ভালমানের আঁশ উৎপাদনের জন্য পাট গাছে ফুলের কুড়ি আসা মাত্রই পাট কাটতে হবে।
কাটার পর
চিকন ও মোটা পাট গাছ আলাদা করে আঁটি বেধে পাতা ঝড়িয়ে গাছের গোড়া ৩ থেকে ৪
দিন এক ফুট পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। পরে পরিস্কার পানিতে জাক দিতে হবে।
জাক দেয়ার
জন্য খুব গভীর পানির দরকার নেই। মাঠে ঘাসের উপর এক ফুট থেকে দেড় ফুট পানি
থাকলে সেখানেও জাক দেয়া যায়। তবে পাট গাছের সংখ্যা বা পরিমাণ অধিক হলে আরও
গভীর পানির দরকার হয় যাতে জাক ডুবতে পারে।
মাঠে ঘাস
থাকলে পাট গাছগুলো মাটির সংস্পর্শে আসে না, ফলে পাটের রং ভাল থাকে। ঘাস না
থাকলে কিছু খড় বিছিয়ে তার উপরও জাক দেয়া যায়। জাকের উপর কচুরী পানা বা খড়
বিছিয়ে দিলে খুব ভাল হয়, তবে কখনই সরাসরি মাটি দিয়ে চাপা দেওয়া যাবে না।
জাক দেয়ার
পর নিয়মিত গাছ পরীক্ষা করে দেখতে হয় যাতে বেশি পঁচে না যায়। আঁশ মাটিতে
বসিয়ে না নিয়ে পানিতে ভাসিয়ে নেয়া ভাল। কেননা তাতে আঁশে মাটি, কাঁকর থাকার
সম্ভাবনা কমে যায়। এরপর পরিস্কার পানিতে ধোয়া দরকার।
পানির অভাব হলে কি করতে হবে-
পানির অভাব দেখা দিলে অথবা জাক দেয়ার জায়গা না থাকলে পাট গাছ না পঁচিয়ে পাট গাছের ছাল পঁচানো যায় এবং এতে পঁচন তাড়াতাড়ি শেষ হয়।
এ জন্য বাঁশের খুটির মাথায় ইংরেজি অক্ষর ইউ এর মত করে কেটে তার মাঝে পাট গাছ রেখে অতি সহজে গাছ থেকে ছাল ছড়ানো সম্ভব।
এরপর চাড়িতে
বা চারকোণা গর্ত করে পাটের ছাল জাক দেয়া যায়। পঁচানোর সময় পঁচন পানিতে যদি
ছালের ওজনের আনুমানিক ৩৭ কেজি ওজনের জন্য ৫ গ্রাম ইউরিয়া সার মিশিয়ে দেয়া
যায় তবে পঁচন আরো তাড়াতাড়ি হয়।
গোড়ার দিকের কালো অংশ বা কাটিংস দূর করার উপায়-
সঠিক
পদ্ধতিতে পাট না পঁচানোর জন্য অথবা পঁচন পানির অভাবজনিত কারণে পাট আঁশ
ছালযুক্ত ও নীচু মানের হলে পাট আঁশের ওজন প্রতি ৩৭ কেজিতে ৫ গ্রাম ইউরিয়া
পানিতে মিশিয়ে আঁশের গোড়ায় ছালযুক্ত স্থানে ছিটিয়ে দিয়ে এক সপ্তাহ পলিথিন
বা ছালা দিয়ে ঢেকে রেখে গোড়ার দিকটা পুনরায় ধুয়ে নিলেই আঁশ ছালমুক্ত হয় এবং
আঁশের মানও ভাল হয়।
ধোয়া আঁশ
কখনই মাটির উপর বিছিয়ে শুকাতে নেই। বাঁশের আড়, রেলিং, ঘরের চাল ইত্যাদিতে
বিছিয়ে শুকানো ভাল। মনে রাখবেন উন্নতমানের আঁশের দাম সর্বোচ্চ এবং সব সময়
এর গ্রাহক থাকে। পক্ষান্তরে নিম্নমানের অতিরিক্ত পঁচানো, কম পঁচানো, রঙ
জলা, কালচে, বাকল, কাঠি লেগে থাকা আঁশের বাজার মূল্য সব সময়ই কম হয়ে থাকে।
১। আমন ধান ক্ষেতে বাদামী গাছ ফড়িং বা বিপিএইচ পোকার আক্রমণ দেখা যাচ্ছে। এ
পোকাকে কোন কোন এলাকায় “গুণগুনি” বা “কারেন্ট পোকা” বলা হয়ে থাকে। এ পোকা
বাচ্ছা ও পূর্ণ বয়স্ক দু’অবস্থায় ধান গাছের গোড়ায় বসে রস চুষে খায়। এর ফলে
গাছ নিস্তেজ হয়ে যায় এবং “ফড়িং পোকা” বা “বাজপোড়া” (হপার বার্ন) অবস্থার
সৃষ্টি হয়। এ পোকার আক্রমণ হলে ধানের ফলন অনেক কমে যায়। সেজন্য এ পোকার
আক্রমণ হওয়ার সাথে সাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। পোকা দমনের জন্যে যে
ব্যবস্থাগুলো নিতে হবে তা হলো:
১) নিয়মিতভাবে গাছের গোড়া ভালভাবে খেয়াল করতে হবে;
২) জমিতে বাদামী গাছ ফড়িং এর সংখ্যা বেড়ে গেলে ক্ষেতের পানি বের করে জমি শুকাতে হবে;
৩) ধান ক্ষেতে দু’হাত পর পর ফাঁড়ি দিয়ে গাছের গোড়ায় রোদ ও আলো বাতাস লাগার ব্যবস্থা করতে হবে;
৪) আইলের আগাছা ও জমিতে খড়কুটা থাকলে তা পরিষ্কার করে দিতে হবে;
৫) ধান ক্ষেতে আলো ফাঁদের ব্যবস্থা করা দরকার। জমিতে হাঁস ছেড়ে দিয়ে ও পোকা দমন করা সম্ভব;
৬) জমিতে পরিমিত মাত্রায় সার ব্যবহার করা প্রয়োজন। উর্বর জমিতে ইউরিয়া সারের উপরি প্রয়োগ কমানো দরকার;
৭) ক্ষেতের ধান শতকরা ৮০ ভাগ পেকে গেলে দেরি না করে কেটে ফেলা ভালো;
৮) আক্রমণ বেশি হলে অনুমোদিত কীটনাশক (মিপসিন, সপসিন, কনফিডর প্রভৃতি
জাতীয় কীটনাশক) সঠিক মাত্রায় গাছের গোড়া থেকে ভালভাবে সেপ্র করা দরকার;০২।
কুইক কম্পোস্ট সার তৈরী প্রণালী
Badal
12:21 AM
Add Comment
প্রযু্ক্তি
কুইক কম্পোস্ট অল্প সময়ে অর্থাৎমাত্র ১৫ দিনে তৈরীও ব্যবহার উপযোগী উচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন একটি জৈব সার। কুইককম্পোস্ট তৈরীর উপাদান - সরিষারখৈল, কাঠের গুঁড়া বাচাউলের কুঁড়া ও অর্ধপঁচা(ডিকম্পোজড) গোবর বা হাঁসমুরগরি বিষ্ঠা যার অনুপাতহবে ১ : ২ : ৪অর্থাৎ একভাগ খৈল + দুইভাগকাঠের/চাউলের কুঁড়া + চারভাগগোবর/হাঁস-মুরগীর বিষ্ঠা।কুইক কম্পোস্ট তৈরীপদ্ধতি· গুঁড়া করা সরিষারখৈল, চাউলের কুঁড়া / কাঠেরগুঁড়া ও ডিকম্পোজড গোবরভালভাবে মিশাতে হবে।· মিশ্রনে পরিমান মত পানিযোগ করে এমনভাবে কাইবানাতে হবে যাতে ঐমিশ্রণ দিযে কম্পোস্ট বলতৈরি করলে ভেঙ্গে যাবেনাকিন্তু ১ মিটার উপরথেকে ছেড়ে দিলে তাভেঙ্গে যাবে।· মিশ্রিত পদার্থগুলো স'প করেএমন ভাবে রেখে দিতেহবে যাতে ভিতরে জলীয়বাষ্প বের হতে নাপারে আর এ কারণেপচনক্রিয়া সহজতর হয়।স'পটির পরিমান ৩০০- ৪০০ কেজির মধ্যে হওয়াভাল। স'পের সমসত্ম উপাদানএকবারে না মিশিয়ে ৩/ ৪ বারে মিশাতে হবে।· শীতকালে স্তুপের উপরে ও চারদিকেচটের বস্তা দিয়ে ঢেকেদিতে হবে। আরবর্ষাকালে বৃষ্টির জন্য পলিথিন সীটব্যবহার করতে হবে এবংবৃষ্টি থেমে গেলে পলিথিনসরিয়ে ফেলতে হবে।· স্তুপ তৈরীর ২৪ঘন্টা পর থেকে স্তুপেরতাপমাত্রা বাড়তে থাকে এবং৪৮-৭২ ঘন্টার মধ্যে৬০-৭০ সেঃ তাপমাত্রায়পৌছায়। অর্থাr স্তুপে তখন আঙ্গুল ঢোকালেঅসহনীয় তাপমাত্রা অনুভূত হবে (৬০-৭০ সেঃ)।যার ফলে সৃষ্ট তাপেমিশ্রিত পদার্থ পুড়ে নষ্টহতে পারে। তাইস্তুপ ভেঙ্গে উলট - পালটকরে ১ ঘন্টা সময়েরজন্য মিশ্রনকে ঠান্ডা করে নিতেহবে এবং পুনরায় পূর্বেরন্যায় স্তুপ করে রাখতেহবে।· এভাবে৪৮-৭২ ঘন্টা পরপর স্তুপ ভেঙ্গে উলট- পালট করতে থাকলে ১৫দিনের মধ্যে উক্ত উন্নতমিশ্র জৈব সার জমিতেপ্রয়োগের উপযোগী হবে।সার তৈরী হলে তাঝুরঝুরে শুকনা হবে এবংকালো বাদামী বর্ণের হবে।প্রয়োগমাত্রা· জমির উর্বরতা ওফসলভেদে প্রতি শতাংশে প্রায়৬-১০ কেজি কুইককম্পোস্ট সার ব্যবহার করতেহয়। ফসলেরজমি তৈরীর সময়ে প্রতিশতাংশে ৬ কেজি এবংধান চাষের ক্ষেত্রে কুশিপর্যায়ে সেচের পূর্বে ২কেজি করে উপরি প্রয়োগকরা যেতে পারে।· সবজী ফসলের ক্ষেত্রেজমি তৈরীর সময়ে প্রতিশতাংশে ৬ কেজি এবং৪ কেজি সার রিংবা নালা করে সব্জীবেডে উপরি প্রয়োগ করতেহয়। সারপ্রয়োগের পর সেচ দিতেহয়।পুষ্টিমান ওব্যবহারেরউপকারীতাকুইক কম্পোস্ট সারে নাইট্রোজেন - ২.৫৬%, ফসফরাস -০.৯৮%, ও পটাশিয়াম- ০.৭৫% পাওয়া যায়। এছাড়াও ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও কিছু গৌণখাদ্য উপাদান থাকে।( ঢা.বি. ল্যাব ১৯৯৯)কুইক কম্পোস্ট সার ব্যবহারের ফলে মাটিতে বাতাস চলাচল বৃদ্ধি পায়, অনুজীবের ক্রিয়া বাড়তে থাকে, ফসলের প্রয়োজনীয় সকল খাদ্য উপাদান সহজলভ্য হয়।ফলে আশানরূপ ফলন পাওয়া যায় এবং গুনগতমানসম্পন্ন কৃষিপণ্য উr পাদন সম্ভব হয়।
কলার ভেলায় ভাসমান বীজতলা : বন্যাকবলিত এলাকায়
যদি বীজতলা করার মতো জায়গা না থাকে এবং বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর চারা
তৈরির প্রয়োজনীয় সময় না থাকে তবে বন্যার পানি, নদী, বিল, পুকুর, ডোবা বা
খালের পানির ওপর কলাগাছ কেটে বাঁশ বা কঞ্চি দিয়ে জোড়া লাগাতে হবে। কলাগাছের
ভেলার ওপর হোগলা বা চাটাই দিয়ে সেখানে মাটির প্রলেপ দিতে হবে। এছাড়া বাঁশ
এবং বাঁশের চাটাইয়ের মাচা অথবা কচুরিপানা দিয়ে তৈরি বেডের ওপর ২-৩
সেন্টিমিটার পরিমাণ পুকুরের তলার কিংবা মাটির পাতলা কাদার প্রলেপ দিয়ে ভেজা
বীজতলা তৈরি করা যায়। এছাড়া ভাসমান বেডের যেখানে শাক সবজির আবাদ করা হতো
সেখানেও আপদকালীন সময়ের জন্য আমন বীজতলা তৈরি করা যায় অনায়াসে। বন্যার
পানিতে যেন ভাসমান বেড যেন ভেসে না যায় সেজন্য ভাসমান বীজতলার বেডকে দড়ির
সাহায্যে খুঁটির সাথে বেঁধে রাখতে হবে। এরপর মাটির আস্তরণের ওপর
অঙ্কুরিত বীজ ছিটিয়ে দিতে হবে এবং ছিটানোর পর সতর্ক থাকতে হবে যেন পাখি বা
অন্য কিছু নষ্ট করতে না পারে। ভাসমান বীজতলার ক্ষেত্রে অন্য স¦াভাবিক
বীজতলার মতোই বীজের হার প্রতি বর্গমিটারে ৮০ থেকে ১০০ গ্রাম হবে। এক্ষেত্রে
এক বিঘা জমি রোপণের জন্য ৩৫ বর্গমিটার বা প্রায় ১ শতক ভাসমান বীজতলা
ব্যবহার করা যেতে পারে। চারার বয়স ২০ থেকে ২৫ দিনের হলে চারা উঠিয়ে মাঠে
রোপণ করা যেতে পারে। এভাবে তৈরি চারা অন্যসব স্বাভাবিক চারার মতোই রোপণ
করতে হবে এবং পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনা অন্য স্বাভাবিক বীজতলার চারার মতোই
হবে। উৎপাদিত চারা অন্য সব স্বাভাবিক চারার মতোই ফলন দেয়। পানিতে ভাসমান
থাকার জন্য এ বীজতলায় সাধারণত সেচের দরকার হয় না, তবে মাঝে মধ্যে প্রয়োজনে
ছিটিয়ে পানি দেয়া যেতে পারে।
ইলন্সিনও ফাউসেটি (Elsinoe fawcetti) নামক এক প্রকার ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।এই রোগে আক্রান্ত সকল ডাল এবং পাতা কেটে পুড়িয়ে ফেলতে
হবে, বর্ষার সময় আসবার আগেই মাটি আলগা করে জিংক সালফেট ও ছাই লেবু গাছের
গোড়ার দিকে প্রয়োগ করতে হবে, বোর্দোমিক্সার এবং ফানজিসাইট বা কুপরাভিট ০.৩%
হারে ২ থেকে ৩ বার লেবু গাছে প্রয়োগ করতে হবে বা স্প্রে করতে হবে।
নাবি ধ্বসা রোগ
এটি একটি ছত্রাকজনিত রোগ। গাছের আক্রান্ত অংশ, বীজ, মাটি ও পানি দ্বারা এ
রোগ বিস্তার লাভ করে। এ রোগের আক্রমণে টমেটো গাছের পাতায় বিভিন্ন আকারের
ভেজা বাদামি বর্ণের দাগ পড়ে। দাগগুলো তাড়াতাড়ি বাড়তে থাকে। পাতা পচে যায়।
শুষ্ক ও আর্দ্র আবহাওয়ায় পাতার পচন দ্রুত বিস্তার লাভ করে। কয়েক দিনের
মধ্যে গাছ মারা যায়। টমেটো ফল আক্রান্ত হলে তাতে ধূসর বর্ণের দাগ পড়ে। ৯১
থেকে ১০০ ভাগ আপেক্ষিক আর্দ্রতা ও ১২ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এ
রোগের ছত্রাক দ্রুত বিস্তার লাভ করে।
দমন ব্যবস্থাপনা
১. ফসলের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
২. নীরোগ বীজ ব্যবহার করতে হবে।
৩. শস্য পর্যায় অনুসরণ করতে হবে।
৪. রোগের লক্ষণ দেখার সঙ্গে সঙ্গে একরোবেট
এমজেড (ম্যানকোজেব+ডাইমেথোমরফ্) ০৪গ্রাম/লিটার বা হেমেনকোজেব বা রিডোমিল
গোল্ড বা ইন্ডোফিল এম-৪৫ বা ডায়থেন এম-৪৫ প্রভৃতি ০৪গ্রাম/লিটার হারে
পানিতে মিশিয়ে ৭ থেকে ১০ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে।
রোগের প্রকোপ বেশি হলে উপরের ছত্রাকনাশকগুলোর সাথে কার্বেন্ডাজিম যেমন- ডিফেন্স ৩৫এসসি বা নোইন বা অটোস্টিন প্রভৃতি মিশাতে হবে।
ইলন্সিনও ফাউসেটি (Elsinoe fawcetti) নামক এক প্রকার ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
লক্ষণ : ১. পাতা, কচি ডাল ও ফলের ওপর পানি ভেজা দাগ দেখা যায়। ২. অনিয়মিত
দাগগুলো পাতা ও ফলের ওপর উঁচু এবং ফোস্কারমতো দাগ মনে হয়। ৩. ফলের ওপর
প্রথমে হলুদ এবং কমলা বা লালচে চকচকে দাগ দেখা যায়। ৪. অনেক ছোট দাগ একত্র
হয়ে খসখসে কর্কের মতো হয়ে যায় ও ফলের বাজারমূল্য কমে যায়।
দমন : ১. রোগাক্রান্ত পাতা, ডালপালা, ফল সংগ্রহ করে পুড়ে ফেলতে হবে। ২.
জিংক সালফেট ও ছাই বর্ষার আগে গাছের গোড়ার মাটি আলগা করে প্রয়োগ করতে হবে।
৩. বোর্দোমিক্সার এবং ফানজিসাইট (যেমন- কুপরাভিট ০.৩ % হারে ২-৩ বার
প্রয়োগ করতে হবে) স্প্রে করতে হবে।
জলবায়ু ও মাটিঃকম
বৃষ্টিবহুল সুনির্দিষ্ট গ্রীষ্ম ও শীতকাল অর্থাৎ শুষ্ক ও উষ্ণ জলবায়ু
মাল্টা চাষের জন্য সবচেয়ে বেশী উপযোগী। বায়ুমণ্ডলের আদ্রতা ও বেশী
বৃষ্টিপাত মাল্টা ফলের গুনাগুণকে প্রভাবিত করে। বাতাসে অধিক আদ্রতা ও
বৃষ্টিপ্রবন এলাকায় মাল্টার খোসা পাতলা হয় এবং ফল বেশী রসালো ও নিন্ম মানের
হয়। শুষ্ক আবহাওয়ায় ফলের মান ও স্বাদ উন্নতমানের হয়। আদ্র জলবায়ুতে রোগ ও
ক্ষতিকর পাকার আক্রমণ বেশী হয়। মাল্টা গাছ আলো পছন্দ করে এবং ছায়ায় বৃদ্ধি ও
ফলের গুণগত মান কমে যায়। সব ধরণের মাটিতে জন্মালেও সুনিষ্কাশিত, উর্বর,
মধ্যম থেকে হালকা দোয়াস মাটি মাল্টা চাষের জন্য উত্তম। মধ্যম অম্ল থেকে
সামান্য ক্ষারীয় মাটিতে মাল্টা জন্মে। তবে ৫.৫ থেকে ৬.৫ (ph) অম্লতায় ভালো
জন্মে। জলাবদ্ধতা মোটেও সহ্য করতে পারেনা এবং উচ্চ তাপ ও লবণের প্রতি
সংবেদনশীল।জাতঃবাংলাদেশের
বাজারে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত সবুজ ও কমলা রঙের মাল্টা বিক্রি করতে দেখা
যায়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট “বারী মাল্টা- ১” নামে ২০০৩ সালে
মাল্টার একটি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে, যে জাতটির পাকা ফল দেখতে সবুজ ও
খেতে সুস্বাদু । জাতটির বৈশিষ্ট নিন্মে দেয়া হলঃ–বারী মাল্টা ১ঃবৈশিষ্ট
— নিয়মিত ফল দানকারী উচ্চ ফলনশীল জাত। গাছ খাটো, ছড়ানো ও ঝোপালো। মধ্য
ফাল্গুন থেকে মধ্য চৈত্র মাস পর্যন্ত গাছে ফুল আসে এবং কার্তিক মাসে ফল
আহরনের উপযোগী হয়। ফল গোলাকার ও মাঝারি (১৫০ গ্রাম) আকৃতির। পাকা ফলের রং
সবুজ। ফলের পুস্প প্রান্তে পয়সা সদৃশ সামান্য নিচু বৃত্ত বিদ্যমান। ফলের
খোসা মধ্যম পুরু ও শাসের সাথে সংযুক্ত। শাস হলুদ ভাব, রসালো, খেতে মিষ্টি ও
সুস্বাদু। গাছ প্রতি ৩০০-৪০০ ফল ধরে। হেক্টর প্রতি ফলন ২০ টন। দেশের সব
অঞ্চলে চাষের উপযোগী।চেনার উপায় —বারি মাল্টা -১ চেনার সহজ উপায় হলো,প্রতিটি ফলের নিচের দিকে পয়সা সদৃশ একটি গোলাকার দাগ স্পষ্ট বিদ্যমান থাকে.মাল্টার
বংশ বিস্তার — বীজ ও কলমের মাধ্যমে মাল্টার বংশ বিস্তার করা যায়। তবে
বীজের চারা আমাদের দেশের মাটি ও আবহাওয়ার সাথে সমন্বয় করে বেশী দিন টিকে
থাকতে পারে না। তাই কলমের মাধ্যমেই চারা তৈরি করা উত্তম। তাছাড়া কলমের তৈরি
চারায় মাতৃ গুন বজায় থাকে ও দ্রুত ফল ধরে। এছাড়া রোগ প্রতিরোধী ও বলিষ্ঠ
শিকড় সমৃদ্ধ আদি জোড়ের মাধ্যমে কলম করলে গাছের জীবনকাল ও ফলন ক্ষমতা বৃদ্ধি
পায়।জোড় কলমঃগ্রাফটিং
এর জন্য প্রথমে রুটস্টক (আদিজোড়া) উৎপাদন করতে হবে। রুটস্টক হিসেবে
বাতাবিলেবু, রাফলেমন, কাটা জামির প্রভৃতি ব্যাবহার হয়। অতপর কাঙ্ক্ষিত মাতৃ
গাছ হতে সায়ন (উপজোড়) সংগ্রহ করে রুটস্টকের উপর স্থাপন করে মাল্টার গাফটিং
তৈরি করা হয়। রুটস্টক হিসেবে এক থেকে দের বসর বয়সের সুস্থ্য, সবল, সোজা,
বাড়ন্ত চারা নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচিত মাতৃগাছ হতে সায়ন তৈরির জন্য
দুটি চোখ সহ ৫/৬ সেমি লম্বা ও ৮/৯ মাস বয়সের ডালা সংগ্রহ করতে হবে। মধ্য
বৈশাখ-মধ্য ভাদ্র (মে- আগস্ট) মাস পর্যন্ত গ্রাফটিং করা যায়। ভিনিয়ার ও
ক্লেফট গ্রাফটিং উভয় পদ্ধতিতে মাল্টার কলম তৈরি করা যায়। সাধারণত কলম করার
১০-১৫ দিনের মধ্যে রুটস্টক ও সায়নের মধ্যে সংযোগ স্থাপন হয় ও সায়নের চোখ
ফুটে কুশি বের হয়।কলম হতে একাধিক ডাল বের হলে সুস্থ্য সবল ও সোজা ভাবে বেড়ে
ওঠা ডালটি রেখে, বাকীগুলো কেটে ফেলতে হবে। আদিজোড়া থেকে বাড়ন্ত কুশি
নিয়মিত কেটে দিতে হবে।জমি নির্বাচন ও প্রস্তত পদ্ধতি :সারাদিন
রোদ পরে ও বৃষ্টির পানি জমে না এমন উচু বা মঝারি উচু জমি মাল্টা চাষের
জন্য নির্বাচন করতে হবে। আগাছা পরিস্কার ও আশেপাশে উচু গাছ থাকলে ডালা
ছেঁটে দিতে হবে।রোপণ পদ্ধতিঃষড়ভুজ
বা বর্গাকার পদ্ধতিতে চারা বা কলম রোপণ করতে হবে। মধ্য বৈশাখ থেকে মধ্য
ভাদ্র ( মে- আগস্ট) মাস রোপণের উত্তম সময়। তবে পানি বা সেচের ব্যাবস্থা
থাকলে সারা বসর রোপণ করা যায়।মাদা তৈরিঃচারা
রোপণের ১৫-২০ দিন পূর্বে উভয় দিকে ৩/৪ মিটার দূরত্বে ৭৫x৭৫x৭৫ সেমি মাপে
গর্ত খুড়তে হবে। প্রতি গর্তে ১৫ কেজি পচা গোবর, ৪/৫ কেজি ছাই, ২৫০গ্রাম
টিএসপি, ২৫০ গ্রাম এমওপি, ৫ গ্রাম বরিক এসিড, ৫০০ গ্রাম চুন মাটির সঙ্গে
মিশিয়ে গর্তে ভরে দিতে হবে। গর্ত ভরাট করার ১০-১৫ দিন পরে চারা রোপণ করতে
হবে।চারা/ কলম রোপণঃগর্তে
সার প্রয়োগের ১০-১৫ দিন পরে চারা/ কলম গর্তের মাঝ বরাবর সোজা করে রোপণ
করতে হবে। রোপণের পর খুঁটি দিয়ে বেধে দিতে হবে। প্রয়োজন মত সেচের ব্যাবস্থা
করতে হবে।পরিচর্যাঃচারার
যথাযথ বৃদ্ধির জন্য সময় মত সঠিক পরিমান ও পদ্ধতিতে সার প্রয়োগ করতে হবে।
গাছের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে সারের পরিমান বৃদ্ধি করতে হবে। বয়স ভেদে গাছ
প্রতি সার প্রয়োগের পরিমান নিন্মরুপ–১-২ বসর, গোবর ১০-১২ কেজি,ইউরিয়া ২০০-৩০০ গ্রাম,টিএসপি ১০০-১৫০ গ্রাম, এমওপি ১০০-১৫০ গ্রাম, জিংক ১০ গ্রাম ও বরিক ৫ গ্রাম।৩-৪ বসর,গোবর ১২-১৫কেজি,ইউরিয়া ৩০০-৪৫০ গ্রাম,টিএসপি ১৫০-২০০গ্রাম,এমওপি ১৫০-২০০,জিংক ১৫গ্রাম ও বরিক এসিড ৮ গ্রাম।৫-৭ বসর, গোবর ১৫-১৮কেজি,ইউরিয়া ৪৫০-৬০০গ্রাম,টিএসপি ২০০-৩০০গ্রাম,এমওপি ২০০-২৫০গ্রাম,জিংক ২০গ্রাম ও বরিক ১০ গ্রাম।৮-১০ বসর,গোবর ১৮-২০কেজি,ইউরিয়া ৬০০-৭০০গ্রাম,টিএসপি ৩০০-৪৫০গ্রাম,এমওপি ২৫০-৩০০গ্রাম,জিংক ২৫গ্রাম ও বরিক ১২গ্রাম।১০ এর বেশী,গোবর ২০-২৫কেজি,ইউরিয়া ৭৫০গ্রাম,টিএসপি ৫০০গ্রাম, এমওপি ৪৫০গ্রাম, জিংক ৩০ গ্রাম ও বরিক এসিড ১৫ গ্রাম।প্রতি
বসর মধ্য ফাল্গুন থেকে মধ্য চৈত্র (মার্চ) এবং মধ্য বৈশাখ থেকে মধ্য
জ্যৈষ্ঠ (মে) মাসে বর্ষার পূর্বে ২ বার ও বর্ষার পরে মধ্য ভাদ্র থেকে মধ্য
আশ্বিন (সেপ্টেম্বর) মাসে ১ বার মোট তিন কিস্তিতে সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে
সেচের ব্যাবস্থা না থাকলে বর্ষার আগে ও পরে ২ কিস্তিতে সার প্রয়োগ করা
ভালো।আগাছা দমনঃবর্ষার
পরে সার প্রয়োগের পর গাছের গোঁড়া থেকে একটু দূরে বিভিন্ন লতাপাতা বা খড়
দ্বারা বৃত্তাকারে মালচ করে দিলে আগাছা দমন সহ শুষ্ক মৌসুমে আদ্রতা
সংরক্ষিত হয়।সেচঃভালো
ফলের জন্য শুষ্ক মৌসুমে বা খরার সময় নিয়মিত সেচ দেয়া একান্ত দরকার। বর্ষার
সময় গাছের গোঁড়ায় যেন পানি না জমে, সে জন্য দ্রুত নিষ্কাশন ব্যাবস্থা করতে
হবে।ডাল-পালা ছাঁটাইঃমাল্টা
গাছের জন্য ডালা ছাঁটাই অপরিহার্য। গাছ লাগানোর পরে ফল ধরার পূর্ব পর্যন্ত
ধীরে ধীরে ডালা ছেঁটে গাছকে নিদিষ্ট আকার দিতে হবে, যাতে গাছ উচু না হয়ে
চারদিকে ছড়াতে পারে। কারন পার্শ্ব ডালে ফল বেশী ধরে। কাণ্ডের এক মিটার
উচ্চতার সকল ডালা ছাঁটাই করতে হবে। ডালা ছাঁটাইয়ের পরে কাঁটা অংশে বোর্দো
পেস্টের প্রলেপ দিতে হবে। এছাড়া পানি তেউড় বা water sucker উৎপন্ন হওয়ার
সঙ্গে সঙ্গে কেটে ফেলতে হবে। মরা, শুকনা, রোগাক্রান্ত ডালা ছেঁটে ফেলতে
হবে।ফল পাতলাকরণ ও ব্যাগিংঃমাল্টা
গাছে থোকা থোকা ফল ধরে .আর বারী মাল্টা ১ জাতের গাছে প্রতি বসর প্রচুর ফল
আসে। সমস্ত ফল রাখা হলে ফল ছোট ও নিন্ম মানের হয়। এজন্য প্রতি পুস্প
মঞ্জুরিতে সুস্থ্য ও সবল দেখে দুটি ফল রেখে, বাকীগুলো ছোট (মার্বেল আকৃতি)
থাকা অবস্থায় ছাঁটাই করে দিতে হবে। কলমের গাছ প্রথম বা দ্বিতীয় বসর থেকে ফল
দেয়া শুরু করে। গাছের ভালো বৃদ্ধির জন্য প্রথম ২ বসর ফল না রাখাই ভালো।
ফলের আকৃতি সবুজ হওয়ায় পাখি বা পোকার আক্রমণ কম হয়। তবে পরিপক্কতার পূর্বে
ব্যাগিং করলে অবাঞ্ছিত পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।ফল সংগ্রহঃফলের
পরিপক্কতার সাথে সাথে ফলের গাড় সবুজ বর্ণ, হালকা সবুজ বর্ণে বা ফ্যাঁকাসে
সবুজ হতে থাকে। বারী মাল্টা- ১ সেপ্টেম্বর- অক্টোবর মাসে আহরন করা যায়। ফল
সংগ্রহের পর নষ্ট বা আঘাত প্রাপ্ত ফল আলাদা করতে হবে। ভালো মানের ফল গুলো
পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে ঠাণ্ডা জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে।
সার তৈরি করতে প্রথমে ছায়াযুক্ত উঁচু জায়গা
বাছতে হবে, যেখানে সরাসরি সূর্যালোক পড়বে না এবং বাতাস চলাচল করে। ওপরে
একটি ছাউনি দিতে হবে। মাটিরপাত্র, কাঠেরবাক্স, সিমেন্টের রিং বা পাত্র,
পাকা চৌবাচ্চা বা মাটির ওপরের কেঁচোসার প্রস্তুত করা যায়। লম্বা ও চওড়া যাই
হোক না কেন উচ্চতা ৩০.৪৮ সে.মি.-৩.৮১ সে.মি. (১-১.৫ ফুট) হতে হবে। পাত্রের
তলদেশে ছিদ্র থাকতে হবে যাতে কোনোভাবেই পাত্রের মধ্যে পানি না জমে। প্রথমে
চৌবাচ্চা বা পাত্রের তলদেশে ৩ ইঞ্চি বা ৭.৫ সেন্টিমিটার ইঁটের টুকরা,
পাথরের কুচি দিতে হবে। তার ওপরে ২.৫৪ সে.মি. (১ ইঞ্চি) বালির আস্তরন দেয়া
হয় যাতে পানি জমতে না পারে। বালির ওপর গোটা খড় বা সহজে পচবে এরকম জৈব বস্তু
বিছিয়ে বিছানার মতো তৈরি করতে হয়। এরপর আংশিক পচা জৈবদ্রব্য (খাবার)
ছায়াতে ছড়িয়ে ঠা-া করে বিছানার ওপর বিছিয়ে দিতে হবে। খাবারে পানির পরিমাণ
কম থাকলে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে যেন ৫০-৬০ শতাংশ পানি থাকে। খাবারের ওপরে
প্রাপ্ত বয়স্ক কেঁচো গড়ে কেজি প্রতি ১০টি করে ছেড়ে দিতে হবে। কেঁচোগুলো
অল্প কিছুক্ষণ স্থির থাকার পর এক মিনিটের মধ্যেই খাবারের ভেতরে চলে যাবে।
এরপর ভেজা চটের বস্তা দিয়ে জৈব দ্রব্য পুরোপুরি ঢেকে দেয়া উচিত। বস্তার
পরিবর্তে নারিকেল পাতা দিয়েও ঢাকা যেতে পারে। মাঝে মাঝে হালকা পানির ছিটা
দিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে অতিরিক্ত পানি যেন না দেয়া হয়। এভাবে ২ মাস
রেখে দেয়ার পর কম্পোস্ট সার তৈরি হয়ে যাবে। জৈববস্তুর ওপরের স্তরে কালচে
বাদামি রঙের, চায়ের মতো দানা ছড়িয়ে থাকতে দেখলে ধরে নেয়া হয় সার তৈরি হয়ে
গেছে। এ সময়ে কোনো রকম দুর্গন্ধ থাকে না। কম্পোস্ট তৈরি করার পাত্রে খাবার
দেয়ার আগে জৈববস্তু, গোবর, মাটি ও খামারজাত সার নির্দিষ্ট অনুপাত
(৬:৩:০.৫:০.৫) অর্থাৎ জৈব আবর্জনা ৬ ভাগ, কাঁচা গোবর ৩ ভাগ, মাটি ১/২ ভাগ
এবং খামার জাত সার ১/২ ভাগ, মিশিয়ে আংশিক পচনের জন্য স্তূপাকারে ১৫-২০ দিন
রেখে দিতে হয়। নির্দিষ্ট সময়ের পর ওই মিশ্রিত পদার্থকে কেঁচোর খাবার হিসেবে
ব্যবহার করা হয়। সাধারণভাবে একটি ১ মিটার লম্বা, ১ মিটার চওড়া ও ৩
সেন্টিমিটার গভীর আয়তনের গর্তের জন্য ৪০ কিলোগ্রাম খাবারের প্রয়োজন হয়। এ
রকম একটি গর্তে এক হাজার কেঁচো প্রয়োগ করা যেতে পারে। প্রথম দিকে কম্পোস্ট
হতে সময় বেশি লাগে (৬০-৭০ দিন)। পরে মাত্র ৪০ দিনেই সম্পন্ন হয়। কারণ
ব্যাক্টেরিয়া ও কেঁচো উভয়েরই সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে। তথ্য অনুসারে ১ কেজি বা
১০০০টি কেঁচো, ৬০-৭০ দিনে ১০ কেজি কাস্ট বা কম্পোস্ট তৈরি করতে পারে। এক
কেজি কেঁচো দিনে খাবার হিসেবে ৫ কেজি সবুজসার খেতে পারে। তার জন্য ৪০-৫০
শতাংশ আর্দ্রতা বজায় রাখা আবশ্যক। প্রায় ৮০০-১০০০ কেঁচোর ওজন হয় ১ কেজি। এই
পরিমাণ কেঁচো সপ্তাহে ২০০০-৫০০০টি ডিম বা গুটি দেয়। পূর্ণাঙ্গ কেঁচোর জন্ম
হয় ৬-৮ সপ্তাহের মধ্যে। অভিজ্ঞতায় দেখা যায় ১ কেজি কাঁচা গোবর থেকে প্রায়
৫০০ গ্রাম কম্পোস্ট পাওয়া যায়। তবে অন্যান্য কৃষিজ বর্জ্যে ক্ষেত্রে কেজি
কাঁচামাল হতে ২৫০ গ্রাম কেঁচো সার পাওয়া যায়।
সার প্রস্তুতকরণ
যখন পদার্থগুলো সামান্য ঝুরঝুরে হয়ে যাবে এবং সারের রঙ গাঢ় বাদামি হয়ে যাবে
তখনই সার প্রস্তুত সম্পন্ন হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে। দানাদার, কালো, হালকা
এবং বোদযুক্ত হবে;
৬০-৯০ দিনের মধ্যেই সার প্রস্তুত সম্পন্ন হবে। ওপরের বেডে কেঁচোর উপস্থিতিতেই তা বোঝা যাবে;
সার থেকে কেঁচোগুলোকে আলাদা করার জন্য বেড খালি করার ২-৩ দিন আগে পানি দেয়া
বন্ধ করতে হবে। এর ফলে প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ কেঁচো নিচে চলে যাবে;
ঝাঁঝরি বা চালুনি দিয়েও কেঁচোদের আলাদা করা যায়। কেঁচো এবং সামান্য পুরু
পদার্থ যা ঝাঁঝরির ওপরে থেকে যাবে তাকে আবার গর্তে ফেলে দিতে হবে যেখানে
পুনরায় পদ্ধতিটি শুরু হবে। সারের গন্ধ মাটির মতো। যে কোনো খারাপ গন্ধ এটাই
প্রমাণ করে পচন প্রক্রিয়া শেষ হয়নি এবং ব্যাক্টিরিয়ার কার্য-ক্রিয়া চালু
আছে। ছাতা ধরা বা বাসিগন্ধের মানে নাইট্রোজেন বেরিয়ে যাচ্ছে। যদি এমন ঘটে
তাহলে বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে এবং আরও বেশি করে তন্তু জাতীয় পদার্থ
যোগ করতে হবে এবং শুকনা রাখতে হবে। এরপরে ব্যবহারের উপযোগী সারকে ছেঁকে
নিয়ে প্যাকেট করতে হবে;
দুই বা চার প্রকোষ্ঠযুক্ত ব্যবস্থায় প্রথম প্রকোষ্ঠে পানি দেয়া বন্ধ করে
দিতে হবে যাতে কেঁচোগুলো নিজে থেকেই এক প্রকোষ্ঠ থেকে অন্য প্রকোষ্ঠে চলে
যায় যেখানে উপযুক্ত পরিবেশ নিয়মিতভাবে রক্ষা করা হয় এবং ফসল উৎপাদনও নিয়মিত
হতে থাকে।
সতর্কতা
পিঁপড়া, উঁইপোকা, তেলাপোকা, গোবরাপোকা, চিকা, মুরগি ও বিভিন্ন পাখি কেঁচোর
শত্রু। এগুলো কোনো কীটনাশক দিয়ে মারা যাবে না। তবে হাউসের চারদিকে কীটনাশক
দেয়া যাবে। ব্যবহৃত গোবরের সঙ্গে ছাই, বালু, ভাঙা কাঁচ এসব রাখা যাবে না।
মুরগি ও পাখির আক্রমণ থেকে বাঁচানোর জন্য হাউসের ওপর ঢাকনা দিয়ে রাখতে হবে।
কেঁচোকে জীবিত ও সক্রিয় রাখতে হাউসে বেশি পানি দেয়া যাবে না। চালনি দিয়ে
চালার সময় হাউসে নির্দিষ্ট জাত ছাড়া অন্য জাতের কেঁচো থাকলে সরিয়ে ফেলতে
হবে। ট্যাংক-প্রকোষ্ঠ-রিংয়ের উচ্চতা কোনোক্রমেই আড়াই ফিটের অধিক করা যাবে
না। উচ্চতা বেশি হলে অক্সিজেনের অভাবে কেঁচো নিচে যেতে চাবে না এবং খাদ্য
গ্রহণে অনীহা দেখা দিবে।কেঁচোসার বা ভার্মিকম্পোস্টের ব্যবহারের মাত্রা ও ফলনে প্রভাব
ভার্মিকম্পোস্ট সব প্রকার ফসলে যে কোনো সময়ে ব্যবহার করা যায়। সবজি এবং
কৃষি জমিতে ৩-৪ মেট্রিক টন প্রতি হেক্টরে ও ফল গাছে গাছ প্রতি ৫-১০ কেজি
হারে ব্যবহার করা হয়। ফুল বাগানের ক্ষেত্রে ব্যবহারের পরিমাণ ৫০০ থেকে সাড়ে
৭০০ কেজি এক হেক্টর জমিতে। মাঠ পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, কেঁচো সার ব্যবহারে
মাঠ ফসলে ফলন শতকরা ২০ থেকে ২৫ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। সবজিতে ফলন বৃদ্ধিসহ
গুণগতমান ও স্বাদ বাড়ে। এমনকি ফল না ধরা অনেক পুরনো ফল গাছে নতুন করে ফল
ধরাসহ ফলদ বৃক্ষে দুইগুণ অবধি ফলন বেড়েছে।
ধানের শিষ বের হওয়ার সাথে সাথে অথবা ফুল আসা পর্যায়ে ছত্রাকনাশক
যেমন ট্রুপার (৫৪ গ্রাম/বিঘা) অথবা নেটিভো (৩৩ গ্রাম/বিঘা) শেষ বিকালে ৭-১০
দিন অন্তর দু’বার আগাম স্প্রে করতে হবে। ব্লাস্ট রোগের প্রাথমিক অবস্থায়
জমিতে পানি ধরে রাখতে পারলে এ রোগের ব্যাপকতা অনেকাংশে হ্রাস পায়।
উন্নতমানের পাটের আঁশ প্রাপ্তিতে করণীয় সঠিকভাবে জাগ দেওয়ার পদ্ধতি-
- জাক দেয়ার
পর নিয়মিত গাছ পরীক্ষা করে দেখতে হয় যাতে বেশি পঁচে না যায়। আঁশ মাটিতে
বসিয়ে না নিয়ে পানিতে ভাসিয়ে নেয়া ভাল। কেননা তাতে আঁশে মাটি, কাঁকর থাকার
সম্ভাবনা কমে যায়। এরপর পরিস্কার পানিতে ধোয়া দরকার।
পানির অভাব হলে কি করতে হবে-- পানির অভাব দেখা দিলে অথবা জাক দেয়ার জায়গা না থাকলে পাট গাছ না পঁচিয়ে পাট গাছের ছাল পঁচানো যায় এবং এতে পঁচন তাড়াতাড়ি শেষ হয়।
- এ জন্য বাঁশের খুটির মাথায় ইংরেজি অক্ষর ইউ এর মত করে কেটে তার মাঝে পাট গাছ রেখে অতি সহজে গাছ থেকে ছাল ছড়ানো সম্ভব।
- এরপর চাড়িতে
বা চারকোণা গর্ত করে পাটের ছাল জাক দেয়া যায়। পঁচানোর সময় পঁচন পানিতে যদি
ছালের ওজনের আনুমানিক ৩৭ কেজি ওজনের জন্য ৫ গ্রাম ইউরিয়া সার মিশিয়ে দেয়া
যায় তবে পঁচন আরো তাড়াতাড়ি হয়।
গোড়ার দিকের কালো অংশ বা কাটিংস দূর করার উপায়-- সঠিক
পদ্ধতিতে পাট না পঁচানোর জন্য অথবা পঁচন পানির অভাবজনিত কারণে পাট আঁশ
ছালযুক্ত ও নীচু মানের হলে পাট আঁশের ওজন প্রতি ৩৭ কেজিতে ৫ গ্রাম ইউরিয়া
পানিতে মিশিয়ে আঁশের গোড়ায় ছালযুক্ত স্থানে ছিটিয়ে দিয়ে এক সপ্তাহ পলিথিন
বা ছালা দিয়ে ঢেকে রেখে গোড়ার দিকটা পুনরায় ধুয়ে নিলেই আঁশ ছালমুক্ত হয় এবং
আঁশের মানও ভাল হয়।
ধোয়া আঁশ কখনই মাটির উপর বিছিয়ে শুকাতে নেই। বাঁশের আড়, রেলিং, ঘরের চাল ইত্যাদিতে বিছিয়ে শুকানো ভাল। মনে রাখবেন উন্নতমানের আঁশের দাম সর্বোচ্চ এবং সব সময় এর গ্রাহক থাকে। পক্ষান্তরে নিম্নমানের অতিরিক্ত পঁচানো, কম পঁচানো, রঙ জলা, কালচে, বাকল, কাঠি লেগে থাকা আঁশের বাজার মূল্য সব সময়ই কম হয়ে থাকে।