খনা

====

-

খনার বচন শোনেননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুস্কিল, কিন্তু খনার বৃত্তান্ত জানেন এমন লোক খুবই কম। 

-

কে ছিলেন এই খনা? 

-

কিভাবে শতাব্দীর পর শতাব্দী একজন মহিলার মুখ থেকে উচ্চারিত বাণী শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারতবর্ষের একটা বিরাট অংশে ছড়িয়ে পড়লো আর যুগ যুগ ধরে তা মানুষের স্মৃতিতে জেগে রইলো? খনার বচনের প্রাদুর্ভাব আসাম থেকে কেরালা পর্যন্ত বিস্তৃত। হোরাশাস্ত্র সম্পর্কিত খনার বচনগুলোতে এর প্রমাণ মিলে। আবহাওয়া সম্পর্কিত খনার বচনগুলো বাঙলা, বিহার এবং উড়িষ্যাতে প্রায় একই রকম। বিহারে কিছু বচন আঞ্চলিক ভাষায় রচিত হলেও মূলতঃ এগুলো খনার বচনেরই অনুবাদ মাত্র। এইগুলো নিয়ে বিহারে একাধিক সংকলনও প্রকাশিত হয়েছে।

মোটকথা ভারতীয় উপমহাদেশে যে ভাষায়ই খনার বচন প্রচলিত হয়েছে তারাই খনাকে নিজেদের লোক বলে দাবি করেছেন। কিংবদন্তী অনুসারে খনা মিহিরের স্ত্রী। এই দাবির স্বপক্ষে প্রমাণ খনার বচনেই আছে- খনা তার বচনে নিজেকে মিহিরের স্ত্রী এবং বরাহকে শ্বশুর বলে সম্বোধন করেছেন। খনার স্বামী মিহিরও ছিলেন বিখ্যাত জ্যোতিষী, শ্বশুর বিক্রমাদিত্যের রাজ দরবারের নবরতেœর অন্যতম সদস্য। খনার ভবিষ্যৎবাণীর কারণে বরাহের খ্যাতি ম্লান হতে থাকে, এর ফলশ্রুতিতে খনাকে হত্যা অথবা জিহ্বা কর্তন করা হয়। অবশ্য কোনো কোনো পণ্ডিত এ রকমও বলেছেন যে, খনাকে তার ভবিষ্যৎ বক্তৃতাবলীর জন্য নয় ব্রাহ্মণ বিদ্বেষের জন্য হত্যা করা হয়। কারণ খনা ছিলেন চার্বাকের অনুসারী নাস্তিক। আবার কোনো কোনো গবেষক বলেছেন- খনা ছিলেন তান্ত্রিক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ভিক্ষুণী। খনার জীবন কথা যেমন রহস্যে ভরা তেমনি হেয়ালিপূর্ণ তার রচনাবলী। জ্যোতিষ শাস্ত্রের ইতিহাসে তিনি অনুপস্থিত। খনার মৃত্যুর প্রায় চারশ বছর পর বাঙালি জ্যোতিষী প্রজাপতি দাসের পঞ্চস্বর ও ষষ্ঠী দাসের গ্রন্থে খনার বচনের উল্লেখ দেখা যায়। এখানেও তার পরিচয় অস্পষ্ট। প্রজাপতি দাসের গ্রন্থে খনার পরিচয় কখনো খনা কখনো লীলাবতী।

আসলে খনার বসবাস ছিলো বারাসাতের কাছেই বেড়াচাঁপার দেউলী গ্রামে। চব্বিশ পরগণার এই গ্রামটি দেগংগা থানার দেউল নগরে অবস্থিত ছিলো। রাজা ধুমকেতুর প্রপৌত্র রাজা চন্দ্রকেতুর শাসনামলে এই অঞ্চলটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে যায়। তখন থেকেই স্থানটিকে স্থানীয় লোকজন দেউলী বলে অভিহিত করে আসছেন। এখানে রাজবাড়ির অদূরে একখণ্ড জমিকে বরাহ ‘মিহিরের বাস্তু’ নামে লোকে অভিহিত করে থাকে। ডঃ দীনেশ চন্দ্র সেন অবশ্য অনেক আগেই এ অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন যে, খনার স্বামী মিহির অধুনা বিলুপ্ত চন্দ্রপুর নামক স্থানে দীর্ঘদিন বাস করেছিলেন, এটা ছিলো চন্দ্রকেতু রাজ্যে অবস্থিত একটি গড়। এ কারণে এটা জোর দিয়ে বলা যায় যে, খনার জন্ম বাংলাদেশেই হয়েছিলো। ডঃ সেনের বর্ণনা মতে চন্দ্রকেতুর রাজভবনের পাশে এখনো একটি উঁচু মাটির স্তূপ দেখা যায় দিও জায়গাটি এখন জঙ্গল হয়ে আছে এবং স্থানীয় লোকদের ধারণা এটাই মিহিরের বাসস্থান ছিলো। ওখানকার লোকেরা বংশ পরমপরায় এ কথা বিশ্বাস করে আসছে। খনার বচনের উৎপত্তিস্থল চন্দ্রপুর বা চন্দ্রগড় হোক বা নাই হোক খনাকে নিয়ে এই স্থানটিকে নিয়ে লোকশ্রুতি প্রচলিত হওয়ায় স্থানটি বিখ্যাত হয়ে গিয়েছে। ঐতিহাসিক রাখাল দাস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন ‘চন্দ্রকেতু গড়ে যে প্রাচীন নিদর্শন আবিষ্কার হইয়াছে, তাহা দেখিয়া স্পষ্ট বুঝিতে পারা যায় যে, স্থানটি ভারতের অতি পুরাতন স্থানগুলির অন্যতম।’ শুধু এইা স্থানটি খনা এবং মিহিরের বসবাসরে কারণে সুপ্রাচীন স্থান হিসেবে চিহ্নিত হয়নি। এটাকে অনেকে তীর্থস্থান হিসেবে অভিহিত করেছেন। ড. কল্যাণ কুমারের ভাসায় চন্দ্রকেুত গড় পূর্ব ভারতের এক সুমহান তীর্থ ক্ষেত্র রূপে জাগ্রত হয়ে আছে।

এই ধরনের কথা আরো বহু পণ্ডিত বলেছেন। খনা মিহিরের বাসভবন বলে কথিত স্থানটিকে যুগে যুগে খনা মিহিরের ঢিপি বা 'পোঁতা' বলে আসছে। কিংবদন্তী অনুসারে রাজা চন্দ্রকেতু পূজার সময় নরবলি দিতেন ও তারই রোধকল্পে গোড়াইচাঁদ পীর চন্দ্রকেতু আক্রমণ করেন এবং রাজা ও তার পরিবারকে হত্যা করেন, অবশ্য কোনো কোনো বর্ণনায় গোড়াইচাঁদ পীর দ্বারা আক্রান্ত হয়ে চন্দ্রকেতু স্বপরিবারে আত্মহত্যা করেন এ কথার উল্লেখ দেখা যায়। কিংবদন্তীর কথা যদি বিশ্বাস করি তা হলো রাজা চন্দ্রকেতু খনা মিহিরের সমসাময়িক এ কথা ধোপে টিকে না, কারণ গোড়াইচাঁদ পীরের ঘটনাটি মুসলিম আমলের, এ কারণেই খনা মিহিরের বাস্তুভিটা এবং খনার বচনের উৎপত্তিস্থল নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়।

১৯০৬ সালে প্রকাশিত আর্কেওলজি অব ইন্ডিয়ার রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে ২৪ পরগণার লোকদের খনার বচন অনুসারে কৃষি পদ্ধতি, গাছ রোপণের ব্যাপকতা এবং বাসস্থান নির্মাণের কৌশল দেখে মনে হয় খনার বাসস্থান ২৪ পরগণাই ছিলো। খনার সমসাময়িক বিক্রমাদিত্য এ কথাও আজ প্রমাণিত হয়ে গেছে, খনার ঢিপি থেকে উদ্ধারকৃত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে জানা গেছে এগুলো গুপ্তযুগের। এখানে প্রাপ্ত মুদ্রা এবং দেয়ালের গায়ে রাজা-রাণীর উৎকীর্ণ বিবাহ চিত্র এর প্রমাণ। কিন্তু এতেও যে ভ্রম নিরসন হয় না। ১৪শ’ এবং ১৫শ’ শতকের রচিত কিছু গ্রন্থে খনার বচনের উল্লেখ দেখা যায়, এতে মনে হয় খনা চতুদর্শ এবং পঞ্চদশ শতাব্দীর পূর্বের লোক ছিলেন। তিনি তাহলে কি চতুদর্শ এবং পঞ্চদশ শতাব্দীর ও আগে কয়েক শতাব্দী ডিঙিয়ে গিয়েছেন হয়তো এমনটাই হবে, না হলে খনার বচনে বৈষ্ণব মতবাদ, ভক্তিবাদ ইত্যাদি সম্পর্কে ছিটেফোঁটা ইঙ্গিতও নেই সেন আমলের জ্যোতিষ শাস্ত্র ছিলো ধর্ম নির্ভর কিন্তু খনার বচনে দেবদেবীর উল্লেখ নেই, আধ্যাত্মবাদও তার বচনে অনুপস্থিত, ব্রাহ্মণবাদের প্রতি তীব্র কটাক্ষ, মায়াবাদ ও সন্ন্যাসবাদের কোনো প্রভাব নেই। এ কারণে অনেক গবেষক মনে করেন খনার কাল ছিলো মাধবাচার্য এবং শংকরাচার্যেরও পূর্বে তা না হলে বৈদিক ধর্ম প্রচারের প্রবল তোড়ে খনার বচনগুলো ভেসে যেতো। গবেষকদের ধারণা খনা সপ্তম শতাব্দীর লোক যখন বৌদ্ধ, জৈন, শাক্ত, শৈব, সাহজিয়া, বাউল, তান্ত্রিক, নাথ এবং চার্বাক-নাস্তিকবাদের ঘোরে সমাজ তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছিলো তখন খনার উদ্ভব। খনার বচনে অলৌকিকত্ব নেই। কুসংস্কার ও খনার বচনকে আবিষ্ট করতে পারেনি। বচনগুলো অধিকাংশই বাস্তবধর্মী। উড়িয়া এবং বাঙালিরা উভয়েই খনার বচনকে তাদের নিজস্ব সম্পদ বলে মনে করে। উড়িয়া ভাষায় খনার বচনের সংখ্যা ও প্রচলন বাংলা ভাষার চেয়ে বেশি। মৈথলী ভাষাও বহু খনার বচনকে আত্মসাৎ করেছে, অন্যান্য ভাষায়ও রূপান্তরিত হয়ে খনার বচন প্রচলিত আছে, নেপালী ভাষায় কিছু প্রবচন দেখা যায়- সেগুলো খনার বচনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। 

-

খনার বচন

===========

মূলত কৃষি উৎপাদন এবং প্রকৃতি ভিত্তিক বিভিন্ন উপদেশই খনার বচনের মুল উপজীব্য। তাছাড়াও বর্ষপঞ্জী, জ্যোতিষ গণনা, বিধি নিষেধ, স্বাস্থ্য সহ নানা পরিসরে রয়েছে খনার বচনের ব্যাপ্তি। নিচে আমরা কয়েকটি কৃষিভিত্তিক বচন ও তার অর্থ জেনে নেই।


=> কলা রুয়ে না কেটো পাত, 

তাতেই কাপড় তাতেই ভাত।

অর্থ - কলাগাছের পাতা না কাটলে তাতে কলার ফলন ভালো হয়।


=> নারিকেল গাছে নুনে মাটি, 

শীঘ্র শীঘ্র বাধে গুটি।

অর্থ - নারিকেল গাছের গোড়ায় লোনা মাটি দিলে নারিকেলের ফলন ভালো হয়।


=> হাত বিশেক করি ফাঁক, 

আম কাঠাল পুতে রাখ।

অর্থ - বিশ হাত ফাঁক করে আম কাঁঠাল গাছ না বুনলে গাছে ভালো ফল আসে না।


=> ডাক দিয়া বলে মিহিরের স্ত্রী শোন পতির পিতা,

ভাদ্র মাসে জলের মধ্যে নড়েন বসুমাতা।

রাজ্য নাশ গো নাশ হয় অগাধ বান,

হাতে কাঠা গৃহী ফিরে কিনতে না পায় ধান।

অর্থ - ভাদ্র মাসে ভুমিকম্প হওয়া বড় বন্যা এবং ফসলের দারুণ ক্ষতির লক্ষণ।


=> শুক্লপক্ষে ফসল বুনে, 

ছালায় ছালায় টাকা গুনে।

অর্থ - চাঁদের শুক্লপক্ষে ফসল বুনলে ফলন ভালো হয়।


=> আষাঢ় শ্রাবণে টুটে পানি, 

তার মর্ম পাছে জানি।

অর্থ - আষাঢ় শ্রাবণ মাসে বর্ষা কম হলে পরে বন্যা হয়।


=> মানুষ মরে যাতে, গাছলা সারে তাতে।

পচলা সরায় গাছলা সারে, গোধুলা দিয়ে মানুষ মারে।

অর্থ - যে স্থান মানুষ বাসের অযোগ্য সে স্থানে গাছ ভালো হয়। পচা দুর্গন্ধ মানুষের জন্য ক্ষতিকর হলেও গাছের জন্য তা উপকারী।


=> বাপ বেটায় করবে চাষ, 

তাতে পুরবে মনের আশ।

অর্থ - নিজের আত্নজ ব্যাতিত সম্পূর্ণ অন্যের উপর চাষের ভরসা করলে চাষাবাদের ক্ষতি হয়।


=> ক্ষেতের কোনা, বাণিজ্যের সোনা।

অর্থঃ কৃষিকাজ বাণিজ্যের থেকে উত্তম।


=> কাঁচায় না নোয়ালে বাঁশ, 

বাঁশ করে টাস টাস।

অর্থ - সময়ের চাষ সময়ে না করলে ফসল অনিশ্চিত।


=> সাত হাত তিন বিঘতে, 

কলা লাগায় মায়ে পুতে।

অর্থ - সাত হাত পর পর তিন বিঘা গর্ত খুড়ে কলাগাছ লাগাতে হয়।


=> খনা বলে চাষার পো, 

আশ্বিনের শেষে সরিষা রো।

অর্থ - আশ্বিন মাসের শেষে সরিষা বনতে হয়।


=> ষোল চাষে মুলা, তার অর্ধেক তুলা

তার অরধেক ধান, বিনা চাষে পান।

অর্থ - মুলাতে সবচে বেশী চাষ দিতে হয় আর চাষ ছাড়াই পান উৎপাদন করা যায়।


=> গাই দিয়া বায় হাল, 

দুঃখ তার চিরকাল।

অর্থ - গাই দিয়ে হাল বাইতে হয়না।


=> কচু বনে ছড়ালে ছাই, 

খনা বলে তার সংখ্যা নাই।

অর্থ - ছাই কচুগাছের জন্য উপকারী।


=> দিনে জল রাতে তারা, 

এই দেখবে খরার ধারা।

অর্থ - বর্ষার শুরুতে যদি দিনে বৃষ্টিপাত হয় আর রাতের আকাশ পরিষ্কার থাকে তাহলে সে বছর খরা হবে।


=> আষাঢ় নবমী শুক্ল পক্ষা, কি কর শ্বশুর লেখা জোখা

যদি বর্ষে মুষল ধারে, মাঝ সমুদ্রে বগা চড়ে

যদি বর্ষে ছিটে ফোটা, পর্বতে হয় মীনের ঘটা

যদি বর্ষে রিমঝিমি, শস্যের ভার না সহে মেদেনী

হেসে সূর্য বসেন পাটে, চাষার বলদ বিকোয় হাটে।


অর্থ - আষাঢ় মাসের প্রথম চাঁদের শুক্ল পক্ষের নবমীর দিন অর্থাৎ চন্দ্র মাসের নয় তারিখে যদি মুষল ধারে বৃষ্টি হয় তাহলে বর্ষা কম হবে। যদি সামান্য ছিটে ফোটা বৃষ্টি হয় তাহলে বর্ষা বেশী হবে। সেদিন মাঝারী বৃষ্টিপাত হলে ফসলের উৎপাদন ভালো হবে আর যদি আদৌ বৃষ্টি না হয় তাহলে সেবছর ভালো ফসল হবেনা।


=> স্বর্গে দেখি কোদাল কোদাল মধ্যে মধ্যে আইল

ভাত খাইয়া লও শ্বশুর মশাই বৃষ্টি হইবে কাইল।

অর্থ - যদি ছোট ছোট খন্ড খন্ড মেঘে আকাশ ভর্তি থাকে তাহলে পরদিন বৃষ্টি হবে।


=> চৈতে কুয়া ভাদ্রে বান,

নরের মুন্ড গড়াগড়ি যান।

অর্থঃ চৈত্র মাসে কুয়াশা অথবা ভাদ্রমাসে বন্যা দেখা দিলে মহামারী হয়।


=> যদি ঝরে কাত্তি, 

সোনা রাত্তি রাত্তি

যদি ঝরে আগন, 

হাতে কুলায় মাগন।

অর্থ - কার্তিক মাসে বৃষ্টি হলে ধানের উৎপাদন ভালো হয়। আর অগ্রহায়ণে বৃষ্টি হলে ধান নষ্ট হবে।


=> জৈষ্ঠ্যে শুখা আষাঢ়ে ধারা, 

শস্যের ভার সহে ধরা।

অর্থ - জৈষ্ঠ্যমাসে প্রচন্ড খরা হলে আষাঢ় মাসে প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে এবং সে বছর প্রচুর ফসল ফলবে।


=> পশ্চিমে ধনু নিত্য খরা, 

পূর্বে ধনু বর্ষে ধারা।

অর্থ - পশ্চিমে রংধনু দেখা গেলে সেটা খরার লক্ষণ আর পুবে রংধনু দেখা গেলে বৃষ্টিপাতের লক্ষণ।


=> দূর সভা নিকট জল, 

নিকট সভা রসাতল।

অর্থ - চন্দ্রসভা বা চাঁদের চারিদিকে মেঘের বৃত্ত বড় হলে তাড়াতাড়ি প্রচুর বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে আর চন্দ্রসভা ছোট আকৃতির হলে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কম।


=> ধানের গাছে শামুকের পা, 

বন বিড়ালী করে রা

গাছে গাছে আগুল জ্বলে, বৃষ্টি হবে খনায় বলে।

অর্থ - শামুক ধান গাছ বেয়ে উপরে উঠতে থাকলে শিঘ্রই প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে।


=> আমে ধান, তেতুলে বান।

অর্থ - যে বছর আম বেশী ফলে সেবছর ধানও বেশী হয়। যেবছর তেতুল বেশী ফলে সে বছর ঝড় বন্যা বেশী হয়।


=> বিয়ানে আউলি বাউলি, দুপুরে বাউ, 

দিনে বলে খরানের ঘর যাও।

অর্থ - সকালে মেঘলা আকাশ দুপুরে প্রবল বাতাস খরার লক্ষণ।


=> চাঁদের সভায় বসে তারা, 

জল পড়ে মুষল ধারা।

অর্থ - চন্দ্রসভার ভেতরে তারা দেখা গেলে মুষল ধারায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।


=> আগে পাছে ধনু চলে মীন অবধি তুলা

মকর মুম্ভ বিছা দিয়া কাল কাটায়ে গেলা।

অর্থ - পৌষ মাসের ৩০ দিন কে ১২ ভাগে ভাগ করলে প্রতি ভাগে আড়াই দিন করে পড়ে। এর প্রথম ও শেষ সোয়া দিন পৌষের জন্য রেখে প্রথম সোয়া দিনের থেকে প্রতি আড়াই দিন ক্রমে মীন অর্থ্যাত চৈত্র মাস থেকে প্রতি মাসের জন্য গণনা করতে হবে। পৌষের এই ভাগ সমুহের ক্রমে যে আড়াই দিনে যেরুপ আবহাওয়া থাকবে সেই মাসেও তদ্রপ আবহাওয়া হবে।


=> জর ভিটায় তুলে ঘর, 

সে আসে তারই জর।

অর্থ - অপরিচ্ছন স্যাতসেতে জায়গায় ঘর করলে সে ঘরে অসুখ বিসুখ লেগেই থাকে।


=> পীড়ে উঁচু মেঝে খাল, 

তার দুঃখ চিরকাল।

অর্থ - ঘরের মেঝে চারদিকের ভিটির চাইতে নিচু হলে সে ঘর স্বাস্থ্য সম্মত নয়।


=> আলো হাওয়া বেঁধ না, 

রোগ ভোগে মরো না।

অর্থ - বদ্ধ ঘর স্বাস্থ্যসম্মত নয়।


=> পুবে হাঁস পশ্চিমে বাঁশ

উত্তরে বেড়ে(কলা) দক্ষিনে ছেড়ে

ঘর করগে পুতা জুড়ে।

অর্থ - হাস মুরগীর খামার বাড়ীর পুব দিকে রাখতে হয় আর বাঁশ ঝাড় পশ্চিমে করতে হয় কলা বাগান উত্তরে এবং দক্ষিণ দিক খোলা রাখতে হয়।


=> দক্ষিণ দুয়ারী ঘরের রাজা, 

পুব দুয়ারী তাহার প্রজা

পশ্চিম দুয়ারীর মুখে ছাই, 

উত্তর দুয়ারীর খাজনা নাই।

অর্থ - স্বাস্থ্যের দিক দিয়ে দক্ষিণ দুয়ারী ঘর সবচে বেশী ভালো তারপর হচ্ছে পুব দুয়ারী ঘর। পশ্চিম দুয়ারী এবং উত্তর দুয়ারী ঘর ভালো না।


=> নিম নিসিন্দা যথা, 

মানুষ কি মরে তথা।

অর্থ - নিম নিসিন্দা গাছ বাড়ীর জন্য অত্যন্ত ভালো।


=> বক বকুল চাপা, তিন পুতোনা বাপা।

অর্থ - বক বকুল চাপা এই তিনটি গাছ একত্রে বুনতে নেই।


=> উনা ভাতে দুনা বল, অতি ভাতে রসাতল।

অর্থ - অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।


=> অধিক খেতে করে আশ, এর নাম বুদ্ধি নাশ।

অর্থ - মাত্রারিক্ত খেলে বুদ্ধিনাশ ঘটে।


=> আঁতে তিতা দাঁতে নুন, উদর ভরো তিন কোন।

অর্থ - পাকস্থলির চার ভাগের এক ভাগ খালি রেখে খেতে হয়।


=> বারো মাসে বারো ফল, না খেলে যায় রসাতল।

অর্থ - সব মৌসুমেই কিছু কিছু মৌসুমি ফল খেতে হয়।


=> জল খেয়ে ফল খায়, যম বলে আয় আয়।

অর্থ - জল খেয়ে ফল খেতে নেই।


=> বেল খেয়ে খায় জল, জির(কৃমি) যায় রসাতল।

অর্থ - বেল খেয়ে জল পান করলে কৃমি নাশ হয়।


=> খালি পেটে কুল, ভরা পেটে মূল।

অর্থ - কুল খালি পেটে আর মূলা ভরা পেটে খাওয়া ভালো।


=> খেতে বসলে কিসের দায়, পাকনা ধান কি জলে যায়।

অর্থ - নিশ্চিন্ত মনে আহার করা উচিত।


=> খানা খায় করে শব্দ, অলক্ষী খুশী লক্ষী জব্দ।

অর্থ - নীরবে খাদ্যগ্রহন করতে হয়।


=> তপ্ত অম্ল ঠান্ডা দুধ,

যে খায় সে নির্বুধ।

অর্থ - ঠান্ডা দুধ স্বাস্থ্যে জন্য ক্ষতিকর। (এখানে অম্ল বলতে টক্ খাদ্য বোঝানো হয়েছে)


=> খেয়ে উদাইম্যা ভাত, শইল করে উৎপাত।

অর্থ - শারীরিক পরিশ্রম না করলে খাদ্য হজম হয় না।


=> দুগ্ধ শ্রম গাংগা বারি, এ তিন উপকারী।

অর্থ - দুধ, শারীরিক শ্রম এবং স্রোতস্বিনী নদী স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।


=> ভোরের হাওয়া লাখ টাকার দাওয়া।

অর্থ - লাখ টাকার ঔষুধের চাইতে ভোরের হাওয়া উপকারী।


=> শাক অম্বল পান্তা, তিনো অসুখের হন্তা।

অর্থ - অসুখ হলে শাক অম্বল এবং পান্তা খেতে নেই।


=> ঘোল কুল কলা, তিনে নাশ গলা।

অর্থ - গলার অসুখ হলে ঘোল কুল ও কলা খেতে নেই।


=> মাংসে মাংস বৃদ্ধি, ঘৃতে বৃদ্ধি বল

দুগ্ধে বীর্য বৃদ্ধি, শাকে বৃদ্ধি মল।

অর্থ - মাংস খেলে মাংস বাড়ে, ঘিয়ে শক্তি বাড়ে, দুধে বীর্য বাড়ে এবং শাক খেলে মল বৃদ্ধি হয়।


=> তেল তামাকে পিত্ত নাশ,

যদি হয় তা বারো মাস।

অর্থ - সারা বছর তৈলাক্ত খাবার এবং তামাক সেবন করলে পিত্তের প্রভূত ক্ষতিসাধন হয়।


=> আহারান্তে চোখে জল, 

দৃষ্টি শক্তির বাড়ে বল।

অর্থ - খাবার পর চোখে জল ছিটানো চোখের জন্য ভালো।


=> সকালে সোনা, বিকালে লোনা।

অর্থ - সকালের স্নান উত্তম আর বিকেলে স্নান করলে ত্বক মলিন হয়ে যায়।


=> প্রভাত কালে উঠে যে খাবে ঠান্ডা জল,

তাহার ঘরে বদ্যি না যাবে কোন কাল।

অর্থ - সকালে ঘুম থেকে উঠে ঠান্ডা জল পান করতে হয়।