দীর্ঘ সময় খরা চলতে থাকলে ফলের বাহিরের খোসা শক্ত হয়ে যায়। এরপর হঠাৎ বৃষ্টি হলে ফলের বৃদ্ধি শুরু হয় অর্থাৎ লিচুর পাল্প দ্রুত বৃদ্ধি পায় । বাহিরের খোসা শক্ত থাকায় ফলের ভিতরের অংশ (পাল্প)-এর সাথে সুষমভাবে দ্রুত বাড়তে না পারায় খোসা ফেটে যায়। ফল ফেটে যাওয়ার প্রক্রিয়াটি খুব দ্রুত সম্পন্ন হয়। উক্ত ফাটা স্থানে রোগ জীবানুর আক্রমণ ঘটতে পারে। ফলে গোটা ফল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। ফল ফেটে গেলে তার বাজার মূল্য কমে যায়।
প্রতিকার:
মাটিতে জৈব সার সহ সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে।
খরা মৌসুমে ফল ধারণের পর থেকেই নিয়মিত সেচ প্রদান করতে হবে
সেচ প্রদানের পর গাছের গোড়ায় কঢ়ুরিপানা বা খড় দ্বারা আচ্ছাদনের ব্যবস্থা করতে হবে
প্রতি বছর প্রতি গাছের গোড়ায় ক্যালসিয়াম সার (ডলোচুন - ১৫০ গ্রাম) প্রয়োগ করতে হবে
ফলসহ গাছে পানি স্প্রে করতে হবে
ফল বৃদ্ধির সময় জিংক সালফেট প্রতি লিটার পানিতে ১০ গ্রাম হারে মিশিয়ে
পর পর ৩ সপ্তাহ গাছে স্প্রে করলে ফল ফাটা ও ফল ঝরা বন্ধ হয় এবং ফলের আকৃতিও
বড় হয়।
গুটি বাধার পর পরই প্লানোফিক্স বা মিরাকুলান প্রতি ৪.৫ লিটার পানিতে ২ মিলি হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
বোরিক এসিড প্রতি লিটার পানিতে ৩ গ্রাম হারে মিশিয়ে পর পর ৩ সপ্তাহ গাছে স্প্রে করলে ফল ফাটা বন্ধ হয় এবং ফলের আকৃতিও বড় হয়।
গাছের শুকিয়ে যাওয়া মরা পাতা, ডাল সব সংগ্রহ
করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। বেগুন গাছের গোড়ায় শুকনো ছাই ছিটিয়ে দিলে আক্রমণ
কমানো যায়। এছাড়া গোড়ার মাটির সাথে শুকনো ছাই মিশ্রিত পটাশ সার মিশিয়ে দেয়া
যেতে পারে। এতে করে নতুন শিকড় জন্মাবে এবং গাছ সতেজ হবে। প্রতি লিটার
পানিতে ২ গ্রাম মেনকোজেব গ্রুপের বালাইনাশক মিশিয়ে স্প্রে করলে আক্রমণ কম
হবে।
নিচু জমি অর্থাৎ বন্যাপ্রবণ এলাকার জন্য উপযোগী জাতগুলো হলো-
ব্রি ধান৫১, ব্রি ধান৫২, ব্রি ধান৭৯। এছাড়া বিআর২২, বিআর২৩, ব্রি ধান৪৬
জাতগুলোর নাবি গুণ থাকার জন্য এদের বীজ ২০-৩০ শ্রাবণে বপন করে ৩০-৪০ দিনের
চারা সর্বশেষ ৩১ ভাদ্র পর্যন্ত বন্যা প্রবণ এলাকায় রোপণ করা যায়।
কেচো জৈব পদার্থ খেয়ে যে পাচ্য পদার্থ মলরুপে নির্গমণ হয় তাকে কাস্ট
(cast) বলে। এই কাস্টের ভিতর জীবাণু সংখ্যা এবং তার কার্যকলাপ বৃদ্ধি পায়। ফলে মাটির উর্বরতা বাড়ে। দেখা গেছে, পারিপার্শ্বিক মাটির তুলনায় কাস্টের মধ্যে জীবাণু সংখ্যা প্রায় হাজার গুণ বেশি। এই কাস্টের উপরে বিভিন্ন প্রকার উৎসেচক উৎপাদনকারী ব্যাক্টেরিয়া জীবাণু বেশি থাকায় মাটির উর্বরতাও বৃদ্ধি পায়। যেমনঃ কাস্টের কারণে মাটি থেকে গাছে ৬ শতাংশ নাইট্রোজেন এবং ১৫-৩০ শতাংশ ফসফরাস হতে দেখা গেছে। এছাড়াও অন্যান্য উদ্ভিদ খাদ্য উপাদান যেমনঃ ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি, গাছে বেশি পরিমাণে উপলব্ধ হয়। কেঁচোর উপস্থিতিতে জৈব পদার্থের কার্বন ও নাইট্রোজেন অনুপাত
(C:N ratio) প্রায় ২০:১ এর কাছাকাছি হয়। এই অনুপাতে গাছ সহজেই কম্পোস্ট থেকে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে।
১। আক্রান্ত ফল বা ফুল সংগ্রহ করে ধ্বংস করা বা পুড়ে ফেলা।
২। কচি ফল কাগজ বা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেয়া ।
৩। প্রথম ফুল আসা মাত্র কুমড়া জাতীয় ফসলের ফেরোমন ফাঁদ স্থাপন করা। প্রতি
১০ শতাংশের জন্য ৩ টি হারে ।
৪। আম বা খেজুরের রসে সামান্য বিষ মিশিয়ে তা বোতলে রেখে জানালা কেটে দিয়ে
ক্ষেতের মাঝে মাঝে স্থাপন করা।
৫। পাকা মিষ্টি কুমড়া বা কুমড়া জাতীয় ফল ১০০ গ্রাম কুচি কুচি করে কেটে তাতে
সামান্য বিষ ( যেমন- সপসিন ০.২৫ গ্রাম ) মিশিয়ে তা দিয়ে বিষটোপ তৈরী করে
মাটির পাত্রে করে ক্ষেতের মাঝে মাঝে স্থাপন করা।
৬। সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক ১ মি.লি. / লি. হারে পানিতে মিশিয়ে
স্প্রে করা।
সার ও বালাইনাশক সংক্রান্ত আইন কানুন ডিএই এর ওয়েব সাইটে আছে। ডাউনলোড করতে পারেন।