‘ফণী’ মোকাবেলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতিঃ (কৃষকদের ৮০% পাকা ধান কেটে ফেলার পরামর্শ)

‘ফণী’ মোকাবেলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতিঃ (কৃষকদের ৮০% পাকা ধান কেটে ফেলার পরামর্শ)

ঘুর্নিঝড় ‘ফনী’ মোকাবেলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিষ্ট ফোরামের (বিসিজেএফ) সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি বলেন, উপক‚লের মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে রাখার জন্য ৪০ হাজার ৭১টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে সোলারের মাধ্যমে বিদ্যুত, সুপেয় পানি ও শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। উদ্ধার কাজে সহায়তার জন্য সেনাবাহিনীকে প্রস্তত রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রস্তুত রয়েছে নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড।

দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ফণীর ক্ষয়-ক্ষতির সম্ভাবনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘উপক‚লীয় অঞ্চলের মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা এবং তাদের মহায়তার জন্য আমরা ৪৭ লাখ ভলন্টিয়ারকে নিয়োজিত করেছি। উপকূলের লোকজন অনেক সময় আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে চায় না। আমরা তাদের জোর করে আশ্রয় কেন্দ্রে নিতে আসতে বলেছি। সরকারের যে প্রস্তুতি তাতে ফনী আঘাত করলেও প্রাণহানির কোন আশঙ্কা নেই।’ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ফনীর ক্ষয়-ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিশেষ দোয়ার করার জন্য তিনি দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

ডা. এনামুর রহমান আরও বলেন, আমরা খবর পেয়েছি ফণী ওড়িশা উপকূলে আঘাত হেনেছে। এরপর যদি পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানে, তাহলে দুর্বল হয়ে যাবে, তাতে বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা কমে যাবে। যদি উত্তরে সরে যায় তাহলে বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতি বাড়তে পারে। এজন্যই আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। ১৯টি জেলায় অতিরিক্ত ৫ লাখ করে নগদ টাকা, ২০০ টন করে চাল এবং ২ হাজার প্যাকেট করে শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে। সুপেয় পানি সরবরাহ করার জন্য ৩০টি ওয়াটার ট্রাক মাউন্টেন পাঠানো হয়েছে। এসব ট্রাক লবণাক্ত পানিকে সুপেয় পানিতে রূপান্তর করে খাবার জন্য সরবরাহ করবে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রতিমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি সকালে আওয়ামীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলোর (ছাত্রলীগ, যুবলীগ) নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। বৈঠক করে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের উপক‚লীয় জেলার সমুহের সদস্যদের ফনী মোকাবেলায় সহায়তা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঘুর্নিঝড়ের চট্টগ্রামে আঘাত হানার সম্ভানা থাকলেও কক্সবাজারে আঘাত হানার কোন সম্ভবনা নেই। ফলে ঘুর্নিঝড়ে রোহিঙ্গারদের ক্ষয়-ক্ষতির কোন আশংকা নেই। তা সত্তে¡ও রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে আমরা সতর্ক রয়েছে। রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে ৩২শ’ ভলন্টিয়ার প্রস্তুত করা হয়েছে। তারাও আমাদের সঙ্গে কাজ করছে।

দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল বলেন, ভৌগলিক অবস্থানের কারণে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত ঝড় জলোচ্ছ্বস আঘাত হানছে। এ ব্যাপারে জনগনকে সচেতন করার কোন বিকল্প নেই। আপনারা জনগনকে সতেচন করার দায়িত্ব পালন করছেন। আমরা এ ব্যাপারে আপনাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে আরও সহযোগিতা করতে চাই। আমরা আপনাদের জন্য যৌথ কর্মশালার আয়োজন করব।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম বেড়ে গেছে। ফলে অনেকে দেশেই দুর্যোগ মন্ত্রণালয়কে পৃথক করা হয়েছে। আমাদের দেশে পৃথক মন্ত্রণালয় হওয়ার কারণে কাজ করতে সুবিধা হচ্ছে।

ঘুর্নিঝড় ফনী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী ঘণ্টায় ২৭ কিলোমিটার গতিতে ধেয়ে আসছে। এজন্য ইতোমধ্যে আমরা মোংলা এবং পায়রা বন্দরে বিশেষ করে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের অর্ধেক এলাকায় ৭ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করেছি। এরপরের সংকেতটি আসবে মহাবিপদ সংকেত। আমরা এখন মহাবিপদ সংকেতের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।’

শাহ কামাল বলেন, ‘সংকেতের স্তরগুলো হচ্ছে ১ থেকে ৪ পর্যন্ত হুঁশিয়ারি সংকেত। ৫, ৬ ও ৭ হচ্ছে বিপদ সংকেত। বিপদ সংকেতগুলো বাংলাদেশে হয় বন্দরকেন্দ্রিক। ৮, ৯ ও ১০ নম্বর হচ্ছে মহাবিপদ সংকেত। আমরা এখন মহাবিপদ সংকেতের সামনে এসেছি। ইতোমধ্যে আমরা বিপর্যয় থেকে রক্ষার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।’ তিনি বলেন, আমাদের দেশে ৪৭ লাখ স্বেচ্ছাসেবক আছে। পৃথিবীর বহু দেশে এত লোকই নেই। এসব স্বেচ্ছাসেবক জীবন বাজি রেখে কাজ করে। আমরা একটি মানুষকেও হারাতে চাই না। এ জন্য উপকূলীয় ১৯ জেলার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

তথ্যসূত্রঃ



হ্যারিকেনের গতি নিয়েই (ঘণ্টায় ১১৮ কিলোমিটারের বেশি গতি) ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের খুলনাঞ্চলে আঘাত হানবে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’। সুন্দরবন কিছুটা সুরক্ষা দিলেও ক্ষয়ক্ষতি কম হবে- এমন কথা বলা যাচ্ছে না।

র্তমানে ভারতের পূর্ব-উপকূল ঘেঁষে উত্তরের দিকে এগোতে থাকা ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ নিয়ে এমন আভাসই দিচ্ছেন বাংলাদেশের আবহাওয়াবিদরা।
 
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ফণী বর্তমানে পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮১০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে এবং কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছে।
 
এটির গতিপথ ও বৈশিষ্ট্য বলছে, পশ্চিমবঙ্গ ও খুলনার ওপর একই রকম গতিতে আঘাত হানবে ‘ফণী’।
 
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বাংলানিউজ বলেন, এটি বর্তমানে উড়িষ্যা উপকূলের দিকে এগোচ্ছে। এরপর উপকূল ঘেঁষে ঘেঁষে পশ্চিমবঙ্গ ও খুলনার ওপর আঘাত হানবে।
 
ঘূর্ণিঝড়টি লাটিমের মতো একটি ব্যাপ্তি নিয়ে ঘুরে ঘুরে এগোচ্ছে। যেটা বডিলি মুভমেন্ট বলা হয়। এভাবে সে উপকূলের দিকে ১৫ থেকে ১৮ কিলোমিটার বেগে এগোচ্ছে।
 
পশ্চিমবঙ্গ ও খুলনায় আঘাত হানলে সুন্দরবন কিছুটা ঢালের কাজ করবে। কিন্তু ‘ফণী’র তীব্রতা এতোই বেশি যে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলেই শঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
 
আবহাওয়াবিদ ‍সুমন সাহা বাংলানিউজকে বলেন, পশ্চিমবঙ্গ ও খুলনায় ‘ফণী’ তার ৭৪ কিলোমিটার ব্যাপ্তি নিয়ে আঘাত হানবে ১৬০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার বেগে। এই গতি হ্যারিকেনের তীব্রতার। এই বেগে আঘাত হানলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খুব বেশিই হবে। হয়তো সুন্দরবন কিছুটা সুরক্ষা দেবে। কিন্তু এতে তেমন কিছু লাভ হবে না।
 
আবহাওয়া অফিস আগেই জানিয়েছে, শুক্রবার সকালেই ‘ফণী’র অগ্রভাগ চলে আসবে খুলনায়। অর্থাৎ ঝড়ো হাওয়া, দমকা হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টিপাত হবে। আর আঘাত হানবে বিকেল নাগাদ।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৭ ঘণ্টা, মে ০২, ২০১৯
ইইউডি/এইচএ/
bangla news