজের আমাদানী অনেকাংশে কমে যাবে।

10.   কৃষক অনেক সহজেই কলম তৈরী করতে পারবে।