রামনিবাস আগরওয়ালা ১৯৪৯ সালে ১৫ই নভেম্বর ডোমারে আগরওয়ালা পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি ক্ষুদ্র ব্যবসার পাশাপাশি মা মাটির কথা চিন্তা করে জৈব সার তৈরির কার্যক্রম হাতে নেন। এর ধারাবাহিকতায় তিনি ১৯৯৫ সালে বিভিন্ন জৈব বর্জ্য যেমনঃ গোবর, কচুরীপানা, খড়, হাড়চূর্ণ, শিঁং চূর্ন, কাঠের গুড়া, হাসঁ-মুরগীর বিষ্ঠা, গৃহস্থালী আর্বজনা ইত্যাদি পচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উন্নতমানের পরিবেশ বান্ধব জৈব সার উৎপাদন নিয়ে গবেষণা করেন এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে এর উপকারিতা যাচাই করতঃ প্রদর্শনী স্থাপন করেন। তিনি প্রথম ১৯৯৮-১৯৯৯ সালে টঝঅওউ ঝঁঢ়ঢ়ড়ৎঃবফ চৎড়লবপঃ অঞউচ-ওঋউঈ এর খঙএঙ ব্যবহার করার অনুমুতি পেয়ে বানিজ্যিক ভাবে সীমিত পরিসরে বাজারজাত শুরু করেন ( সংযুক্ত অনুমুতি পত্র)। এর পরবর্তীতে ব্যবহার চাহিদা বেশি হওয়ায় “সার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ১৯৯৯” প্রণীত হলে জৈব সার বানিজ্যিক ভাবে উৎপাদন ও বাজারজাত করনের জন্য বাংলাদেশে প্রথম গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি অনুমোদন লাভ করেন। ২০০৩-২০০৪ইং সালে তার উদ্ভাবিত জৈব সার লালমনিরহাট অঞ্চলে ভূট্ট্রা চাষাবাদ সম্প্রসারণে ব্যবহার করা হয় এবং সাধারণ কৃষকেরা এর উপকারিতা বুঝতে পারে। যার ফলাফল সরুপ ২০০৫ সালে সুইজারল্যান্ড সরকারের রাষ্ট্রদূত ড. ডোরা রেপল্ড অন্নপূর্ণা জৈব সার উৎপাদন প্রক্রিয়া পরিদর্শন করে প্রশংসা করেন। অন্নপূর্ণা জৈব সারই বাংলাদেশের প্রথম ২০০৬ ইং সালে “সার (ব্যবস্থাপনা) আইন ২০০৬” প্রণীত হলে এর আওতায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামার বাড়ি এর নিবন্ধন লাভ করেন। ২০০৮ সালে রাসায়নিক সারের উচ্চ মূল্য ও ঘাটতির সময়ে তিনি অত্র অঞ্চলে জৈব সার সরবরাহের মাধ্যমে কৃষকদের বিকল্প পন্থায় চাষাবাদের সুযোগের চেষ্ঠা করেন। যার ফলশ্রুতিতে তৎকালীন গনপ্রজাতন্তী বাংলদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কৃষি বিষয়ক উপদেষ্ঠা ড.সি.এস করিম উক্ত অন্নপূর্ণা জৈব সার উৎপাদন প্রক্রিয়া পরির্দশনে আসেন এবং এর সম্প্রসারণের কথা বলেন। ২০১৬ সাল পযর্ন্ত তিনি রংপুর অঞ্চলের প্রায় ৩০টি উপজেলার কৃষকের মাঝে ৬০০ এর বেশি স্থানে জৈব সারের ব্যবহার বৃদ্ধি কল্পে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক নাটিকা প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেন। যার ফলশ্রুতিতে এ অঞ্চলে জৈব সারের ব্যবহার পূর্বের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বিগত ২০১০-২০১৬ ইং সাল পযর্ন্ত কৃষিবিভাগের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৩০০ এর অধিক প্রান্তিক চাষীকে কেচোসার তৈরির সর্বশেষ প্লাস্টিকবেড উপকরণ সরবরাহ করেন এবং তাঁদের উৎপাদিত জৈবসার চুক্তিবদ্ধ মূল্যে ক্রয় করে বাজারজাতকরণে সহায়তা করেন। তাদের উদ্ভাবিত জৈব সারে গাছের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সবগুলো খাদ্য উপাদান বিদ্যমান। রাসায়নিক বিশ্লেষন প্রাপ্ত মূখ্য, গৌণ উপাদান ও জৈব পদার্থের মূল্য বিদেশ থেকে আমদানিকৃত রাসায়নিক সারের বাজার মূল্যের তুলনায় অনেক কম। এক্ষেত্রে ১০০ কেজি জৈব সার হতে প্রাপ্ত গুণাগুণের আনুমানিক মূল্য দাড়ায় প্রায় ২১৮৫/- অথচ কৃষক পর্যায়ে এই জৈব সার সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র ৯০০/- টাকায়। ১৯৯৭ সাল থেকে শুরু করে অদ্যাবধি কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের দুই জন মহাপরিচালক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালায়, ময়মনসিংহ এর উপাচার্য ও বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপকবৃন্দ, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ ও বিভিন্ন বিভাগের সরকারী, বেসরকারী গবেষনা প্রতিষ্ঠান, এনজিও, বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের উর্দ্ধতন অনেক কর্মকর্তারা অন্নপূর্ণা জৈব সারের উৎপাদন প্রক্রিয়া পরিদর্শনে এসেছেন এবং বহুল প্রশংসা করেন। রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন উপজেলার সাধারন কৃষকরাসহ সরকারী-বেসরকারী অনেক কৃষি পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যেমন ,বারি ুব্রি, বিএডিসি, বিটিরআই, ব্র্যাক, ফেরদৌস বায়োটেক,স্বরুপ এগ্রিকালচার, টি স্টেট সমূহ ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আইএপিপি প্রজেক্ট এ সার ব্যবহার করে কৃষিতে উৎপাদনে আশানুরুপ ফল পায় এবং এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বিষয়ে চ্যানেল আই হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠান সহ বাংলাদেশের প্রায় সব কটি জাতীয় সংবাদপত্রে তার কাজের প্রকাশ পেয়েছে। তিনি তার এ অবদানের জন্য গত ১৭ জুলাই ২০১৭ ইং তারিখে পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণে বিশেষ অবদান রাখায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২১স্বর্ণ পদক লাভ করেন এবং গত১৪ই ফেব্রুয়ারী ২০১৮ইং তারিখে পরিবেশ বান্ধব জৈব সার উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণে বিশেষ অবদান রাখায় মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের কাছে থেকে কেআইবি কৃষি পদক লাভ করেন। এই পুরুস্কার প্রাপ্তির পরবর্তীতে অনেক কৃষি বিজ্ঞানী তার প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে প্রশংসা করেছেন । নীলফামারী জেলা সহ সারা দেশের জন্য রামনিবাস আগরওয়ালা ও তার প্রতিষ্ঠান অন্নপূর্ণা এগ্রো সার্ভিস একটি মডেল স্বরুপ। ১৯৯৫ সালে তার উৎপাদন ছিল প্রায় ১০-১৫ টন যা বর্তমানে ১,০০০ টনে উন্নতি হয়েছে। তার উৎপাদন খরচ প্রতি কেজি ৬.৫০ টাকা এবং বিক্রয় প্রতি কেজি ৭.০০ টাকা। তিনি বছরে ৫,০০,০০০ টাকা এই জৈব সার উৎপাদন ও বিক্রয় করে লাভ করেন।
মো: হাসিনুর রহমান, কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার, ডোমার, নীলফামারী
উত্তর সমূহ