আমের আঠা ঝরা এবং হঠাৎ মড়ক (Gummosis and sudden decline) আম গাছের গামোসিস বা আঠা ঝরা এবং হঠাৎ মড়ক রোগ ও তার প্রতিকারে করনীয়:
বর্তমানে আম গাছের যে সমস্ত রোগ দেখা যায় তাদের মধ্যে আমের আঠা ঝরা এবং
হঠাৎ মড়ক অন্যতম । বর্তমানে সব জেলাতেই এ রোগটির আক্রমন পরিলক্ষিত হচ্ছে ।
বিজ্ঞানী এবং আম চাষীদের মতে, আম গাছের গামোসিস বা আঠা ঝরা এবং হঠাৎ মড়ক
সবচেয়ে মারাত্মক । কারণ এ রোগটি ছোট বড় সব বয়সী গাছেই আক্রমন করে এবং
আক্রান্ত গাছ খুব অল্প সময়ের মধ্যে মারা যায় । গবেষনায় দেখা গেছে যে
গামোসিস বা আঠা ঝরা এবং হঠাৎ মড়ক রোগে আক্রান্ত বড় একটি গাছ (৫০ বছরের
উর্ধে বয়স) ৩-৬ মাসের মধ্যেই মারা যায়। রোগের কারণ: এক প্রকার ছত্রাকের কারনে এ রোগটি হয়ে থাকে । রোগের লক্ষণঃ
১. প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত গাছের কান্ড বা ধড় বা শাখাপ্রশাখার কিছু
কিছু জায়গা থেকে ক্ষুদ্র বিন্দুর মত হালকা বাদামি থেকে গাঢ় বাদামি বা কালো
রঙের আঠা বা রস বের হতে থাকে । ২. আক্রমন বাড়ার সাথে সাথে কান্ড
এবং শাখা-প্রশাখার অনেক স্থানথেকে আঠা বা রস বের হতে থাকে । আক্রান্ত
ডগাটির কোষ বিবর্ণ হয়ে উঠে। আক্রান্ত গাছের ডগা এবং শাখাপ্রশাখা
লম্বালম্বিভাবে কাটলে বাদামী লম্বা দাগের নজরে পড়ে । বেশী আক্রান- ডগা বা
ডালটি অল্প দিনের মধ্যেই মারা যায়। এ অবস্থায় মরা ডালে পাতাগুলো ডগায় আঁটকে
থাকে । ৩. কোন কোন ক্ষেত্রে পাতাগুলো কিছুদিন পর ঝরে পড়ে ।
কিছুদিন পর দেখা যায় আরেকটি ডাল একই ভাবে মারা যাচ্ছে। এভাবে এক পর্যায়ে
সম্পূর্ণ গাছ মারা যেতে পারে। ৪. এ রোগটির উল্লেখযোগ্য একটা
বৈশিষ্ট হচ্ছে যে সব গুলো ডাল একসাথে মারা যাবে না । একটা একটা করে
পর্যাযক্রমিক ভাবে আক্রান্ত হবে এবং মারা যাবে । সবশেষে সম্পূর্ণ গাছটিই
মারা যাবে প্রতিকার: ১. আঠা বা রস বের হওয়ার স্থানের
ছাল/বাকল কিছু সুস্থ অংশসহ তুলে ফেলে দিয়ে উক্ত স্থানে বোর্দো পেষ্টের (
১০০ গ্রাম তুঁতে ও ১০০ গ্রাম চুন ১ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে পেষ্ট তৈরী
করা যায়) প্রলেপ দিতে হবে। ২. গাছে আক্রান্ত বা মরা ডাল পালা থাকলে
তা কিছু সুস্থ অংশসহ কোটে ফেলতে হবে । কাটা ডাল পালা গাছের নীচে জমা না
রেখে যত শীগ্র সম্ভব পুড়ে ফেলতে হবে। কাটা অংশে বোর্দো পেষ্টের প্রলেপ
দিতে হবে। ৩. যে সকল গাছে পেষ্টের প্রলেপ দেওয়া সম্ভব না
সেক্ষেত্রে বোর্দো মিকসার অথবা কপার অক্সিক্লোরাইড জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন-
কুপ্রাভিট প্রতি লিটার পানিতে ৭ গ্রাম হারে মিশিয়ে সেপ্র্র করতে হবে
৪. গাছে নতুন পাতা বের হলে মেনকোজেব গ্রূপের ছত্রাকনাশক যেমন-ডায়থেন এম
৪৫/ পেনকোজেব/ইন্ডোফিল/কাফা ইত্যাদি প্রতি লিটার পানিতে ২-৩ গ্রাম হারে
অথবা কার্বেন্ডাজিম গ্রূপের ছত্রাকনাশক যেমন- ব্যভিষ্টিন প্রতি লিটার
পানিতে ১ গ্রাম হারে ৭-১০ দিনের ব্যবধানে ৩/৪ বার সেপ্র্র করতে হবে। ৫. আক্রান্ত গাছে পর্যাপ্ত পরিমান গোবর /আবর্জনা পঁচা/ কম্পোসট এবং রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে এবং নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে ।
সাদা রঙের ছোট পোকা পাতার রস চুষে খায়,পাতা সামান্য নাড়া দিলে উড়ে যায়। পোকার শরীর সাদা মোম জাতীয় পদার্থ দ্বারা ঢাকা থাকে। পাতায় সাদা/ হলদেটে দাগ হয় ,কুঁচকে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। পাতা কোকড়ানো ও মোজাইক রোগের ভাইরাসের বাহক। প্রতিকার বাগান ও গাছ পরিস্কার পরিছন্ন রাখা ও আক্রান্ত অংশ সংগ্রহ করে পুতে ফেলা। রোগমুক্ত চারা সময়মত লাইনে রোপন ও সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করা। কেরোসিন মিশ্রিত ছাই পাতায় ছিটিয়ে পোকা প্রতিরোধ করা য়ায়। ডিটারজেন্ট ৩গ্রাম/ লিটার পানি+নিম/ বিষকাঠাঁলী/ ধুতরা/আতা/পেঁপে/ নিশিন্দা/
পেয়ারা
রোগবালাই ব্যবস্থাপনা
হঠাৎ করে গাছ মারা যাওয়া (ডাইব্যাক): প্রথমে পাতা হলুদ হয়ে আসে এবং পরে শুকিয়ে যায়। এভাবে পাতার পর
প্রশাখা-শাখা এবং ধীরে ধীরে সমস্ত গাছই ৮-১০ দিনের মধ্যে নেতিয়ে পড়ে ও মারা
যায়।
প্রতিকার
এ রোগের কোন দমন ব্যবস্থা নেই। তবে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাগুলো নেয়া যেতে
পারেঃ
মাঠে/বাগানে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
রোগের প্রাথমিক অবস্থায় বর্দ্দোমিক্সার অথবা কুপ্রাভিট/কপার
অক্রি্ক্লোরাইড প্রতি লিটার
পানিতে ২ গ্রাম হারে বা বেভিষ্টিন/নো্ইন প্রতি লিটারে ১ গ্রাম মিশিয়ে
স্প্রে করা যেতে পারে।
বাগানের মাটির অম্লত্ব কমানোর জন্য জমিতে ভালচুন প্রয়োগ করতে হবে
(২৫০-৫০০ গ্রাম/গাছ)।
ধানের
ইঁদুর সমস্যা
·
লক্ষণঃ
ইদুর
ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে থাকে । ধান ও
গম ক্ষেতে এরা বেশি ক্ষতি করে থাকে । ধান গাছের
কাণ্ড তেরছা করে (৪৫ ডিগ্রি কোণে
) কেটে দেয় । গাছের শীষ
বের হলে শীষ বাকিয়ে নিয়ে কচি ও পাকা শীষ
গুলো কেটে দেয় ।
·
ব্যবস্থাপনাঃ
ইঁদুরের
ক্ষয়ক্ষতির ধরণ ব্যাপকতা ও দমন প্রক্রিয়া
অন্যান্য বালাই থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ও কৌশলগত ।
তাই স্থান কাল পাত্র ভেদে কৌশলের সঠিক ও সমন্বিত দমন
পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে ইঁদুর নিধন করা যায় । এতে ফসলের
ক্ষয়ক্ষতি, ইঁদুর বাহিত রোগ ও পরিবেশ দূষণের
মাত্রা কমানো সম্ভব হয় । তবে
ইদুরকে সঠিক ভাবে মোকাবেলা করার জন্য সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আশা একান্ত প্রয়োজন । (ক) অ-রাসায়নিক দমনঃ ০১। ইঁদুরের গর্ত খুড়ে ইঁদুর পিটিয়ে মেরে ফেলা । ০২। ইঁদুরের
গর্তে পানি ঢেলে ইঁদুর বের করে মেরে ফেলা । ০৩। ইঁদুরের
গর্তে মরিচ পোড়া গন্ধ দিয়ে ইঁদুর মারার ব্যবস্থা করা । ০৪। নিবিড়
ফাঁদ পাতা: বিভিন্ন ধরনের ফাদ পেতে ইঁদুর নিধন করা । ০৫। আঠা
ব্যবহার করে: ইঁদুর ধরার জন্যে গুদামে বা ঘরে এক
প্রকার আঠা সাধারণত: কাঠেরবোর্ডে, মোটা শক্ত কাগজে, টিনে, লাগিয়ে ইঁদুর চলাচলের রাস্তায় ব্যবহার করলে ভাল ফল পাওয়া যায়
। বোর্ডের মাঝখানে লোভনীয় খাবার রাখতে হবে । (খ) রাসায়নিক
দমনঃ এ ধরন বিষটোপ
ইঁদুর একবার খেলেই কয়েক ঘন্টা মধ্যে মারা যায় । যেমনঃ গমে
মিশ্রিত জিংক ফসফাইড (২%) বিষটোপ । প্রয়োগ কৌশলঃ
জিংক ফসফাইড অমিশ্রিত গম কয়েকদিন দিয়ে
অভ্যাস করে হঠাৎ একদিন <২% জিংক ফসফাইড
মিশ্রিত গম প্রদান করা
। সমস্যাঃ বিষটোপ লাজুকতা দেখা দিতে পারে যদি ইঁদুরগুলো সরিয়ে ফেলা না হয় ।
বিষটোপ খেয়ে ইঁদুর মরে পরে আছে, এটা দেখে জীবিত ইদুরের ঐ বিষটোপ খাওয়ার
অনিহাই হলো বিষটোপ লাজুকতা । ইঁদুর দমনের
উপযুক্ত সময়ঃ ০১। যে কোন ফসলের
থোড় আসার পূর্বে । এ সময়
মাঠে ইঁদুরের সংখ্যা এবং এদের খাবার কম থাকে বিধায়
ইঁদুর বিষটোপ সহজে খেয়ে থাকে । ০২. ঘর
বাড়িতে সারা বছর ব্যাপি ও বর্ষার সময়
। ০৩. বর্ষার সময় রাস্তাঘাট ও বাধে (যখন
মাঠে পানি থাকে)। ০৪. গভীর
ও অগভীর সেচের নালায় প্রথম পানি ছাড়ার দিন । জৈবিক দমন
পদ্ধতিঃ জীব দিয়ে ইঁদুর দমনের কৌশল এ পদ্ধতির অর্ন্তভূক্ত
। বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক শত্রু যেমন: শিয়াল, বেজি, বন বিড়াল, সাপ,
গুইসাপ, পেচা এসব দিয়ে ইঁদুর মারা যায় । কাজেই ইঁদুর
ভোজী প্রাণীদের বংশ বিস্তারের যথাযথ ব্যবস্থা করতে হবে ।
·
সাবধানতাঃ
১।
ক্ষেতের আশপাশ অপরিচ্ছন্ন রাখবেন না। ২। একই দমন
ব্যবস্থা বারবার ব্যবহার করবেন না
·
করনীয়ঃ
১।
ধান ক্ষে্তে থোড় আসার আগেই ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। ২। সবাই মিলে
একত্রে সমন্বিত ভাবে ইঁদুর দমন করুন। ৩। মাঠে সবাই
মিলে একসাথে ফসল চাষ করে একসাথে কেটে আনুন। তাহলে খাবার না পেয়ে অনাহারে
থাকলে, ইঁদুরের জন্মহার কমে যাবে ।
স্ত্রী মাছি কচি ফলে হুল ঢুকিয়ে ডিম পাড়ে। ডিম থেকে বাচ্চা বের হয়ে ভিতরের
অংশ কুরে কুরে খেয়ে নষ্ট করে। ছোট কুমড়া আক্রমণের কারনে ফল পচে যায়। দমনের
জন্য করণীয় হলো-আক্রান্ত ফল দেখা মাত্র তা তুলে নষ্ট করা। মাছি পোকা দমনের
জন্য বিষ ফাঁদ ব্যবহার করা। (ঢাকনাসহ স্বচ্ছ প্লাষ্টিক পাত্রে জানলা কেটে
বা ছোট ছোট মাটির পাত্রে ১০০ গ্রাম থেতলানো মিষ্টি কুমড়া কিছু পানিসহ বা
চিটাগুড় এর সাথে ০.৫ গ্রাম ডিপটেরেক্স ৮০ এসপি বা ১৫ ফোঁটা যে কোন
বালাইনাশক ব্যবহার করা)। ডিপটেরেক্স ৫০ ইসি ১.০ মিঃ লিঃ বা ২ মিলি সবিক্রণ
প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা। ফেরোমন ফাঁদ ও ব্যবহার করা য়ায়।
থ্রিপস পোকা এর নিম্ফ (বাচ্চা )ও পূনাঙ্গ পাতার রস চুষে খায় বলে পাতা কুঁকড়িয়ে যায় এবং অনেকটা নৌকার মত দেখায়।দমন কৌশল: ক) আঠালো ফাঁদের ব্যবহার: জাব ও থ্রিপস পোকা বিভিন্ন ধরনের আঠালো ফাঁদে
সহজে আকৃষ্ট হয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কীটতত্ত্ব বিভাগ
২(দুই)ধরনের আঠালো ফাঁদ উদ্ভাবন করেছে। জাব পোকার জন্য হলুদ আঠালো এবং
থ্রিপস পোকার জন্য সাদা আঠালো ফাঁদ। চারা রোপনের ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে
বেগুনের মাঠে ১৫-২০ মিটার দূরে দূরে একটি সাদা ফাঁদের পর একটি হলুদ ফাঁদ
স্থাপন করে জাব ও থ্রিপস পোকা আঠালো ফাঁদে ধরা পরে মারা যাবে।
খ) বোটানিক্যাল কীটনাশক ব্যবহার: আঠালো ফাঁদ ব্যবহারের পাশাপাশি ৭-১০
দিন পর পর এজাডিরাকটিন (বায়োনিম প্লাস ১ ইসি বা অন্য নামে) ১ মিলি লিটার
হারে ৩-৪ বার স্প্রে করে এই পোকা গুলো দমন করা যায়।মাকড় পাতার নীচে থেকে রস চুষে খায় ফলে পাতার শিরার মধ্যকায় এলাকার বাদামী রং ধারণ করে ও শুকিয়ে যায়। আক্রান্ত পাতা কুঁকড়িয়ে যায় এবং কচি পাতার নীচের দিকে বেঁকে পেয়ালা আকৃতির বা উল্টো নৌকার মত হয়ে যায় ও পাতা সরু হয়। দমন কৌশল: - আক্রমণের শুরুতে হাত দিয়ে আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে ধ্বংশ করতে হবে।
- প্রতি লিটার পানিতে নিম তেল ৫ মিলি + ৫ মিলি ট্রিকস্ মিশিয়ে পাতার নিচের দিকে স্প্রে করতে হবে।
- পাইরিথ্রয়েড জাতীয় কীটনাশক প্রয়োগ যথা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।
- অনুমোদিত মাকড়নাশক প্রয়োগ করতে হবে।
কলাগাছের গুচ্ছমাথা ভাইরাসজনিত রোগ। আক্রান্ত গাছ দেখামাত্র গোড়াসহ তুলে পুড়ে বা পুঁতে ফেলতে হবে।
ভাইরাসের বাহক পোকা (জাবপোকা, থ্রিপস) দমনের জন্য ইমিডাক্লোরপ্রিড জাতীয় (এসাটাফ, টিডো, এডমায়ার) কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।
ছত্রাকনাশক স্প্রে করে রোগ দমন করতে হয়। এক্ষেত্রে গাছে মুকুল আসার পর
কিন্তু ফুল ফোটার আগে প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি লিটার হারে সিমবুশ ও ০.৫
মিলি লিটার হারে টিল্ট ২৫০ ইসি মিশিয়ে গাছের পাতা, মুকুল ও ডালপালা
ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। আবার আম গুটি বা মটর দানার আকৃতি ধারণ
করলে একই মাত্রায় এ বালাই নাশক দ্বিতীয়বার স্প্রে করতে হবে।
আমের আঠা ঝরা এবং হঠাৎ মড়ক (Gummosis and sudden decline) আম গাছের গামোসিস বা আঠা ঝরা এবং হঠাৎ মড়ক রোগ ও তার প্রতিকারে করনীয়: বর্তমানে আম গাছের যে সমস্ত রোগ দেখা যায় তাদের মধ্যে আমের আঠা ঝরা এবং হঠাৎ মড়ক অন্যতম । বর্তমানে সব জেলাতেই এ রোগটির আক্রমন পরিলক্ষিত হচ্ছে । বিজ্ঞানী এবং আম চাষীদের মতে, আম গাছের গামোসিস বা আঠা ঝরা এবং হঠাৎ মড়ক সবচেয়ে মারাত্মক । কারণ এ রোগটি ছোট বড় সব বয়সী গাছেই আক্রমন করে এবং আক্রান্ত গাছ খুব অল্প সময়ের মধ্যে মারা যায় । গবেষনায় দেখা গেছে যে গামোসিস বা আঠা ঝরা এবং হঠাৎ মড়ক রোগে আক্রান্ত বড় একটি গাছ (৫০ বছরের উর্ধে বয়স) ৩-৬ মাসের মধ্যেই মারা যায়। রোগের কারণ: এক প্রকার ছত্রাকের কারনে এ রোগটি হয়ে থাকে । রোগের লক্ষণঃ ১. প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত গাছের কান্ড বা ধড় বা শাখাপ্রশাখার কিছু কিছু জায়গা থেকে ক্ষুদ্র বিন্দুর মত হালকা বাদামি থেকে গাঢ় বাদামি বা কালো রঙের আঠা বা রস বের হতে থাকে । ২. আক্রমন বাড়ার সাথে সাথে কান্ড এবং শাখা-প্রশাখার অনেক স্থানথেকে আঠা বা রস বের হতে থাকে । আক্রান্ত ডগাটির কোষ বিবর্ণ হয়ে উঠে। আক্রান্ত গাছের ডগা এবং শাখাপ্রশাখা লম্বালম্বিভাবে কাটলে বাদামী লম্বা দাগের নজরে পড়ে । বেশী আক্রান- ডগা বা ডালটি অল্প দিনের মধ্যেই মারা যায়। এ অবস্থায় মরা ডালে পাতাগুলো ডগায় আঁটকে থাকে । ৩. কোন কোন ক্ষেত্রে পাতাগুলো কিছুদিন পর ঝরে পড়ে । কিছুদিন পর দেখা যায় আরেকটি ডাল একই ভাবে মারা যাচ্ছে। এভাবে এক পর্যায়ে সম্পূর্ণ গাছ মারা যেতে পারে। ৪. এ রোগটির উল্লেখযোগ্য একটা বৈশিষ্ট হচ্ছে যে সব গুলো ডাল একসাথে মারা যাবে না । একটা একটা করে পর্যাযক্রমিক ভাবে আক্রান্ত হবে এবং মারা যাবে । সবশেষে সম্পূর্ণ গাছটিই মারা যাবে প্রতিকার: ১. আঠা বা রস বের হওয়ার স্থানের ছাল/বাকল কিছু সুস্থ অংশসহ তুলে ফেলে দিয়ে উক্ত স্থানে বোর্দো পেষ্টের ( ১০০ গ্রাম তুঁতে ও ১০০ গ্রাম চুন ১ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে পেষ্ট তৈরী করা যায়) প্রলেপ দিতে হবে। ২. গাছে আক্রান্ত বা মরা ডাল পালা থাকলে তা কিছু সুস্থ অংশসহ কোটে ফেলতে হবে । কাটা ডাল পালা গাছের নীচে জমা না রেখে যত শীগ্র সম্ভব পুড়ে ফেলতে হবে। কাটা অংশে বোর্দো পেষ্টের প্রলেপ দিতে হবে। ৩. যে সকল গাছে পেষ্টের প্রলেপ দেওয়া সম্ভব না সেক্ষেত্রে বোর্দো মিকসার অথবা কপার অক্সিক্লোরাইড জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন- কুপ্রাভিট প্রতি লিটার পানিতে ৭ গ্রাম হারে মিশিয়ে সেপ্র্র করতে হবে ৪. গাছে নতুন পাতা বের হলে মেনকোজেব গ্রূপের ছত্রাকনাশক যেমন-ডায়থেন এম ৪৫/ পেনকোজেব/ইন্ডোফিল/কাফা ইত্যাদি প্রতি লিটার পানিতে ২-৩ গ্রাম হারে অথবা কার্বেন্ডাজিম গ্রূপের ছত্রাকনাশক যেমন- ব্যভিষ্টিন প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে ৭-১০ দিনের ব্যবধানে ৩/৪ বার সেপ্র্র করতে হবে। ৫. আক্রান্ত গাছে পর্যাপ্ত পরিমান গোবর /আবর্জনা পঁচা/ কম্পোসট এবং রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে এবং নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে ।