বাঙ্গি এক রকমের শশা জাতীয় ফল যার অন্য নাম খরমুজ, কাঁকুড়, ফুটি। যার বৈজ্ঞানিক নাম Cucumis melo এবং ইংরেজি নাম Muskmelon. দেশের প্রায় সব এলাকাতেই গ্রীষ্মকালে বাঙ্গি জন্মে। তরমুজের পর এটিই অধিক প্রচলিত শসা গোত্রীয় ফল। বাঙ্গিগাছ দেখতে অনেকটা শসা গাছের মতো, লতানো।

ছোট এবং লম্বাটে জাতকে চিনাল বলা হয়। ফুটি বেশ বড় আকারের হয়, কাচা ফল সবুজ, পাকলে হলুদ রঙের হয় এবং ফেটে যায়। ফলের বাইরের দিকটা মিষ্টি কুমড়ার মতো হালকা ডোরা কাটা খাঁজযুক্ত। খেতে তেমন মিষ্টি নয়, অনেকটা বেলে বেলে ধরনের। এর ভেতরটা ফাঁপা থাকে। কাঁচা বাঙ্গি সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায়। বাঙ্গিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যআঁশ, যা হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এতে চিনির পরিমাণ কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীরাও খেতে পারেন।

👉বাঙ্গির বপন/রোপণ পদ্ধতিঃ-

👉বীজ বপনের সময়ঃ

গ্রীষ্মকালে বাঙ্গি জন্মে । মার্চ থেকে এপ্রিল বীজ বপনের সময়।

👉জলবায়ু ও মাটিঃ

বাঙ্গি চাষের জন্য শুষ্ক ও উষ্ণ জলবায়ু সবচেয়ে উপযোগী। উর্বর বেলে দোআঁশ ও পলি মাটি বাঙ্গি চাষের জন্য সর্বোত্তম।

👉চারা রোপণঃ
জমিতে আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে জমি প্রস্তুত করতে হবে। জাত ভেদে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারীতে বাঙ্গির বীজ বপন করা হয়। প্রায় ৫ ফুট থেকে ৬.৬৭ ফুট দূরে দূরে ১.৩৩ ফুট চওড়া ও গভীর মাদা তৈরি করে প্রতি মাদায় ৪-৫ টি বীজ বুনে চারা গজানোর পরে ২-৩ টি রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হয়।

👉জাত পরিচিতিঃ

দেশে অনুমোদিত কোন জাত নেই। প্রধানত দুই জাতের বাঙ্গি দেখা যায়—বেলে ও এঁটেল বাঙ্গি। বেলে বাঙ্গির শাঁস নরম। খোসা খুব পাতলা, শাঁস খেতে বালি বালি লাগে, তেমন মিষ্টি নয়। অন্যদিকে, এঁটেল বাঙ্গির শাঁস কচকচে, একটু শক্ত এবং তুলনামূলকভাবে বেশি মিষ্টি। বাঙ্গি লম্বাটে সাধারণত লম্বাটে হলেও গোলাকার মিষ্টি কুমড়ার মতো বাঙ্গিও রয়েছে। এ প্রজাতির বাঙ্গির অপর নাম চীনা বাঙ্গি।

👉বাঙ্গি চাষে সার ব্যবস্থাপনাঃ

বাঙ্গি সাধারণত নদীর তীরে বালু মাটি চাষ করা হয়। এজন্য সার প্রয়োগ করা হয় না। তবে ভাল ফলন ও উন্নত মানের বাংগি পেতে নিম্নোক্তভাবে সার প্রয়োগ করতে হবে।

সারের নাম সারের পরিমাণ ( শতাংশ প্রতি)
গোবর সার ৪০ কেজি
ইউরিয়া ২৫০ গ্রাম
টিএসপি ৩০০ গ্রাম
পটাশ ২০০ গ্রাম

👉প্রয়োগ পদ্ধতিঃ

অর্ধেক জৈব সার জমি তৈরির সময় এবং বাকী অর্ধেক জৈব সার ও সম্পূর্ণ টিএসপি মাদায় প্রয়োগ করতে হবে। গাছ কিছু বড় হলে ইউরিয়া ও পটাশ সার মাদার চারপাশের মাটির সাথে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। সার দেয়ার সময় মাটিতে রসের অভাব হলে সেচ প্রদান করতে হবে।

👉বাঙ্গি চাষে অন্যান্য প্রযুক্তি

সেচ প্রয়োগঃ

বাঙ্গি খরা সহ্য করতে পারে। কিন্তু ভালো ফলনের জন্য শুকনোর সময় সেচ দিতে হবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, গাছের গোড়ায় পানি যেন না জমে। কারণ গাছের গোড়ায় পানি জমলে গোড়া পঁচা রোগ হতে পারে।

👉বিশেষ পরিচর্যাঃ-

ফল যাতে পচেঁ না যায় এজন্য জমিতে খড় বিছিয়ে দিতে হবে। অতিরিক্ত ফল ধরলে গাছ প্রতি ৪-৫ টি ফল রেখে বাকী সব ফল ছাঁটাই করতে হবে। আগাছা পরিষ্কার করা, সেচ ও পানি নিষ্কাশনের ওপর জোর দিতে হবে। বাংগির ফলের মাছি পোকা দমনের জন্য সেক্স ফেরোমোন ফাঁদ ব্যবহার করা যেতে পারে।

👉বাঙ্গি সংগ্রহ ও পরবর্তী ব্যবস্থাপনাঃ

বাঙ্গি রং হলদে হলে, ফল ফেটে যাওয়া শুরু করলে বা কোন কোন জাতের বোঁটা বিচ্ছিন্ন হলে বুঝতে হবে যে ফল তোলা যাবে। তখন ফল তুলে সাবধানে পরিবহণ করতে হবে।

👉ফলনঃ

প্রতি শতাংশ জমিতে ৮০-১০০ কেজি ফলন হয়। ফলের ওজন ১-৪ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।

👉ফল ফেটে যাওয়া ও প্রতিকারঃ-


পর্যায়ক্রমে উচ্চ তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার জন্য ফলের শাঁস ও খোাসার বৃদ্ধির মধ্যে সামঞ্জস্য থাকে না বলে ফল ফেটে যায়। জাতগত বৈশিষ্ট্যের কারণেও ফল ফেটে যায়। এজন্য ফলের বৃদ্ধি পর্যায়ে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। তাছাড়া যেসব জাতের বাঙ্গি ফাটে না সেগুলো চাষাবাদ করতে হবে। (সংগৃহীত)