উত্তর সমূহ

  1. সৈয়দা সিফাত জাহান, উপজেলা কৃষি অফিসার, কালীগঞ্জ, লালমনিরহাট

    নারিকেল তেলে বিদ্যমান উপাদানগুলোর ৯০%-ই সম্পৃক্ত চর্বি। মনো ও পলি ধরনের অসম্পৃক্ত চর্বি, ভিটামিন ‘ই’ ভিটামিন’ ‘কে’ এবং আয়রন সামান্য পরিমাণে বিদ্যমান। সম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ বেশি হওয়ায় কিছুদিন আগেও এ ভুল ধারণা পোষণ করা হতো যে, নারিকেল তেল হৃদরোগের আশংকা বাড়িয়ে তোলে। পরবর্তীতে গবেষণায় দেখা গেছে যে নারিকেল তেল হৃৎপিণ্ডের জন্য ক্ষতিকারক তো নয়ই বরং যথেষ্ট উপকারী। কারণ নারিকেল তেলে বিদ্যমান সম্পৃক্ত চর্বির প্রায় ৫০%-ই কার্বন-১২ জাতীয় ‘লরিক এসিড’ সমৃদ্ধ। অন্যান্য তেলের তুলনায় নারিকেল তেলে এ উপাদানটির পরিমাণ বেশি হওয়ার ফলে এর দ্বারা হৃৎপিণ্ডের ধমনি সরু হয়ে যাওয়াজনিত সমস্যা কম হয়। উপরন্তু এটি ভালো কলস্টেরলের (এইচডিএল) পরিমাণ বৃদ্ধি করে হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য সুফল বয়ে আনে। তাছাড়া ‘লরিক এসিড’ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও অবদান রাখে এবং রজঃনিবৃত্ত-পূর্ব সময়কালে মহিলাদের ‘লিপিড প্রোফাইল’ স্বাস্থ্য-সম্মত পর্যায়ে ধরে রাখতে সাহায্য করে যা হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশংকা হ্রাস করে। ‘লরিক এসিড’ ছাড়াও নারকের তেলে আছে ‘ক্যাপরিক এসিড’, ক্যাপরিলিক এসিড’ ইত্যাদি জীবাণুনাশক বিভিন্ন উপাদান যা শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তোলে। গবেষণায় দেখা গেছে যে মানুষের শরীর ‘লরিক এসিড’কে ‘মনোলরিন’-এ রূপান্তরিত করে ফেলে যা ‘হারপিস, ‘ইনফ্লুয়েনজা’ এমনকি ‘এইচআইভি’-র সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া দমনে কার্যকর। নারিকেল তেল হজমশক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। তেলে বিদ্যমান সম্পৃক্ত চর্বির অণুজীব এবং জীবাণুনাশক ক্ষমতা থাকায় বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া যেমন; ‘লিসটারিয়া মনোসাইটোজেনস্’, ‘হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি’ এবং ‘জিয়ারডিয়া লামব্লিয়া’ ইত্যাদির বিরুদ্ধাচরণ করে বদহজম, ‘আইবিএস’সহ পাকস্থলী এবং পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা দূর করতে সাহায্য করে। ‘ইস্ট’-এর অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধিজনিত রোগ ‘ক্যানডিডায়াসিস’ রোধেও এটি কার্যকর ভূমিকা রাখে। এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং ইনসুলিন নিঃসরণের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। রক্তের মধ্যস্থ শর্করার সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। তেলটি থাইরয়েডসহ অন্যান্য হরমোন নিঃসরণ তন্ত্রগুলোর কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং সহজপাচ্য হওয়ায় সরাসরি যকৃতে প্রবেশ করে শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তির যোগান দিতে পারে। কিডনি এবং পিত্তথলির অসুস্থতা নিয়ন্ত্রণেও এটি সাহায্য করে। তেলটি শরীর কর্তৃক বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, উপকারী খনিজ এবং পুষ্টি উপাদান শোষণে সাহায্য করে। এগুলোর মধ্যে ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় হওয়ায় তেলটি হাড়ের জন্যও উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে নারিকেল তেলে বিদ্যমান স্বল্প এবং মধ্যম শৃংখলবিশিষ্ট ফ্যাটি এসিড শরীরের ওজন বৃদ্ধিতে বাধা দেয় এবং মহিলাদের পেটের মেদ কমতে সাহায্য করে। তদুপরি এটি অগ্নাশয়ের উপরস্থ চাপ কমিয়ে এনে শরীরের বিপাকীয় হার বৃদ্ধি করে শক্তি পোড়ানোর পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় এবং স্থূলতা রোধে সাহায্য করে। এই কারণেই গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষের মধ্যে স্থূলতার প্রবণতা কম হতে দেখা যায়। নারিকেল তেল উৎকৃষ্ট অঙ্গসংবাহনকারক (ম্যাসাজ বা মালিশ প্রক্রিয়া) এবং শুষ্ক ত্বকসহ যে কোনো ধরনের ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখার উপযোগী একটি উপাদান। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টজাতীয় বৈশিষ্ট্যের কারণে কোনো ধরনের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ছাড়াই এটি ত্বকের শুষ্কতা রোধ করে এবং ত্বকের বার্ধক্যজণিত কুঞ্চন ও ঝুলে পড়া বিলম্বিত করতে সাহায্য করে। ত্বকের প্রদাহজনিত সমস্যা, সোরিয়াসিস এবং একজিমার ক্ষেত্রেও এটি উপকারী। নারিকেল তেল চুলে আমিষের পরিমাণ হ্রাস পাওয়া রোধে কার্যকর। এটি চুলের শুষ্কতা দূর করতে, খুসকিমুক্ত রাখতে, নতুন চুল গজাতে এবং চুলকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে তুলতে সাহায্য করে। তেলটির স্নিগ্ধতাজনিত বৈশিষ্ট্য মানসিক চাপ প্রশমনে ভূমিকা রাখে। মাথার তালুতে আস্তে আস্তে মালিশ করলে অবসন্নতা অনেকটাই লাঘব হয়। সম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ বেশি হওয়ায় এটি আস্তে আস্তে জারিত হয় এবং ২৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় প্রায় ছয় মাস পর্যন্ত পচন ছাড়া সংরক্ষণ করা যায়। প্রতিদিন ১ থেকে ২ টেবিল চামচ নারিকেল তেল খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত বলে গণ্য করা হয়