ব্লাষ্ট রোগঃ ধানের ক্যান্সার এবং সমাধানে করণীয়

ব্লাষ্ট রোগঃ ধানের ক্যান্সার এবং সমাধানে করণীয়

বর্তমানে ধানের জমিতে খুবই কমন একটি রোগ হচ্ছে ব্লাষ্ট। এটি ছত্রাকজনিত কারনে হয়ে থাকে। ধান গাছের জীবন চক্রে সাধারণত তিন পর্যায়ে কিংবা তিনটি স্পটে দেখা যায়। 

প্রথমেই এটির প্রাথমিক লক্ষ্মণ দেখা যায় ধানের কচি পাতায় এটিকে বলা হয় #লিফ_ব্লাষ্ট । যার কারণে গাছে সালোকসংশ্লেষণে ব্যাঘাত ঘটে এবং অনেক সময় পর্যাপ্ত খাবার তৈরির অভাবে সঠিক বৃদ্ধি হতে পারেনা। তাছাড়া পরবর্তীতে ধানের গিটে হয়ে থাকে। আক্রান্ত স্থানটি কালো এবং দুর্বল হয়ে যায়, ফলে হালকা ঝড়ে ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়। সর্বশেষ এটি দেখা যায় ধানের শীষের গোড়ায় আক্রান্ত স্থানটি কালো হয়ে যায়। ফলে ধানের দানায় পর্যাপ্ত খাবার যেতে না পারায় ধানটি চিটা এবং ঝরে পরে যায়। এটিকে বলা হয় #নেক ব্লাষ্ট যেটির ক্ষতি পরিমাণ সর্বোচ্চ হয়ে থাকে। ধানের ফুল আসার পর শিষের গোড়ায় এ রোগ দেখা দেয়। শিষের গোড়ায় বাদামি অথবা কালো দাগ পড়ে। শিষের গোড়া  ছাড়াও যে কোন শাখা আক্রান্ত হতে পারে। আক্রান্ত শিষের গোড়া পচে যায় এবং ভেঙ্গে পড়ে। ধান পুষ্ট হওয়ার আগে আক্রান্ত হলে শিষের সব ধান চিটা হয়ে যায়।প্রকৃতপক্ষে, এ রোগের প্রাদুর্ভাব আবহাওয়ার উপর নির্ভরশীল। দিনের বেলায় গরম ও রাতে ঠাণ্ডা, শিশিরে ভেজা সকাল, মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, ঝড়ো আবহাওয়া এবং গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি এ রোগের জন্য খুবই অনুকূল। এরকম আবহাওয়া বিরাজ করলে বোরো মৌসুমে আবাদকৃত ধানের বিভিন্ন জাত ব্যাপকভাবে নেক ব্লাস্ট রোগাক্রান্ত হতে পারে।

নেক ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা যায় না। সাধারণত কৃষক যখন জমিতে নেক ব্লাস্ট রোগের উপস্থিতি সনাক্ত করেন, তখন জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যায়। সে সময় অনুমোদিত মাত্রায় ঔষধ প্রয়োগ করলেও রোগ দমন করা সম্ভব হয় না। সেজন্য রোগের অনুকূল অবস্থা বিবেচনার পাশাপাশি এ রোগের জীবাণু যেহেতু দ্রুত বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়, তাই রোগটি দমনের জন্য কৃষক ভাইদের আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।

ব্লাষ্টের লক্ষ্মণ দেখা দিলে করণীয়ঃ


১/ জমিতে ৩/৪ সেঃমি পানি ধরে রাখা।

২/ ইউরিয়া সার প্রয়োগ সাময়িক বন্ধ রাখা

৩/ বিঘাপ্রতি (৩৩ শতাংশের জন্য) অতিরিক্ত ৫ কেজি পটাশ সার উপরি প্রয়োগ।

৪/ অনুমোদিত ছত্রাক নাশকের সঠিক ডোজে স্প্রে করা। নিম্নের যেকোন একটিঃ

ক) নাটিভো ৬ গ্রাম /১০ লিটার পানিতে / ৫ শতাংশের জন্যে

খ) ট্রুপার ৮ গ্রাম/ ১০ লিটার পানিতে / ৫ শতাংশের জন্যে

গ) ফিলিয়া ২০ মিলি/ ১০ লিটার পানিতে / ৫ শতাংশের জন্যে

ঘ) সেলটিমা ২০ মিলি/ ১০ লিটার পানিতে / ৫ শতাংশের জন্যে।পাতায় ব্লাষ্টের লক্ষ্মণ দেখা দিলেই দেরী না করে উপরে উল্লিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

৫/ ধানের অধিক পুষ্ট এবং ব্লাষ্টের ক্ষতি থেকে রক্ষায় ধানের থোড় অবস্থায়  ১০ লিটার পানিতে / ৫ শতাংশের জন্যে ৬০ গ্রাম পটাশ+ ৬০ গ্রাম সালফার (থিওভিট/সালফক্স) স্প্রে করুন।

৬/ ব্রি ধান ২৮ এবং ২৯ জাতের পরিবর্তে সদ্য অবমুক্ত হওয়া ধানের জাত যেমন ব্রি ধান ৫৮, ব্রি ধান ৭৪, ব্রি ধান ৮১, ব্রি ধান ৮৮ এবং ব্রি ধান ৮৯ ব্যবহার করতে কৃষকদের আগ্রহী করা।   

৭/ ভেজাল ঔষধ চিহ্নিত করতে পারলে উপজেলা কৃষি অফিসে দ্রুত অভিযোগ করা।


***************************************************

কৃষিবিদ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম লিটন 

কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার 

কচুয়া, চাঁদপুর।