ছাদ বাগানকে কেতাবি ভাষায় যেমন কোনো সংজ্ঞায়
নির্ধারিত করা যায়নি তেমনি এর কোনো সুনির্দিষ্ট মডেল এদেশে এখন পর্যন্ত গড়ে
উঠেনি। পাকা বাড়ির খালি ছাদে অথবা বেলকনিতে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ফুল, ফল,
শাকসবজির বাগান গড়ে তোলাকে ছাদে বাগান বলা হয়। বাড়ির মালিক তাদের আপন আপন
উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখে আপন ভাবনায় ভঙ্গিমায় সাজিয়ে তুলেন তাদের ছাদকে।
এখানে টবে, বড় বড় ড্রাম কিংবা ট্রেতে রোপণ করা হয় নানা ফুল, ফল ও সবজি। কেউ
কেউ আবার ছাদে স্থায়ী কাঠামো নির্মাণ করে তাতে গাছ রোপণ করেন। ছাদের আকার ও
সহনশীলতার দিকে লক্ষ্য রেখে নানা কাঠামোর ওপর স্থাপন করেন টব, মাচা। তবে
এলোমেলো ও অপরিকল্পিত ছাদ বাগান কেবল সময়, অর্থ অপচয় করায় না। সেই সাথে
ভবনেরও নানা ক্ষতি করে। তাই কিছু মৌলিক বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে ছাদ বাগান
গড়ে তোলা প্রয়োজন।
ছাদে বাগান করার সময় প্রথমেই ছাদের আয়তন অনুসারে কাগজে কলমে খসড়া ম্যাপ করে
বিভিন্ন স্থাপনা ও ভবনের কলামগুলো চিহ্নিত করে নিতে হবে। এটি অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ কারণ চাহিদা ও রুচি অনুসারে সাজানো না হলে এর পুনর্বিন্যাস
অত্যন্ত শ্রম সাধ্য একটি কাজ। বড় বা ভারি গাছ গুলো ছাদের বিম বা কলামের
নিকটবর্তী স্থান বরাবর স্থাপন করতে হবে। ছাদ যেন ড্যাম্প বা স্যাঁতসেঁতে
হতে না পারে সে জন্য রিং বা ইটের ওপর ড্রাম অথবা টবগুলো স্থাপন করলে নিচ
দিয়ে আলো বাতাস চলাচল করবে এবং ছাদও ড্যাম্প হতে রক্ষা পাবে। নেট
ফিনিশিংয়ের মাধ্যমেও ছাদকে ড্যাম্প প্রতিরোধ করা যায়।
চাহিদা অনুসারে হাফ ড্রাম, সিমেন্ট বা মাটির টব, স্টিল বা প্লাস্টিক ট্রে
সংগ্রহ করতে হবে। অনেক সময় বসতবাড়ির ভাঙা চোরা বালতি, অব্যবহৃত তেলের বোতলও
ছোটখাটো গাছ রোপণের জন্য ব্যবহার করা হয়। ঠিকমতো উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে এসব
অব্যবহৃত জিনিস বাগানে ব্যবহার করা গেলে এও হতে পারে এক নতুন নান্দনিকতা।
ছাদের সুবিধা মতো স্থানে স্থায়ী বেড (ছাদ ও বেডে মাঝে ফাঁকা রাখতে হবে)
স্থাপন করা যেতে পারে। এসব বেডে মূলত সবজি, শাক চাষ করা যায়। চাইলে লাগানো
যায় ফুলগাছ। স্থায়ী বেড বানাতে না চাইলে পুরনো চৌবাচ্চা বা জাহাজের লাইফ
বোট রাখার বয়ার খোলও অনেক জায়গায় বেড হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
যেহেতু ছাদ বাগান স্বল্প পরিসরে গড়ে তোলা হয় কাজেই এর যতœ আত্তির দিকে সব
সময় নজর রাখা আবশ্যক। সে জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি প্রথমেই সংগ্রহ করে
নিতে হবে। এসব যন্ত্রপাতির মধ্যে আছেন সিকেচার, কোদাল, কাচি, ঝরনা, বালতি,
করাত, খুরপি, স্প্রে মেশিন এসব। চারা রোপণের আগে চারার উচ্চতা, শিকড়ের
প্রকৃতি, সহিষ্ণুতা এসব জিনিসের প্রতি নজর রাখতে হবে। সব চারা ও গাছ ছাদ
বাগানের জন্য উপযুক্ত না।
অনেকের বাড়ির ছাদেই রয়েছে বিভিন্ন ফুলের বাগান। অনেকের আবার রয়েছে ফলের
বাগান। বাগানগুলো বিভিন্ন ধরনের হলেও এবার বাগানের একটি নতুন মডেল তৈরি
করা হয়েছে। যার নাম ‘নিবিড় ছাদ-বাগান’।
বাগানটি তৈরি করা হয়েছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রিকালচারাল
বোটানি বিভাগের ছাদে। যেখানে বাগানের মোট ক্ষেত্রফলের সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ
রাস্তা, ১০ শতাংশ বসার জায়গা, ৪০ শতাংশ শাক-সবজি, ১০ শতাংশ ফুল ও শোভাবর্ধক
গাছ, ২০ শতাংশ ফল, মসলা ও ওষুধি এবং ৫ শতাংশ অন্যান্য গাছের জন্য বিবেচনায়
রেখে বাগানের মডেল প্রস্তুত করা হয়েছে।
এ মডেলের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- অধিক জীববৈচিত্র্য, দৃশ্যত খুবই আকর্ষণীয়,
বিনোদন ও খাদ্য উৎপাদনের জায়গা হিসেবে ব্যবহার হয়। বাগানে গিয়ে দেখা গেছে,
কাঁচা-পাকা বড় টবে অমৃত সাগর কলা। কয়েকটি গাছে ডালিম আর পেঁপে দেখা গেল।
পাশেই রয়েছে কয়লা গাছের মাচা, লেবু, আমলকি, বেগুন, পালংশাক, লালশাক, ডাটাসহ
বিভিন্ন সবজির গাছ। অন্য পাশে পেয়ারা, পেঁপে, স্ট্রবেরি, আম, লেবু, ডালিম,
কামরাঙ্গা, ড্রাগন ফ্রুট, আঙ্গুর, কমলা, আনারস, জামরুল, লিচু, করমচা, বরই,
জাম্বুরা, জলপাইসহ কয়েকটি দেশ-বিদেশি ফলের গাছ। রয়েছে পাট গাছ। ফল ও সবজির
গাছগুলোর মধ্য কোনো গাছে ফুল এসেছে আবার কোনটাতে ফল ধরেছে। পুরো ছাদজুড়ে
যেন সবুজের সমারোহ। ছাদে এক পাশে রয়েছে- রেইন ওয়াটার হারভেস্ট প্ল্যান্ট।
বাগানের শেষ প্রান্তে বাঁশের খুঁটি অবলম্বন করে কিছু পিভিসি পাইপ স্তরে
স্তরে সাজিয়ে মাল্টি লেয়ার হাইড্রোফনিক্স পদ্ধতিতে চাষ করা হচ্ছে-
ক্যাপসিকাম, চাইনিজ বাঁধাকপি, টমেটো, লেটুস।
উত্তর সমূহ
ছাদ বাগানকে কেতাবি ভাষায় যেমন কোনো সংজ্ঞায় নির্ধারিত করা যায়নি তেমনি এর কোনো সুনির্দিষ্ট মডেল এদেশে এখন পর্যন্ত গড়ে উঠেনি। পাকা বাড়ির খালি ছাদে অথবা বেলকনিতে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ফুল, ফল, শাকসবজির বাগান গড়ে তোলাকে ছাদে বাগান বলা হয়। বাড়ির মালিক তাদের আপন আপন উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখে আপন ভাবনায় ভঙ্গিমায় সাজিয়ে তুলেন তাদের ছাদকে। এখানে টবে, বড় বড় ড্রাম কিংবা ট্রেতে রোপণ করা হয় নানা ফুল, ফল ও সবজি। কেউ কেউ আবার ছাদে স্থায়ী কাঠামো নির্মাণ করে তাতে গাছ রোপণ করেন। ছাদের আকার ও সহনশীলতার দিকে লক্ষ্য রেখে নানা কাঠামোর ওপর স্থাপন করেন টব, মাচা। তবে এলোমেলো ও অপরিকল্পিত ছাদ বাগান কেবল সময়, অর্থ অপচয় করায় না। সেই সাথে ভবনেরও নানা ক্ষতি করে। তাই কিছু মৌলিক বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে ছাদ বাগান গড়ে তোলা প্রয়োজন। ছাদে বাগান করার সময় প্রথমেই ছাদের আয়তন অনুসারে কাগজে কলমে খসড়া ম্যাপ করে বিভিন্ন স্থাপনা ও ভবনের কলামগুলো চিহ্নিত করে নিতে হবে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ চাহিদা ও রুচি অনুসারে সাজানো না হলে এর পুনর্বিন্যাস অত্যন্ত শ্রম সাধ্য একটি কাজ। বড় বা ভারি গাছ গুলো ছাদের বিম বা কলামের নিকটবর্তী স্থান বরাবর স্থাপন করতে হবে। ছাদ যেন ড্যাম্প বা স্যাঁতসেঁতে হতে না পারে সে জন্য রিং বা ইটের ওপর ড্রাম অথবা টবগুলো স্থাপন করলে নিচ দিয়ে আলো বাতাস চলাচল করবে এবং ছাদও ড্যাম্প হতে রক্ষা পাবে। নেট ফিনিশিংয়ের মাধ্যমেও ছাদকে ড্যাম্প প্রতিরোধ করা যায়। চাহিদা অনুসারে হাফ ড্রাম, সিমেন্ট বা মাটির টব, স্টিল বা প্লাস্টিক ট্রে সংগ্রহ করতে হবে। অনেক সময় বসতবাড়ির ভাঙা চোরা বালতি, অব্যবহৃত তেলের বোতলও ছোটখাটো গাছ রোপণের জন্য ব্যবহার করা হয়। ঠিকমতো উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে এসব অব্যবহৃত জিনিস বাগানে ব্যবহার করা গেলে এও হতে পারে এক নতুন নান্দনিকতা। ছাদের সুবিধা মতো স্থানে স্থায়ী বেড (ছাদ ও বেডে মাঝে ফাঁকা রাখতে হবে) স্থাপন করা যেতে পারে। এসব বেডে মূলত সবজি, শাক চাষ করা যায়। চাইলে লাগানো যায় ফুলগাছ। স্থায়ী বেড বানাতে না চাইলে পুরনো চৌবাচ্চা বা জাহাজের লাইফ বোট রাখার বয়ার খোলও অনেক জায়গায় বেড হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যেহেতু ছাদ বাগান স্বল্প পরিসরে গড়ে তোলা হয় কাজেই এর যতœ আত্তির দিকে সব সময় নজর রাখা আবশ্যক। সে জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি প্রথমেই সংগ্রহ করে নিতে হবে। এসব যন্ত্রপাতির মধ্যে আছেন সিকেচার, কোদাল, কাচি, ঝরনা, বালতি, করাত, খুরপি, স্প্রে মেশিন এসব। চারা রোপণের আগে চারার উচ্চতা, শিকড়ের প্রকৃতি, সহিষ্ণুতা এসব জিনিসের প্রতি নজর রাখতে হবে। সব চারা ও গাছ ছাদ বাগানের জন্য উপযুক্ত না।
অনেকের বাড়ির ছাদেই রয়েছে বিভিন্ন ফুলের বাগান। অনেকের আবার রয়েছে ফলের বাগান। বাগানগুলো বিভিন্ন ধরনের হলেও এবার বাগানের একটি নতুন মডেল তৈরি করা হয়েছে। যার নাম ‘নিবিড় ছাদ-বাগান’। বাগানটি তৈরি করা হয়েছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রিকালচারাল বোটানি বিভাগের ছাদে। যেখানে বাগানের মোট ক্ষেত্রফলের সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ রাস্তা, ১০ শতাংশ বসার জায়গা, ৪০ শতাংশ শাক-সবজি, ১০ শতাংশ ফুল ও শোভাবর্ধক গাছ, ২০ শতাংশ ফল, মসলা ও ওষুধি এবং ৫ শতাংশ অন্যান্য গাছের জন্য বিবেচনায় রেখে বাগানের মডেল প্রস্তুত করা হয়েছে। এ মডেলের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- অধিক জীববৈচিত্র্য, দৃশ্যত খুবই আকর্ষণীয়, বিনোদন ও খাদ্য উৎপাদনের জায়গা হিসেবে ব্যবহার হয়। বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, কাঁচা-পাকা বড় টবে অমৃত সাগর কলা। কয়েকটি গাছে ডালিম আর পেঁপে দেখা গেল। পাশেই রয়েছে কয়লা গাছের মাচা, লেবু, আমলকি, বেগুন, পালংশাক, লালশাক, ডাটাসহ বিভিন্ন সবজির গাছ। অন্য পাশে পেয়ারা, পেঁপে, স্ট্রবেরি, আম, লেবু, ডালিম, কামরাঙ্গা, ড্রাগন ফ্রুট, আঙ্গুর, কমলা, আনারস, জামরুল, লিচু, করমচা, বরই, জাম্বুরা, জলপাইসহ কয়েকটি দেশ-বিদেশি ফলের গাছ। রয়েছে পাট গাছ। ফল ও সবজির গাছগুলোর মধ্য কোনো গাছে ফুল এসেছে আবার কোনটাতে ফল ধরেছে। পুরো ছাদজুড়ে যেন সবুজের সমারোহ। ছাদে এক পাশে রয়েছে- রেইন ওয়াটার হারভেস্ট প্ল্যান্ট। বাগানের শেষ প্রান্তে বাঁশের খুঁটি অবলম্বন করে কিছু পিভিসি পাইপ স্তরে স্তরে সাজিয়ে মাল্টি লেয়ার হাইড্রোফনিক্স পদ্ধতিতে চাষ করা হচ্ছে- ক্যাপসিকাম, চাইনিজ বাঁধাকপি, টমেটো, লেটুস।
উত্তর দিন