আলু

পুষ্টি মূল্য:
আলু পুষ্টির দিক দিয়ে ভাত ও গমের সাথে তুল্য। এছাড়া খাদ্য হিসাবে আলু সহজেই হজম হয়। আলুতে যথেষ্ঠ পরিমানে খাদ্য শক্তি রয়েছে। তাছাড়া ভিটামিন ও খনিজ লবণও পাওয়া যায়। 
ব্যবহার :
আলু দিয়ে মিষ্টি, সেমাই, নানা রকম ভর্তাসহ বিভিন্ন মুখরোচক খাবার তৈরি করা যায়। তরকারি হিসাবে খাওয়া ছাড়াও প্রক্রিয়াজাত করে চিপস বিক্রি করে গৃহবধূ ও মেয়েরা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে।
উপযুক্ত জমি ও মাটি:
আলু চাষের জন্য বেলে দোআশ ও দোআঁশ ধরনের মাটি সবচেয়ে উপযোগী।
জাত পরিচিতি:

ক্রম

জাতের নাম

বৈশিষ্ট্য

ফলন (টন/হেক্টর)

১.

বারি আলু-১ (হীরা)

গাছের কান্ডের সংখ্যা ৪-৫ টি, রং সবুজ। আলু চেপ্টা গোলাকার। আকার মাঝারি থেকে বড়। ত্বক মসৃন এবং রং হালকা ঘিয়ে। শাঁশের রং হালকা, চোখ কিছুটা গভীর ও সংখ্যা বেশি। এ জাতের জীবনকাল ৭৫-৮৫ দিন। তবে বপনের ৬০-৬৫ দিন পর থেকেই আগাম আলু তোলা যায়। যশোর, বগুড়া, ও কুমিল্লা এলাকায় এজাতের চাষ বেশি হয়। জাতটি মড়ক ও ভাইরাস রোগ সহনশীল।

৩০-৩৫

২.

বারি আলু-৪ (আইলসা)

গাছ কিছুটা ছড়ানো, কান্ডের সংখ্যা বেশি ও হালকা সবুজ। অংকুরোধগম  হতে ৩ মাসের বেশি সময় লাগে। এজন্য আলু সাধারণ তাপমাত্রায় ৫-৬ মাস পর্যন্ত ঘরে সংরক্ষণ করা যায়। জাতটি মড়ক ও ভাইরাস রোগ সহনশীল। বগুড়া ও রংপুর অঞ্চলে দেশী আলুর চাষ কমিয়ে এ জাত চাষ করা যায় এবং দেশী আলুর মতই তা অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায়।

২৫-৩০

৩.

বারিআলু -৪ (ডায়মন্ট)

কান্ডের সংখ্যা কম কিন্তু লম্বা ও শক্ত। পাতা একটু বড় ও গাঢ় সবুজ। জীবনকাল ৯০-৯৫ দিন। আলু ডিম্বাকার, মাঝারি থেকে বড় আকৃতির। ত্বক মসৃন এবং রং হালকা হলুদের। শাঁস হালকা হলুদের ও চোখ  অগভীর । জাতটি সারা দেশেই চাষ করা যায়।

২৫-৩০

৪.

বারিআলু-৮(কার্ডিনাল)

গাছ শক্ত ও দ্রত বেড়ে উঠে। কান্ডের সংখ্যা কম ও লম্বা। পাতার প্রান্ত কিছুটা ঢেউ খেলানো। জীবনকাল ৯০-৯৫ দিন। আলু ডিম্বাকার, মাঝারি আকার। ত্বক মসৃন ও লাল বর্ণের। শাঁস হলদে ও চোখ  অগভীর | জাতটি  মড়ক ও ভাইরাস রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে।

২৫-৩০

৫.

বারি আলু-১১(চমক)

গাছ শক্ত ও দ্রত বেড়ে উঠে। কিছুটা খরা সহ্য করার ক্ষমতা আছে। জীবনকাল ৮০-৮৫ দিন। অংকুর প্রথমে আঁটসাট থাকে ও পরে মোচাকার হয়। রং লাল বেগুনি, অগ্রভাগ সবুজ এবং রোমশ। আলু ডিম্বাকার, মাঝারি আকৃতির ,ত্বক মসৃন, রং হালকা হলুদে ও চোখ  অগভীর। জাতটি সারা দেশেই চাষ করা যায়। 

২৫-৩০

৬.

বারি আলু-১২(ধীরা)

কান্ডের সংখ্যা অনেক বেশি ও পাতা সবুজ। আলু ডিম্বাকার, মাঝারি  আকৃতির, ত্বক মসৃন ও হালকা  হলুদে ও শাঁসের রং ফ্যাকাশে সাদা ও চোখ কিছুটা গভীর। জীবনকাল ৯০-৯৫ দিন। জাতটি মড়ক ও অন্যান্য ভাইরাস রোগ এবং কিছুটা তাপ সহ্য ক্ষমতা সম্পন্ন । সারা দেশেই চাষাবাদ করা যায়। সাধারণ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ ক্ষমতা বেশি। তাই হিমাগারবিহীন এলাকায় ৩-৪ মাস সংরক্ষণ করা যায়।   

২৫-৩০

৭.

বারিআল-১৩(গ্রানোলা)

গাছ কিছুটা ছড়ানোর প্রকৃতির। কান্ডের সংখ্যা বেশি ও সবুজ। প্রথমে গাছের বৃদ্ধি ধীর গতিতে হয় তবে পরে সমস্ত জমি গাছে ডেকে যায়। খরা সহ্য করার ক্ষমতা আছে। আলু গোল-ডিম্বাকার মাঝারি  আকৃতির, ত্বক মসৃন হালকা তামাটে হলুদ, শাঁস ফ্যাকাশে ও চোখ  অগভীর। জীবনকাল ৯০-৯৫ দিন। সারা দেশেই চাষ করা যায়। আলু ৪-৫ মাস ঘরে রাখা যায়। মড়ক ও অন্যান্য ভাইরাস রোগ প্রতিরোধী।

২৫-৩০

৮.

বারিআলু-১৫ (বিনেলা)

গাছ ছড়ানো প্রকৃতির। কান্ডের সংখ্যা বেশি। কান্ড শক্ত ও হালকা সবুজ। খরা সহ্য করার ক্ষমতা আছে। আলু ডিম্বাকার, মাঝারি  আকৃতির, ত্বক মসৃন ও হালকা হলুদে, শাঁসের রং হলুদ ও চোখ  অগভীর। কান্ড বেশি রোমশ। জীবনকাল ৯০-৯৫ দিন। মড়ক ও অন্যান্য রোগ সহনশীল। সারা দেশেই চাষাবাদ করা যায়। উচ্চ ফলনশীল ও সংরক্ষণ ক্ষমতা বেশি ও আকর্ষণীয় রং বলে জাতটি চাষ বেশি হতে পারে।

৩০-৩৫

৯.

বারি টিপিএস-১

আলু গোল-ডিম্বাকারi, মাঝারি আকৃতির, ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল ক্রীম বর্ণের। শাঁস ফ্যাকাশে হলদে, চোখ কিছুটা গভীর। জীবনকাল ১০০-১০৫ দিন। এ জাত প্রকৃত আলু বীজ দিয়ে চাষ করা হয়। চাষিদের উচ্চ মূল্যের বীজ আলু কেনার দরকার হয় না। চাষির নিজের উৎপাদিত দ্বিতীয় বছরের কন্দ পরবর্র্তী বছরের বীজ হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

প্রকৃত আলু বীজ

থেকে : ৪৫-৫০

কন্দ থেকে : ৩০-৩৫  

১০.

বারি টিপিএস-২

আলু গোল-ডিম্বাকার, ত্বক মসৃণ ও হালকা হলুদে, শাঁস ফ্যাকাশে হলদে, চোখ কিছুটা গভীর। জাতটি  মড়ক ও অন্যান্য ভাইরাস রোগ প্রতিরোধী। সারা দেশেই চাষাবাদ করা যায়। চাষির নিজের উৎপাদিত দ্বিতীয় বছরের কন্দ পরবর্র্তী বছরের বীজ হিসেবে ব্যবহার করা যায়।  জীবনকাল ১০০-১০৫ দিন।

প্রকৃত আলু বীজ

থেকে : ৪৫-৫০

কন্দ থেকে : ৩০-৩৫

১১.

বারিআলু-১৬(আরিন্দা)

গাছ দ্রুত বর্ধনশীল, মাঝারি ধরনের, কান্ড শক্ত ও হালকা বেগুনী। পাতা একটু বড় ও হালকা সবুজ। আলু ডিম্বাকারi ত্বক মসৃণ ও হালকা হলুদ বর্ণের। জীবনকাল ৯০-৯৫ দিন। সারা দেশেই চাষবাদ করা যায়। মোজাইক ভাইরাস রোগ অনেকটা প্রতিরোধী।

২৫-৩০

১২.

বারি আলু-১৭ (রাজা)

গাছ মাঝারি ধরনের, কান্ড শক্ত, খাড়া ও বেগুনী। পাতা মাঝারি ও গাঢ় সবুজ। আলু ডিম্বাকার ও মাঝারি  ধরনের, ত্বক মসৃণ ও উজ্জল  লাল বর্ণের। শাঁস হালকা হলুদ বর্ণের। জীবনকাল ৯০-৯৫ দিন।  জাতটি সারা দেশেই চাষ করা যায়। আলু আঠালো ও খেতে সুস্বাদু|  

২৫-৩০

১৩.

বারিআলু-১৮(বারাকা)

গাছ খুব সবল ও মোটা। কান্ডের সংখ্যা কম কিন্তু লম্বা পাতা ঘন ও গাঢ় সবুজ। আলু ডিম্বাকার থেকে লম্বা ডিম্বাকার এবং মাঝারি থেকে বড় আকৃতির। জীবনকাল ৯০-৯৫ দিন। জাতটি সারা দেশেই চাষ করা যায়। মোজাইক, পাতা মোড়ানো ভাইরাস রোগ, মড়ক রোগ প্রতিরোধক্ষম।

২০-২৫

১৪.

বারিআলু-১৯ (বিন্টজে)

গাছ দ্রুত বর্ধনশীল, সবল এবং কান্ড শক্ত। পাতা বড় ও গাঢ় সবুজ। আলু ডিম্বাকার, মাঝারি আকৃতির, ত্বক মসৃণ ও হালকা হলুদে। ভাইরাস এ জনিত মোজাইক প্রতিরোধক্ষম। জীবনকাল ৯০-৯৫ দিন। 

২০-২৫

১৫

বারি আলু-২০ (জারলা)

কান্ড শক্ত ও মধ্যম আকৃতির। পাতা কিছুটা বড় ও হালকা সবুজ। আলু ডিম্বাকৃতি থেকে লম্বা ডিম্বাকৃতি| ত্বক মসৃণ ও হালকা হলুদে। জীবনকাল ৮৫-৯০ দিন।

২৫-৩৫




সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বারি উদ্ভাবিত আলুর ০২টি জাত ছাড়করণ:

(ক) বারি আলু-৫৬: জাতটি কন্দাল ফসল। এ জাতের গড় ফলন ৩৫.৭২ টন/হেঃ। জীবনকাল ৯০-৯৫ দিন। আলুর আকার খাটো ডিম্বাকৃতি থেকে মধ্যম আকারের। জাতটি কমন স্কেব রোগ প্রতিরোধী।
 

(খ) বারি আলু-৫৭: জাতটি কন্দাল ফসল এ জাতের গড় ফলন ৩৭.৩৯ টন/হেঃ। জীবনকাল ৯০-৯৫ দিন। আলুর আকার খাটো ডিম্বাকৃতি থেকে মধ্যম আকারের। জাতটি লেইট ব্লাইট রোগ প্রতিরোধী।