১। বিস্তীর্ণ আবদ্ধ স্বাদুপানির জলাশয়কে বিল বলা হয়। বিল মূলত নিম্নভূমি
যেখানে অতিরিক্ত পানি এসে জমা হয়। শুকনোর মৌসুমে অধিকাংশ বিলে কোন পানি
থাকে না। তখন সেই এলাকা চাষাবাদ ও গবাদিপশুর চারণক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত
হয়। একটু বৃষ্টি হলে বা বর্ষা মৌসুমে এসব নিম্নভূমি পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে
যায়। সাধারণত বিলের গভীরতা বেশি হয় না। বেশিরভাগ বিলই জলাভূমির মত। তবে
বড় বড় বিলের গভীরতা অনেক বেশি এবং প্রায় সারা বছর এসব বিলের কোথাও না
কোথাও পানি থাকে। বিল কোন কোন ক্ষেত্রে
বাঁওরের সমার্থক, যদিও দু’টির মধ্য অল্পবিস্তর পার্থক্য বিদ্যমান। ঝিল
সম্ভবত সেই রকম বিল যেখানে সারা বছরই পানি থাকবে। আমি ঠিক পুরোপুরি শিউর
নই। হাওর মূলত বিস্তৃত প্রান্তর, অনেকটা গামলা আকৃতির জলাভূমি যা প্রতিবছর
মৌসুমী বৃষ্টির সময় পানিপূর্ণ হয়ে ওঠে। সমগ্র বর্ষাকাল জুড়ে হাওরের
পানিকে সাগর বলে মনে হয় এবং এর মধ্যে অবস্থিত গ্রামগুলোকে দ্বীপ বলে
প্রতীয়মান হয়। বছরের সাত মাস হাওরগুলো পানির নিচে অবস্থান করে। শুষ্ক
মৌসুমে অধিকাংশ পানি শুকিয়ে গিয়ে সেই স্থানে সরু খাল রেখে যায় এবং শুষ্ক
মৌসুমের শেষের দিকে সম্পূর্ণ শুকিয়ে যেতে পারে। শুষ্ক মৌসুমে হাওরের পুরো
প্রান্তর জুড়ে ঘাস গজায়, গবাদি পশুর বিচরণক্ষেত্র হয়ে উঠে। হাওরে আগত
পানি প্রচুর পলিমাটি ফেলে যায় যা ধান উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত উপকারী।২। হাওর (বৃহত্তর সিলেট, নেত্রকোনা ও
কিশোরগঞ্জ) এ অঞ্চলের অপেক্ষাকৃত উঁচু জমির জন্য ব্রি ধান২৯, ব্রি ধান৫০
এবং ব্রি ধান৫৮ । মাঝারি নিম্ন জমিতে ব্রি ধান২৮, ব্রি হাইব্রিড ধান ৩ ও ৫
আর নিম্ন জমিতে ব্রি ধান২৮ চাষ উপযোগী।
জাব পোকা এ রোগের বাহক, তাই এদের দমনের জন্য ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয়
কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার / ২মুখ) ১০ লিটার পানিতে
মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার। ঔষধ স্প্রে করায়
সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
ফসল : বেগুন রোগের নাম : গুচ্ছ পাতা/ খুদে পাতা / ছোট পাতা রোগ
রোগের কারণ : মাইকো প্লাজমা
ক্ষতির ধরণ : বেগুনের ক্ষুদে পাতা রোগ হলে গাছে তুলসি পাতার মত অসংখ্য ছোট ছোট পাতা দেখা দেয়।
ফসলের যে পর্যায়ে আক্রমণ করে : বাড়ন্ত পর্যায়
ফসলের যে অংশে আক্রমণ করে : পাতা
ব্যবস্থাপনা : জাব পোকা ও
জ্যাসিড এ রোগের বাহক, তাই এদের দমনের জন্য ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক
(যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার / ২মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে
প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার। ঔষধ স্প্রে করায়
সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতা পোড়া রোগ (Bacterial Blight)
রোগের জীবাণু- Xanthomonas oryzae pv. oryzae
এটি ঝলসানো রোগ নামেও পরিচিত। পাতাপোড়া রোগের ব্যাকটেরিয়া জীবাণু আক্রান-
গাছ বা তার পরিত্যক্ত গোড়া, কুটা ও বীজ এবং আগাছার মধ্যেও থাকতে পারে।
শিশির, সেচের পানি, বৃষ্টি, বন্যা এবং ঝড়ো হাওয়ার মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়।
ব্যাকটেরিয়া কোষগুলো একত্রে মিলিত হয়ে ভোরের দিকে হলদে পুঁতির দানার মত
গুটিকা সৃষ্টি করে এবং এগুলো শুকিয়ে শক্ত হয়ে পাতার গায়ে লেগে থাকে।
পরবর্তীকালে পাতার গায়ে লেগে থাকা জলকণা গুটিকাগুলোকে গলিয়ে ফেলে এ রোগের
জীবাণু অনায়াসে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ রোগের ফলে গাছের বিভিন্ন বয়সে তিনটি
ভিন্ন ভিন্ন লক্ষণ (ক্রিসেক, পাতা পোড়া ও ফ্যাকাশে হলুদ) দেখা দেয়। বীজতলা
থেকে চারা তোলার সময় যদি শিকড় ছিড়ে যায় তখন রোপণের সময় ব্যাকটেরিয়া সে
ক্ষতের মধ্য দিয়ে গাছের ভিতরে প্রবেশ করে। এছাড়া কচি পাতার ক্ষত স্থান
দিয়েও প্রবেশ করতে পারে।
আক্রান্ত
গাছের নিচের পাতা প্রথমে নুয়ে পড়ে এবং শুকিয়ে মারা যায়। এভাবে গোছার সকল
পাতাই মরে যেতে পারে। এ অবস্থাকে ক্রিসেক বা নেতিয়ে পড়া রোগ বলা হয়। চারা
বা প্রাথমিক কুশি বের হওয়ার সময় গাছের পাতা বা পুরো গাছটি ঢলে পড়ে। মাঝে
মাঝে আক্রমণ প্রবণ জাতের ধানে পাতাগুলো ফ্যাকাশে হলদে রঙের হয়। গাছের বয়স্ক
পাতাগুলো স্বাভাবিক সবুজ থাকে, কিন্ত কচি পাতাগুলো সমানভাবে ফ্যাকাশে হলদে
হয়ে আস্তে আস্তে শুকিয়ে মারা যায়। পাতা পোড়া রোগের লক্ষণের ক্ষেত্রে
প্রথমে পাতার কিনারা অথবা মাঝে নীলাভ সবুজ রঙের জলছাপের মত রেখা দেখা যায়।
দাগগুলো
পাতার এক প্রান্ত, উভয় প্রান্ত বা ক্ষত পাতার যে কোন জায়গা থেকে শুরু হয়ে
আস্তে আস্তে সমস্ত পাতাটি ঝলসে বা পুড়ে খড়ের মত হয়ে শুকিয়ে যায়। আক্রমণ
প্রবণ জাতের ধানে দাগগুলো পাতার খোলের নিচ পর্যন্ত যেতে পারে। এক সময়ে
সম্পূর্ণ পাতাটি ঝলসে যায় বা পুড়ে খড়ের মত হয়ে শুকিয়ে যায়। রোগ সমস্ত জমিতে
ছড়িয়ে পড়লে পুড়ে গেছে বলে মনে হয়।
সমন্বিত ব্যবস্থাপনা
এ রোগ দমনের জন্য বিআর২ (মালা),
বিআর৩ (বিপ্লব), বিআর৪ (ব্রিশাইল), বিআর১৪, বিআর১৬, বিআর১৯ (মঙ্গল), বিআর২১
(নিয়ামত), বিআর২৬ (শ্রাবণী), ব্রিধান২৭, ব্রিধান২৮, ব্রিধান২৯, ব্রিধান৩১,
ব্রিধান৩২, ব্রিধান৩৭, ব্রিধান৩৮, ব্রিধান ৪০, ব্রিধান৪১, ব্রিধান ৪২,
ব্রিধান৪৪, ব্রিধান ৪৫ ও ব্রিধান৪৬ ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন
জাতের ধান চাষ করা।
সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করুন।
ক্রিসেক আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলে পার্শ্ববর্তী গাছ থেকে কুশি এনে লাগিয়ে দেয়া।
আক্রান্ত ক্ষেতের পানি বের করে দিয়ে জমি ভেদে ৭-১০ দিন শুকানো।
জমি শুকিয়ে নাড়া ক্ষেতে পুড়িয়ে ফেলা।
আক্রান্ত ক্ষেতে নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ না করা।
আক্রান্ত ক্ষেতে বিঘা প্রতি ৫ কেজি পটাশ সার প্রয়োগ করে মাটিতে ভালভাবে মিশিয়ে দিলে এ রোগের তীব্রতা কমে।
নিকটস্থ হর্টিকালচার সেন্টারে গৌড়মতি জাতের আমের চারা পাওয়া যাবে।আম বাগানের বয়স বেশি হলে ফল ধারণ কমে যায়,
তাই এ ক্ষেত্রে গাছ কেটে না ফেলে পুরনো গাছের ভারি শাখা কেটে দিলে সেখানে
নতুন শাখা বের হবে এবং গাছ নবায়ন হয়ে যাবে। এভাবে ২-৩ বছরে বাগান নবায়ন করা
যায়।পরগাছা দমন :
আমগাছে একাধিক জাতের আগাছা জন্মাতে দেখা যায়, যা গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও
স্বাস্থ্যের প্রতি ক্ষতিকর। পরগাছাসমূহে শিকড়ের মতো এক প্রকার হস্টোরিয়া
হয়, যা গাছের মধ্যে প্রবেশ করে রস শোষণ করে এবং দুর্বল করে। পরগাছার
পাদুর্ভাব বেশি হলে গাছের পাতার আকার ছোট হয় ও ফ্যাকাসে হয় এবং অনেক সময়
গাছ মারা যায়। এর ফলে গাছের ফলন মারাত্মকভাবে কমে যায়। তাই ভালো ফলন পেতে
হলে অবশ্যই পরগাছা অপসারণ করতে হবে।
সার প্রয়োগ :
গাছের বৃদ্ধি ও ফল উৎপাদনের জন্য সারের ব্যবহার একান্ত প্রয়োজন। ফলন্ত
গাছের আকার, বয়স ও মাটির উর্বরতার ওপর সারের পরিমাণ নির্ভর করে। দুপুর বেলা
যতটুকু স্থানে ছায়া পড়ে সেটুকু স্থানে মাটি কুপিয়ে সার মাটির সঙ্গে মিশিয়ে
দিতে হবে।
সেচ প্রয়োগ : সাধারণত জমির
ওপর স্তরে প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান থাকে বা সার হিসেবে মাটিতে মিশিয়ে দেয়া
হয় তাই আম বাগানের ওপরের ২-৩ মিটার অংশকে জমির পানি সংরক্ষণ স্তর হিসেবে
ধরা হয়। তাই শুষ্ক মৌসুমে আম বাগানে পানি সেচ দেয়া দরকার। আমের গুটি মটর
দানারমতো হওয়ার পর থেকে ১৫-২০ দিন পর পর ২-৩ বার সেচ দিলে আমের গুটি ঝরা
বন্ধ হয়।আমের আনথ্রাকনোজ : পাতায়, কাণ্ডে, মুকুলে ও
ফলে এই রোগ দেখা যায়। পাতায় অনিয়মিত দাগ দেখা যায় যেগুলো পরে বাদামি থেকে
কালো হয়ে বড় বড় দাগের সৃষ্টি করে এবং পাতা ঝরে যায়। মুকুল কালো হয়ে যায় ও
গুটিগুলো পড়ে যায় এবং পাকা আমে স্পষ্ট দাগ দেখা যায় যা পরবর্তী সময়ে বড় হয়ে
আমে পচন ধরায়। এ রোগের প্রতিকার হচ্ছে- মুকুল আসার আগে টিল্ট ২৫০ ইসি- ০.৫
মিলিলিটার/লিটার বা ডায়থান এম ৪৫-২ গ্রাম/লিটার স্প্রে করতে হবে এবং
বোরডোয়াক্স মিশ্রণের ১% দ্রবণ ১০-১২ দিন পর পর ৩-৪ বার স্প্রে করতে হবে।বোঁটা
পচা রোগ : এটি আমের অন্যতম মারাত্মক রোগ। প্রথমে বোঁটার দিকে পচন ধরে পরে
পুরো ফলটি পচে গিয়ে কালো বর্ণ ধারণ করে। গাছে থাকা অবস্থায় জীবাণুটি মুক্ত
অবস্থায় থাকে পরে আম সংগ্রহের পরে উচ্চ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতায় রাখা হলে
আক্রান্ত আমের রং বাদামি হয়ে যায়, যা আর খাওয়ার উপযোগী থাকে না। এ রোগের
প্রতিকার হচ্ছে প্রায় ২-৩ সে.মি. বোঁটা রেখে আম সংগ্রহ করতে হবে এবং ডায়থান
এম ৪৫ অথবা বেভিসটিন (০.২%) স্প্রে করতে হবে।আমের অঙ্গ বিকৃতি বা
ম্যালফরমেশন : এ রোগ সাধারণত মুকুলে হয়। তবে ডালের আগায়ও হতে পারে।
আক্রান্ত মুকুল কালো হয়ে যায় এবং মুকুলগুলো একীভূত হয়ে জটলার সৃষ্টি করে। এ
রোগের প্রতিকার হচ্ছে- আম ধরার ৮০ থেকে ৯০ দিন আগে ন্যাপথেলিক এসিটিক এসিড
স্প্রে করতে হবে ও আক্রান্ত স্থানে কার্বোন্ডাজিম (১ গ্রাম/ লিটার পানি)
স্প্রে করতে হবে।পাউডারি মিলডিউ : পাউডারি মিলডিউ রোগের আক্রমণ
প্রধানত আমের মুকুল ও কচি আমে প্রকাশ পায়। প্রথমে আমের মুকুলের শীর্ষ
প্রান্তে সাদা বা ধূসর বর্ণের পাউডারের আবরণ দেখা যায়। কচি পাতাতেও রোগের
লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এই পাউডার হচ্ছে ছত্রাক ও তার বীজকণার সমষ্টি। হালকা
বৃষ্টি, মেঘলা বা কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশ এ রোগের জীবাণুর ব্যাপক উত্পাদনে
সহায়তা করে। অনুকূল আবহাওয়ায় এই পাউডার সম্পূর্ণ মুকুলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
আক্রান্ত মুকুলের সব ফুল নষ্ট হয়ে যায়। এ অবস্থায় শুধু মুকুলের দণ্ডটি
দাঁড়িয়ে থাকে। আক্রমণ মারাত্মক হলে গাছে কোনো ফল ধরে না। তাছাড়া বেশি
আক্রান্ত কচি আম ঝরে পড়ে। এ অবস্থায় রোগের লক্ষণ দেখা দিলেই সালফার বা
গন্ধকযুক্ত যে কোনো ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম ভালোভাবে স্প্রে
করতে হবে।আমের ভালো ফলন পাওয়ার জন্য পরিচর্যা শুরু
করতে হবে আমবাগানে মুকুল বের হওয়ার আগেই। গাছে মুকুল আসার পরও সমানতালে
যত্ন নিতে হবে। আমের ভালো ফলন পেতে করণীয় হপার পোকা দমন : হপার পোকা অন্ধকার বা বেশি ছায়াযুক্ত
স্থান পছন্দ করে। তাই নিয়মিতভাবে গাছের ডালপালা ছাঁটাই করতে হবে, যাতে
গাছের মধ্যে আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে। আমের মুকুল যখন ৩ থেকে ৪
সেন্টিমিটার লম্বা হয় তখন একবার এবং আম যখন মটর দানার মতো আকার ধারণ করে
তখন আরেকবার প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি লিটার হারে সাইপারমেথ্রিন (রিপকর্ড
বা সিমবুস বা ফেনম বা এরিভো) ১০ ইসি মিশিয়ে পুরো গাছে স্প্রে করতে হবে।
আমের হপার পোকার কারণে যেহেতু সুটিমোল্ড বা ঝুল রোগের আক্রমণ ঘটে তাই রোগ
দমনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক হপার
পোকা দমনের জন্য ব্যবহার করা কীটনাশকের সঙ্গে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে
বর্ষাকাল শেষে ও বর্ষাকালের আগে পেয়ারা বাগানের জমি চাষ দিতে হবে। এ সময়
সারও দেয়া যেতে পারে। এতে বাগানের মাটিতে লুকিয়ে থাকা এ পোকার পুত্তলি
মারা পড়বে। পুত্তলি মারতে পারলে সেখানে মাছি পোকার সংখ্যা অনেক কমে যাবে।
পেয়ারাগাছে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ঝুলিয়েও এ পোকা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। । এসব ফাঁদে পেয়ারা মাছি
পোকার পুরুষ পোকারা আকৃষ্ট হয়ে আটকা পড়ে মরে। ফলে বাগানে এ পোকার আক্রমণ
অনেক কমে যায়। মাটি থেকে ৫ ফুট বা
প্রায় দেড় মিটার উঁচুতে পেয়ারা গাছের ডালে এ ফাঁদ ঝুলিয়ে দেয়া যায়। এ
দেশের বাজারে এখন সেক্স ফেরোমন ফাঁদ পাওয়া যাচ্ছে। সেক্স ফেরোমন
ফাঁদ পাততে না পারলে একটা মাটির সানকিতে পাকা পেয়ারার ১০০ গ্রাম পরিমাণ
শাঁস পিষে কাই করে তার ভেতরে ১২ ফোঁটা ডিপটেরক্স বা গìধ কম এমন যেকোনো
কীটনাশক মিশিয়ে বিষ ফাঁদ তৈরি করে ব্যবহার করা যায়। সে ফাঁদে পুরুষ ও
স্ত্রী উভয় মাছিই আটকা পড়ে। এ ফাঁদও ফেরোমন ফাঁদের মতো গাছে ঝুলিয়ে
দেয়া যেতে পারে বা মাটিতে বাঁশের খুঁটি পুঁতে তাতে বেঁধে দেয়া যেতে পারে।
ভাসমান বেড তৈরির প্রধান উপকরণ কচুরিপানা।
এছাড়া টোপাপানা, শেওলা, বিভিন্ন ধরনের জলজ আগাছা, দুলালিলতা, ধানের খড় বা
ফসলের অবশিষ্টাংশ, আখের ছোবড়া, সডাস্ট ব্যবহার করে ভাসমান বেড তৈরি করা
যায়। পরিপক্ব গাঢ় সবুজ রঙের বড় ও লম্বা কচুরিপানা দিয়ে বেড তৈরি করলে বেডের
স্থায়িত্ব বেশি হয়। যেখানে দুলালিলতা পাওয়া যায় না সেখানে দুলালিলতার
পরিবর্তে পাটের তৈরি দড়ি দিয়ে বল মেডা তৈরির করা হয়। এছাড়া নারিকেলের
ছোবড়ার গুঁড়া চারা তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়।
ভাসমান বীজতলার ক্ষেত্রে অন্য স্বাভাবিক
বীজতলার মতোই বীজের হার প্রতি বর্গমিটারে ৮০ থেকে ১০০ গ্রাম হবে। এক্ষেত্রে
এক বিঘা জমি রোপণের জন্য ৩৫ বর্গমিটার বা প্রায় ১ শতক ভাসমান বীজতলার চারা
ব্যবহার করা যায়। চারার বয়স ২০ থেকে ২৫ দিনের হলে চারা উঠিয়ে মাঠে রোপণ
করা যেতে পারে। এতে দানের চারা উৎপাদনের জন্য আর মূল জমি ব্যবহার করতে হয়
না। জমি ব্যবহার সাশ্রয়ী হয়। জেগে উঠা খালি জমিতে তাড়াতাড়ি কাক্সিক্ষত ফসল
উৎপাদন করে বেশি লাভবান হওয়া যায়। এভাবে তৈরি চারা অন্যসব স্বাভাবিক চারার
মতোই রোপণ করতে হবে এবং পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনা অন্য স্বাভাবিক বীজতলার
চারার মতোই হবে। উৎপাদিত চারা অন্য সব স্বাভাবিক চারার মতোই ফলন দেয়।
পানিতে ভাসমান থাকার জন্য এ বীজতলায় সাধারণত সেচের দরকার হয় না, তবে মাঝে
মধ্যে প্রয়োজনে ছিটিয়ে পানি দেয়া যেতে পারে।
সাধারণত বর্ষায় বন্যাকবলিত এলাকায় বীজতলা
করার মতো জায়গা থাকে না। তাছাড়া বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর চারা তৈরির
প্রয়োজনীয় সময় থাকে না। কচুরিপানা ও জলজ আগাছা দিয়ে তৈরিকৃত বেডে অনায়াসে
আপদকালীন সময়ে আমনের অংকুরিত বীজ বপন করে চারা উৎপাদন করা যায়। তবে বীজ
ছিটানোর আগে বেডের ওপর ২-৩ সেন্টিমিটার পরিমাণ পুকুরের তলার কিংবা মাটির
পাতলা কাদার প্রলেপ দিয়ে ভেজা বীজতলা তৈরি করতে হবে। বন্যার পানিতে যেন
ভাসমান বেড যেন ভেসে না যায় সেজন্য ভাসমান বীজতলার বেডকে দড়ির সাহায্যে
খুঁটির সাথে বেঁধে রাখতে হবে। ছিটানোর পর সতর্ক থাকতে হবে যেন পাখি বা অন্য
কিছু বীজগুলো নষ্ট করতে না পারে।
ভাসমান বেডে উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান প্রচুর পরিমাণে থাকে বলে
সমতল ভূমির তুলনায় ঘন করে বীজ বপন বা চারা রোপণ করা যায়। আবার ভাসমান বেডে
বেশি জৈব সারের কারণে জমিতে প্রচলিত চাষের তুলনায় ফসল দ্রুত বাড়ে এবং অনেক
ক্ষেত্রে প্রায় ৩-৫ গুণ বেশি ফলন পাওয়া যায়। বন্যার শেষে পানির স্তর নেমে
যাওয়ায় এসব ভাসমান বেড যখন মাটির ওপর বসে যায় তখন তা ভেঙে জমিতে বিছিয়ে বা
মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে সফলভাবে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করা যায়। এছাড়া, মৌসুম
শেষে পচা কচুরিপানা ফল গাছের গোড়ায় সার হিসেবে ব্যবহার করে ফলের উৎপাদন
বাড়ানো যায়। ফল গাছের গোড়ায় পচা কচুরিপানা ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ানো যায়।
১। বিস্তীর্ণ আবদ্ধ স্বাদুপানির জলাশয়কে বিল বলা হয়। বিল মূলত নিম্নভূমি যেখানে অতিরিক্ত পানি এসে জমা হয়। শুকনোর মৌসুমে অধিকাংশ বিলে কোন পানি থাকে না। তখন সেই এলাকা চাষাবাদ ও গবাদিপশুর চারণক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। একটু বৃষ্টি হলে বা বর্ষা মৌসুমে এসব নিম্নভূমি পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। সাধারণত বিলের গভীরতা বেশি হয় না। বেশিরভাগ বিলই জলাভূমির মত। তবে বড় বড় বিলের গভীরতা অনেক বেশি এবং প্রায় সারা বছর এসব বিলের কোথাও না কোথাও পানি থাকে। বিল কোন কোন ক্ষেত্রে বাঁওরের সমার্থক, যদিও দু’টির মধ্য অল্পবিস্তর পার্থক্য বিদ্যমান। ঝিল সম্ভবত সেই রকম বিল যেখানে সারা বছরই পানি থাকবে। আমি ঠিক পুরোপুরি শিউর নই। হাওর মূলত বিস্তৃত প্রান্তর, অনেকটা গামলা আকৃতির জলাভূমি যা প্রতিবছর মৌসুমী বৃষ্টির সময় পানিপূর্ণ হয়ে ওঠে। সমগ্র বর্ষাকাল জুড়ে হাওরের পানিকে সাগর বলে মনে হয় এবং এর মধ্যে অবস্থিত গ্রামগুলোকে দ্বীপ বলে প্রতীয়মান হয়। বছরের সাত মাস হাওরগুলো পানির নিচে অবস্থান করে। শুষ্ক মৌসুমে অধিকাংশ পানি শুকিয়ে গিয়ে সেই স্থানে সরু খাল রেখে যায় এবং শুষ্ক মৌসুমের শেষের দিকে সম্পূর্ণ শুকিয়ে যেতে পারে। শুষ্ক মৌসুমে হাওরের পুরো প্রান্তর জুড়ে ঘাস গজায়, গবাদি পশুর বিচরণক্ষেত্র হয়ে উঠে। হাওরে আগত পানি প্রচুর পলিমাটি ফেলে যায় যা ধান উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত উপকারী।২। হাওর (বৃহত্তর সিলেট, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ) এ অঞ্চলের অপেক্ষাকৃত উঁচু জমির জন্য ব্রি ধান২৯, ব্রি ধান৫০ এবং ব্রি ধান৫৮ । মাঝারি নিম্ন জমিতে ব্রি ধান২৮, ব্রি হাইব্রিড ধান ৩ ও ৫ আর নিম্ন জমিতে ব্রি ধান২৮ চাষ উপযোগী।