ড্রাগন ফলের চাষাবাদ ব্যবস্থাপনা কী?


উত্তর সমূহ

  1. সৈয়দা সিফাত জাহান, উপজেলা কৃষি অফিসার, কালীগঞ্জ, লালমনিরহাট

    এ ফলটির জন্য শুষ্ক ট্রপিক্যাল জলবায়ু প্রয়োজন। মধ্যম বৃষ্টিপাত এ ফলের জন্য ভালো। উপযুক্ত বৃষ্টিপাত ৬০০-১৩০০ মি.মি. ও তাপমাত্রা ৩৮-৪০° সে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে ফুল ঝরে পরে এবং ফলের পচন দেখা দেয়। ফলে যেখানে পানি জমে না এমন উঁচু জমিতে এ ফলটি সঠিকভাবে চাষ করা যায়। তবে ক্যাক্টাসের মতো  এ ফলটি শুষ্কুতা সহ্য করতে পারে না। উচ্চ জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ বেলে-দোঁয়াশ মাটিতে এ ফল চাষের জন্য উত্তম। তবে অবশ্যই পানি সেচ ও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।জাতঃ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সফলভাবে চাষ করার জন্য

    • লাল ড্রাগন ফল (লাল ফ্লেশ ও লাল চামড়া যুক্ত)
    • হলুদ ড্রাগন ফল (হলুদ চামড়া ও সাদা ফ্লেশশযুক্ত)
    • লাল ড্রাগন ফল (লাল চামড়া ও সাদা ফ্লেশশযুক্ত)
    • কালচে লাল ড্রাগন ফল (কালো ফ্লেশশযুক্ত ও কালচে চামড়া যুক্ত)।
    ফলঃ গোলাকার থেকে ডিম্বাকার উজ্জ্বল গোলাপী থেকে লাল রংয়ের ফল। যার ওজন ২০০-৭০০ গ্রাম। এ ফল গুলো ৭-১০- সে.মি. চওড়া এবং ৮-১৪ সে.মি. লম্বা হয়। ভিতরের পাল্প সাদা, লাল, হলুদ ও কালো রংয়ের হয়। পাল্পের মধ্যে ছোট ছোট কালো নরম অনেক বীজ থাকে। এই বীজগুলো দাঁতের নীচে পড়লে সহজেই গলে যায়। এ ফলগুলো হালকা মিষ্টি-মিষ্টি। এর মিষ্টতা (টি.এস.এস./ব্রিক্স ১৬-২৪%) । ফলগুলো দেখতে ড্রাগনের চোখের মত রং ও আকার ধারন করে। ফলটির সামনের শেষের দিকে হালকা গর্তের মতো থাকে। এ ফলের চামাড়ার উপরে আনারসের মতো স্কেল থাকে।দুরত্ব ও রোপনঃ গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৩ মি এবং সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩ মি. দিয়ে হেক্সাগোনাল পদ্ধতি ব্যবহার করে  এ গাছ লাগানো উত্তম। তবে অবস্থাভেদে দূরত্ব কম বা বেশি দেওয়া যেতে পারে। গাছ লাগানোর সময ৫০-৭০ ঘন সে.মি. আকারের গর্ত করে, পুরোগর্তের ২/৩ ভাগ পঁচা গোবর দিয়ে ভালোভাবে মিশায়ে এ গাছ লাগানো ভাল। তবে গোবরের পরিমাণ ও গর্তের আকার কম বা বেশী হতে পারে । ক্যাকটেসি পরিবারের গাছ বিধায় বছরের যে কোন সময়ই লাগানো যায় তবে এপ্রিল-সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে লাগানো ভালো।বংশ বিস্তারঃ এ ফলের বংশ বিস্তার অত্যান্ত সহজ। বীজ দিয়েও বংশ বিস্তার করা যেতে পারে। তবে এতে ফল ধরতে একটু বেশি সময় লাগে। সেজন্য কাটিং এর মাধ্যমে বংশ বিস্তার করাই উত্তম। কাটিং এর সফলতার হার প্রায় শতভাগ এবং ফলও তাড়াতাড়ি ধরে। কাটিংকৃত একটি গাছ থেকে ফল ধরতে ১৮-২৪ মাস সময় লাগে।রোগ বালাই ও পোকা-মাকড়ঃ এ ফলে রোগ বালাই খুবই একটা চোখে পড়ে না। তবে মূল পচা, কান্ড ও গোড়া পচা রোগ দেখা যায়।মূল পচাঃ অতিরিক্ত পানি জমে গেলে মূল পচে যায়। তবে এ থেকে পরিত্রান পেতে হলে উঁচু জমিতে এ ফলের চাষ করা ভাল। এ রোগটি ছত্রাকের আক্রমণে হয়ে থাকে।কান্ড ও গোড়া পঁচা রোগঃ ছত্রাক অথবা ব্যাকটিরিয়া দ্বারা এ রোগ হতে পারে। এ রোগ হলে গাছের কান্ডে প্রথমে হলুদ রং এবং পরে কালো রং ধারণ করে এবং পরবতীতে ঐ অংশে পচন শুরু হয় এবং পঁচার পরিমান বাড়তে থাকে। এ রোগ দমনের জন্য যে কোন ছত্রাক নাশক (বেভিস্টিন, রিদোমিল, থিওভিট) ইত্যাদি প্রয়োগ করে সহজেই দমন করা যায়।পোকা-মাকড়ঃ পোকা-মাকড় খুব একটা চোখে পড়ে না, তবে মাঝে মাঝে এফিড ও মিলি বাগের আক্রমণ দেখা যায়। বাচ্চা ও পূর্ণ বয়স্ক পোকা গাছের কচি শাখা ও পাতার রস চুষে খায়, ফলে আক্রান্ত গাছের কচি শাখা ও ডগার রং ফ্যাকাশে হয়ে যায় ও গাছ দূর্বল হয়ে পড়ে।এ পোকা ডগার উপর আঠালো রসের মতো মল ত্যাগ করে ফলে শুটিমোল্ড নামক কালো ছত্রাক রোগের সৃষ্টি হয়।  এতে গাছের খাদ্য তৈরিতে ব্যহত হয়। ফলে ফুল ও ফল ধারন কমে যায়। এ পোকা দমনের জন্য যে কোন কীটনাশক যেমন সুমিথিয়ন/ডেসিস/ম্যালাথিয়ন ইত্যাদি প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২৫ মি.লি./৫ক্যাপ ভালভাবে মিশিয়ে স্প্রে করে সহজেই এ রোগ দমন করা যায়।ফলনঃ দেড় থেকে দুই বছর বয়সের একটি গাছে ৫-২০টি ফল পাওয়া যায় কিন্তু পূর্ণ বয়স্ক একটি গাছে ২৫-১০০টি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায় । হেক্টর প্রতি  ফলন ২০-২৫ টন।