পাহাড়ী অঞ্চলে কাজু বাদামের উৎপাদন,প্রক্রিয়জাতকরন ও রপ্তানী

পাহাড়ী অঞ্চলে কাজু বাদামের উৎপাদন,প্রক্রিয়জাতকরন ও রপ্তানী

 কাজু বাদাম একটি নাট (ঘঁঃ) বা বাদাম জাতীয় ফল। বৃক্ষ জাতীয় ফসলের আর্šÍজাতিক বাণিজ্যে কাজু বাদামের স্থান তৃতীয়। ইহার বীজ থেকে পাওয়া বাদাম সুস্বাধু ও পূষ্টিকর এবং অর্থনৈতিক দিক দিয়েও মূল্যবান। বাদামের উপরের অংশের ফল থেকে জুস,ভিনিগার এবং এলকোহল তৈরী করা যায়। তাছাড়া বাদামের খোলসের তৈল শিল্প কাজে ব্যবহৃত মূল্যবান দ্রব্য। আমাদের দেশের জলবায়ু কাজু বাদাম চাষের জন্য বেশ সহায়ক। বিশেষ করে পাহাড়ী অঞ্চলে ব্যাপক কাজু বাদাম চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা এখানে স্বল্প মূল্যে প্রচুর জমি পাওয়ার যায়, যেখানে কাজু বাদাম চাষের উপযুক্ত আবহাওয়াও বিদমান রয়েছে। আর একটু যতœবান হলে অর্গানিক কাজুু বাদাম উৎপাদন করা  খুবই সম্ভব যা রপ্তানী যোগ্য এবং এর বাজার মূল্যও অনেক।বর্তমানে বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের সম্ভাবনাময় রপ্তানি পন্যের  তালিকায়  কাজু বাদাম প্রথম স্থানে রয়েছে।
   
কাজু বাদামের ইতিহাস ঃ-

            আজ থেকে প্রায় ৩০-৩৫ বৎসর পূর্বে পার্বত্য চট্রগ্রাম উন্নয়ন বোড এবং উদ্যান উন্নয়ন বিভাগ (কৃষি সম্প্রসারন বিভাগ) সমন্বয়ে পার্বত্য এলাকায় কৃষকের উন্নয়নের  জন্য প্রচুর পরিমানে অন্যান্য ফলের চারা/কলমের সাথে কাজু বাদামের চারা সরবরাহ করে থাকে। কালের চক্রে কাজু বাদাম গাছ বড় হয়ে ফল দিতে থাকে। কিন্তু কাজু বাদামের বিক্রি , বাজাত করা বা প্রক্রিয়াজাত করার কোন প্রকার ব্যবস্থা তেমন ছিল না।শুধু মাত্র রাংগামাটিতে দেশীয় পদ্দতিতে স্বল্প কিছু কাজু বাদাম প্রক্রিয়াজাত করা  হতো।তবে বিপুল পরিমান কাজু বাদাম অবিক্রিত থেকেই যেত।লোকসান বিধায়  কাজু বাদামের প্রতি কৃষকগন  অনীহা প্রকাশ করে এবং অনেকে  প্রতিষ্ঠিত  বাগানের গাছ কেটে ফেলে।পরবর্তীতে কিছু রপ্তানীকারক ভারত, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে স্বল্প পরিমানে  কাজু বাদাম রপ্তানী করতে থাকে। লেখক  রুমা এবং থানচি উপজেলার দায়িত্ব পাওয়ার পর কাজু বাদামের বিক্রি ,বাজারজাত করা বা প্রক্রিয়াজাত করার ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে মনোযোগ দেন।এ ব্যাপারে বিগত ২৫/৯/২০১৬ সালে থানচিতে বানিজ্য  মন্ত্রনালয়ের সচিব সহ উচ্চ পর্য্যায়ের কর্মশালার ব্যাবস্থা করেন।এতে লেখক প্রধান আলোচক হিসাবে পেপার উপস্থ্পন করেন। এর ফলে  পরবর্তী মৌসুমে কৃষকগন আগ্রহ সহকারে কাজু বাদাম সংগ্রহ ও সংরক্ষনে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে।এতে কাজু বাদামে বাজার মূল্য অনেক বেশী হয় এবং উৎপাদনকারীগন  বিপুল পরিমানে আর্থিক ভাবে লাভবান হন। বর্তমানে বানিজ্য  মন্ত্রনালয়ের সহযোগিতায় বাংলাদেশ কাজু বাদাম সমিতি লিঃ   আধুনিক ফেক্টরী প্রতিষ্ঠার  চেষ্টা করছেন। আশা করা যায়, অচিরেই এদেশের প্রক্রিয়াজাতকৃত  কাজু বাদাম জনগন খাওয়ার সুযোগ পাবেন।  
      
 কাজু বাদামের পুষ্টি গুনঃ
  
     ক) খাদ্য মানের দিক দিয়ে কাজু বাদাম অতি পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর। এ বাদামে শতকরা ২১ ভাগ আমিষ, ৪৭ ভাগ ¯েœহ, ২২ ভাগ শর্করা, ২.৪ ভাগ খনিজ পদার্থ, ০.৪৫ ভাগ ফসফরাস, ০.৫৫ ভাগ ক্যালসিয়াম এবং প্রতি ১০০ গ্রাম বাদামে ৫ মিলি গ্রাম লোহ ৭৩০ মি,গ্রাঃ ভিটামিন বি-১, ১১০ মিলিগ্রাম রাইবোফ্লোবিন রয়েছে। প্রচুর শর্করা, আমিষ, ¯েœহ, খনিজ পদার্থ, ভিটামিনসহ অন্যান্য উপকারী অনেক ফাইটো ক্যামিক্যাল্স রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। বিশেষজ্ঞদের মতে স্বাস্থ্যের জন্য কাজুবাদাম নি¤েœর কাজগুলি করে থাকে -

১। হৃদপিন্ডের শক্তিদায়ক,                                      ৮। ¯œায়ুতন্ত্রকে সুস্থ সবল করে।
২। হাড় ও দাতের গঠনে সাহায্যে করে,                        ৯। ব্লাড প্রেসার কমায়              
৩। ক্যান্সার প্রতিরোধ করে,                                    ১০। ডায়বেটিস রোগীর জন্য উপকারী                           
৪। হজমে সাহায্যে করে,                                       ১১। রক্ত শুন্যতা কাজ করে
৫। চুলের উপকার করে                                         ১২। অবসাদ দূর করে    ইত্যাদি।   
৬। পিওথলি/কিডনী পাথড় তৈরীতে বাধা দেয়,
৭। ভালো ঘুম আনয়ন করে,

।     

         কর্মসংস্থানের  ব্যবস্থাঃ
  
   কাজু বাদামের চাষে, ফল সংগ্রহে ও প্রক্রিয়াজাতকরনে অনেক লোকের প্রয়োজন হয়। পাহাড়ী এলাকায় জনগনের  সরকারী/বেসরকারী পর্য্যায়ে তেমন কোন চাকুরীর সুযোগ নেই। কিন্তু  কাজু বাদাম চাষে, ফল সংগ্রহে এবং  প্রক্রিয়াজাতকরন ও বাজারজাতকরনে প্রচুর লোকের প্রয়োজন হয়। সাথে সাথে বেকার জনগনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।        
             
    
 
 অর্থনৈতিক গুরুত্বঃ-

            আগেই বলা হয়েছে বৃক্ষ জাতীয় ফলের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কাজু বাদামের স্থান তৃতীয়। আর বাদাম জাতীয় ফসলে কাজু বাদাম প্রথম স্থানে রয়েছে। আমাদের দেশের কথা চিন্তা করলে দেখতে পাই, সাধারণ কৃষকগন কাজু বাদাম প্রক্রিয়াজাত করতে না পারলেও শুধু বাদাম বিক্রি করে টন প্রতি যার মূল্য প্রায় ১,০০,০০০/- থেকে ১,২০,০০০/- টাকা পেয়ে থাকেন। তবে এর বাজার বেশ পরিবর্তনশীল। গত বৎসর বান্দরবানের বাজারের টন প্রতি ১,২০,০০০/- টাকায়  বিক্রি হয়েছে।গড়ে প্রতি হেক্টরে ১.৮টন কাজু বাদাম উৎপন্ন হয়ে থাকে।গত বৎসরের হিসেব অনুযায়ী গড়ে প্রতি হেক্টরে প্রায় ২,০০,০০০/=টাকা উপার্জন করা সম্ভব।যা অন্যান্য অনেক ফসল থেকে বেশী।
 
  পাহাড়ী অঞ্চলে কাজু বাদামের উন্নয়ন সম্ভাবনাঃ

           কাজু বাদাম চাষের জন্য উপযুক্ত আবহাওয়ার হলো, গড়ে ২৫সেন্টিঃ থেকে ২৭ সেন্টিঃ তাপমাত্রা, ১০০০মিমি থেকে ২০০০মিমি বাৎসরিক বৃষ্টিপাত, ৫০০মিঃ থেকে -১০০০মিটার সমূদ্র পৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা এবং বন্যা মুক্ত অম্লীয় বালি বা বালি দোআশ মাটি। এসব বিষয় গুলি বিবেচনা করলে কাজু বাদাম চাষের উপযুক্ত জমি এ পাহাড়ী অঞ্চলে প্রচুর রয়েছে। পাহাড়ী এলাকায় নভেম্বর^ থেকে প্রায় এপ্রিল/মে মাস পর্যন্ত সাধরণত কোন বৃষ্টিপাত হয় না। অর্থ্যাৎ ৫/৬ মাস পাহাড়ী ভূমি বৃষ্টি বিহীন অবস্থায় থাকে। আবার সেখানে সেচ দেওয়ার তেমন কোন সুযোগ সুবিধা নেই। মার্চ এপ্রিল মাসে প্রচন্ড খরা এবং গরম হাওয়া বিদ্যমান থাকে। সে অবস্থায়ও কাজু বাদাম বেশ ভাল ফলন দিয়ে থাকে। আবার স্বল্প মূল্যের জমি এবং কর্মঠ শ্রমিক প্রাপ্যতা এখানে রয়েছে। জমি হল কৃষির মূল উপাদান , ইহা ছাড়া কৃষি অচল ও অসম্ভব। সমতল এলাকায় কাজু বাদাম করার মত স্বল্প মূল্যের ভুমি পাওয়ার দুস্কর। অধিক মূল্যে জমি ক্রয় করতে প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু পাহাড়ী অঞ্চলে এখনো স্বল্পমূল্যে জমি ক্রয় করা বা স্বল্প খরচে সহজে জমি বন্দোবস্তি নিয়ে কাজু বাদাম চাষ করা যায়। এতে মূলধনের প্রয়োজন খুব কম। তাছাড়া এখানে বসবাসকারীগন খুবই কর্মঠ ও পরিশ্রমী। এ জনবলকে কাজে লাগাতে পারলে কাজু বাদাম চাষে আরো সুবিধা হবে। তাছাড়া এখানকার মানুষ আগে থেকে কাজু বাদাম চাষের অভিজ্ঞতা রয়েছে। পাহাড়ী এলাকায় কাজু বাদাম স্বল্প পরিচর্য্যায় পাহাড়ী পতিত জমিতে ফলন দিয়ে থাকে। সামান্য পরিচর্য্যা
করা হলে এক হেঃ থেকে ১.৫ থেকে ১.৮ টন কাজু বাদাম পাওয়া সম্ভব। যার বাজার মূল্য প্রায় ১,০০০০০-১,৫০,০০০/- টাকা। পাহাড়ী অঞ্চলে পতিত ভুমিতে এত সহজে স্বল্প পুজিতে অন্য আর কোন ফসল পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।  কাজু চাষের উন্নয়ন করতে হলে কৃষকগণকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আরো আধুনিক জ্ঞানের অধিকারী করতে হবে। এসব কাজ গুলি সফল বাস্তবায়নে পাহাড়ী অঞ্চলে কাজু বাদাম চাষের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।

অর্গানিক কাজু বাদাম চাষের গুরুত্বঃ
     ইদানিং দেখা যায়, আগের তুলনায় মারাতœক রোগ যেমন- ক্যানন্সার, ডায়বেটিস, হার্টের রোগ, ব্লাডপ্রেসার, কিডনী, লিভার সহ শারীরিক সমস্যা অনেক বেশী দেখা যায়। বিশেষজ্ঞের মতে এগুলির অনেক কারণ থাকলেও বিভিন্ন ধরনের রাসায়নি দ্রব্যসহ বালাই নাশকের অপব্যবহার একটি প্রধান কারন। আমরা কৃষি পন্য উৎপাদন করতে কৃত্রিম রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার যত কমাতে পারবো ততই মানব স্বাস্থ্য রক্ষায় উপকার হবে। বিগত কয়েকদিন পূর্বে মন্ত্রী পরিষদ সভায় বাংলাদেশে জৈব কৃষিনীতি অনুমোদন করেছে। আমরা অন্যান্য ফল ফসলের মতো কাজু বাদাম উৎপাদনে  জৈব কৃষি নীতি পালন করে , এদেশে এবং আন্তর্জাতিক বাজারেও ভাল দামে বিক্রির সুযোগ পাবো ।আর আন্তর্জাতিক বাজাওে অর্গানিক ফসলের চাহিদাতো দিন দিন বাড়ছেই।
          
 রপ্তানিঃ-            
        কাজু বাদাম আমাদের দেশে উৎপন্ন হলেও প্রক্রিয়াজাত করার অভাবে খোসাসহ বাদাম বিদেশে রপ্তানি করতে হয়। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে এর প্রচুর  চাহিদা রয়েছে।ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড,ভারত আমাদের দেশের কাজু বাদাম আমদানী করে থাকে। তবে  আধুনিক মেসিনের সাহায্যে প্রক্রিয়াজাত করা হলে বাদামের বাণিজ্যিক মূল্য বেড়ে যায়। যদি  আধুনিক পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজাত করা হয়, তবে আমরাই আবার আকর্ষনীয় মূল্যে কাজু বাদাম বিদেশে রপ্তানি করতে পারবো। এতে দেশের যেমন অতিরিক্ত বৈদিশিক মূদ্রা উপার্জন হবে সাথে সাথে এখানে কর্মসংস্থানের উন্নতি  হবে।
উৎপাদনঃ-
 এতক্ষণ আমরা কাজু বাদামের গুরুত্ব, পুষ্টি মূল্য, অর্থনৈতিক মূল্য ইত্যাদি সম্পর্কে অবগত হলাম। কিন্তু মান সম্পন্ন কাজু বাদাম উৎপাদন ও সংরক্ষণ ঠিক মত করতে না পারলে কাজু বাদামের ভাল মূল্য পাওয়া যায় না। মান সম্পন্ন কাজু বাদাম চাষের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলি নি¤œরূপঃ-

১)উন্নত জাতের বাদামে চারা লাগানো   ৬)সঠিক সময়ের কাজু বাদাম সংগ্রহ করা
২)আগাছা পরিস্কার করা                  ৭) সঠিক ভাবে শুকানো এবং
৩)সার ব্যবস্থাপনা পালন করা            ৮)সঠিক ভাবে কাজু বাদাম সংরক্ষণ করা ইত্যাদি।
৪)বালাই ব্যবস্থাপনা পালন করা
৫)সেচ ব্যবস্থাপনা পালন করা   
    
১)    উন্নত জাতের বাদামে চারা লাগানোঃ- আপনার জানেন কাজু বাদামের আকার ছোট বড় ও মাঝারি আকারে হয়ে থাকে। কাজু বাদামের বাগান করা সময় অবশ্যই মান সম্পন্ন, উন্নত জাতের চারা ব্যবহার করতে হবে। যে জাতে বড় আকারে বাদাম হয় এবং ফলন ভাল হয় এমন গুন সম্পন্ন বাদামের গ্রাফটিং চারা লাগাতে পারলে সব চেয়ে ভালো। তা না হলে বড় আকারে বাদাম হয় এবং ফলন বেশী হয় এমন মার্তৃগাছ নির্বাচন করে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। সে বীজ দ্বারা চারা করে গাছ লাগাতে হবে। এখানে মনে রাখতে হবে ১ কেজি কাজু বাদামে ১৮০টি বীজ হলে গ্রেড-অ এবং ১৮১ থেকে ২১০টি বাদামে ১কেজি হলে গ্রেড- ই এবং ১কেজিতে ২১০ এর বেশী হলে গ্রেড- ঈ, যার মূল্য অনেক কম। তাই অবশ্যই বড় আকারে বাদাম হয় এমন চারা লাগানো ব্যবস্থা নিতে হবে।

২)    আগাছা পরিস্কার করা ঃ- সঠিক ভাবে বাগান পরি”র্য্যা করার জন্য বাগান অবশ্যই আগাছা পরিস্কার করতে হবে। এতে পোকামাকড় সহ রোগবালাই অনেক কম হয়। আবার মান সম্পন্ন ফসল সংগ্রহে সুবিধা হয়।
৩)     সার ব্যবস্থাপনা ঃ- সার হলে গাছের খাবার। কাজু বাদাম যদিও মাঝারি মানের উর্বর জমিতে  হয়। কিন্তু ভালো ফলন পেতে হলে জৈব সার, ইউরিয়া, টিএসপি/ডিএপি, এমওপি, জিংক ও বোরন সার পরিমিত মাত্রাই প্রয়োগ করতে হবে।
৪)  বালাই ব্যবস্থাপনা ও সেচ ব্যবস্থাপনা ঃ-এখানে কাজু বাদামে মারাতœক তেমন কোন রোগ বালাই দেখা যায় না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিলে সমস্যার সমাধান সম্ভব। কাজু বাদাম শুকনা আবহাওয়াতেও ফল দিতে পারে তবে শুকনা মৌসুমের সেচ দিতে পারলে ফলন প্রায় দ্বিগুন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
৫)সঠিক সময়ের কাজু বাদাম সংগ্রহ করা ঃ- সাধারণত আমাদের দেশে মে-জুন মাসে কাজু বাদাম পরিপ্ক্ক হয়। পরিপক্কের পরপরই এ বাদাম সংগ্রহ করতে হয়। পরিপক্ক হলে বাদাম গাছ থেকে পড়ে যায়। কাচা অবস্থায় এ বাদামের ফল থেকে বাদামটি বেশ বড় এবং নরম থাকে। পাকার সময়  বাদামটি ছোট এবং  পরিপুষ্ট হয়। তখনই বাদাম সংগ্রহ করতে হবে।  অপরিপক্ক বাদাম থেকে কখনও ভাল মান সম্পন্ন কাজু বাদাম পাওয়া স¤ভব নয়।
৬)সঠিক ভাবে শুকানো ঃ- এদেশে কাজু বাদাম সংগ্রহের সময় সাধারণত মে থেকে জুলাই মাস। এ সময় আমাদের দেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। বাতাসে আদ্রর্তা থাকেও প্রচুর। কাজু বাদাম তৈলাক্ত জাতীয় ফসল। বাদামটিকে  প্রচুর আর্দ্রতাসহ গুদাম জাত করা হলে  ভিতরে বাদাম বা কার্নেল অতি দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। বাদামে উপরের রং ও নষ্ট হয়। আন্তর্জাতিক বাজারেও এর মূল্য অনেক কমে যায়। অনেক ক্ষেত্রে রপ্তানি করা যায় না। তাই ফসল সংগ্রহের পর পরই বাদাম গুলি ভালভাবে গুকানো প্রয়োজন।
৭)সঠিক ভাবে কাজু বাদাম সংরক্ষণ করা ঃ- ভাল বাদাম এবং ভালো ভাবে শুকানো বাদামগুলি গুদাম জাত করার দিকে নজর দিতে হবে। কেননা সংরক্ষণ করার উপর বাদামের গুনাগুন নির্ভর করে থাকে। শুকনা বাদাম গুলি বায়ুরোধক বস্তায় সংরক্ষন করা উচিত। আমাদের দেশে মে -জুন থেকে সেপ্টেম্বর -অক্টোবর পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয় এবং বাতাসে বেশ আর্দ্রতা থাকে। ভালো ভাবে শুকানো বাদাম গুলি বায়ুরোধ না হলে বাদামগুলি আর্দ্রতা ধারণ কর নষ্ট হয়ে পড়ে। সঠিক ভাবে গুদাম জাত করা হলে বাদামের গুনাগুন ৬ মাস থেকে ১ বছর পযর্ন্ত ভালো থাকে।

কাজু বাদামের ফেক্টরী স্থাপন
      
    আন্তর্জাতিক বাজারে কাজু বাদামের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। আমাদের দেশে প্রায় ৭০০ মে:টন  কাজু বাদাম উৎপন্ন হলেও প্রক্রিয়াজাত করার অভাবে খোসাসহ বাদাম বিদেশে রপ্তানি  হয়ে যায়।অন্য দিকে আমাদের প্রয়োজনে  আবার বেশী দামে কাজু বাদাম  আমদানী করে থাকি । এক কেজি প্রক্রিয়াজাত করা কাজু  বাদামের মূল্য প্রায় ১২০০/--১৮০০/- টাকা। এক কেজি প্রক্রিয়াজাত করা বাদাম পেতে প্রায় ৩.৫ -৪ কেজি খোসাসহ কাজু বাদামের প্রয়োজন হয়।এর দাম প্রায় ৩০০-৪০০/=টাকা। তবে আমাদের দেশে বিছিন্ন ভাবে দেশীয় এবং প্রাচীন পদ্ধতিতে কিছু কিছু বাদাম প্রক্রিয়াজাত করা হলেও এ গুলোর গুনগত মান তেমন ভাল নয়। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে এর চাহিদা একেবারে নেই। তবে  আধুনিক মেসিনের সাহায্যে প্রক্রিয়াজাত করা হলে বাদামের বাণিজ্যিক মূল্য অনেক বেড়ে যায়। তখন  আমাদের প্রয়োজন মিটায়ে  আমরাই আবার আকর্ষনীয় মূল্যে কাজু বাদাম বিদেশে রপ্তানি করতে পারবো। এতে দেশের যেমন বৈদিশিক মূদ্রা উপার্জন হবে সাথে সাথে এখানে কর্মসংস্থানেরও উন্নতি  হবে। 
                                    

     ঢাকা থেকে আগত সম্মানিত অতিধিবৃন্দ, বিভিন্ন অফিসারবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দ এবং আমার প্রানপ্রিয় কৃষক কৃষাণী ভাই বোনেরা দীর্ঘ সময় ধরে কাজু বাদামের বিভিন্ন বিষয় গুলি নিয়ে আপনারা শুনলেন জানলেন। যদি আপনারা কাজু বাদামের উৎপাদনে আধুনিক প্রযূক্তি বাস্তবায়নে  সচেষ্ট হন। তবে কাজু বাদাম চাষের  মাধ্যমে নিজের এবং দেশ ও দশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবেন বলে আশা করা যায়।
                                                            
                                                             মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
                                                  উপজেলা কৃষি অফিসার
                                                    রুমা, বান্দরবান পার্বত্য জেলা।