কলম্বো লেবু একটি অত্যন্ত
জনপ্রিয় ও রপ্তানিযোগ্য ফসল। এ লেবুর রস নয় মূলত বাকল খাওয়া হয়। এর আকার সাধারণ
লেবুর চেয়ে বেশ বড়। এর চামড়া বেশ পুরু তবে রসের পরিমাণ খুবই কম। লেবুটির চামড়ার একটি
বিশেষ মিষ্টি গন্ধ রয়েছে। খোসা দিয়ে আচারও তৈরি করা হয়। বর্তমানে সিলেট অঞ্চলসহ
বাংলাদেশের প্রায় অঞ্চলে এ লেবুর চাষ হচ্ছে।
জলবায়ু ও মাটি : আর্দ্র ও
উঁচু পাহাড়ি অঞ্চলে এ লেবু ভালো জন্মে। প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এমন পাহাড়ি অঞ্চলের
পানি নিষ্কাশনযুক্ত অম্লীয় মাটি এটি চাষের জন্য বেশি উপযোগী। ২৫-৩০ সেলসিয়াস গড়
তাপমাত্রা প্রয়োজন। মাটির পিএইচ মান ৫-৬ হলে ভালো হয়। লেবু চাষের জন্য হালকা
দোঁ-আশ ও নিষ্কাশন ক্ষমতা সম্পন্ন অম্লীয় মাটি প্রয়োজন।
বংশবিস্তার : বীজ (চারা) ও অঙ্গজ (কলম)
দুইভাবে বংশবিস্তার করা যায়। সাধারণত গুটি কলম দিয়ে বংশবিস্তার করা হয়। অঙ্গজ
উপায়ে উৎপন্ন চারায় ২ থেকে ৩ বছরেই ফল ধরতে শুরু করে।
মাদা তৈরি : চারা বা কলম
রোপণ করার ১৫-২০ দিন আগে ২.৫ মিটার থেকে ৩.৫ মিটার দূরত্বে ৬০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য,
৬০ সেন্টিমিটার প্রস্থ এবং ৬০ সেন্টিমিটার গভীরতা বিশিষ্ট গর্ত তৈরি
করতে হবে। গর্তের ওপরের মাটির সাথে ২০ কেজি জৈব সার, ২০০
গ্রাম টিএসপি, ২০০ গ্রাম এমওপি সার ভালোভাবে মিশিয়ে গর্ত
ভরাট করে দিতে হবে। প্রতি হেক্টর জমিতে ১১১১-১৬০০টি চারা রোপণ করা যায়।
রোপণ পদ্ধতি : লেবুর চারা বা কলম সারি বা
বর্গাকার পদ্ধতিতে লাগানো উচিত। ফলে বাগানের আন্তঃপরিচর্যা ও ফল সংগ্রহ করা সহজ
হয়।
রোপণ
সময় :
মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। তবে যদি সেচ সুবিধা থাকে
তাহলে সারা বছরই চারা লাগানো যায়।
সার প্রয়োগ পদ্ধতি : সার তিন
কিস্তিতে গাছের গোড়া হতে কিছু দূরে ছিটিয়ে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে বা চাষ দিয়ে মাটি
সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। পাহাড়ের ঢালে ডিবলিং পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
প্রথম কিস্তি বর্ষার প্রারম্ভে অর্থাৎ বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে এবং দ্বিতীয় কিস্তি মধ্য
ভাদ্র থেকে মধ্য কার্তিক মাসে এবং তৃতীয় কিস্তি মাঘ-ফাল্গুন মাসে প্রয়োগ করতে হবে।
অঙ্গ ছাঁটাই : গাছের গোড়ার
দিকে জল শোধক শাখা বের হলেই কেটে ফেলতে হবে। এছাড়া গাছের ভেতরের দিকে দুর্বল
ডালপালা মধ্য কার্তিক (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) মাসে ছাঁটাই করে দিতে হবে। ডালপালা
ছাঁটাই করার পর কর্তিত স্থানে বোর্দোপেস্টের প্রলেপ দিতে হবে যাতে ছত্রাক আক্রমণ
করতে না পারে।
পানি সেচ ও নিষ্কাশন : খরা মৌসুমে
২-৩ বার সেচ প্রয়োগ করা দরকার। লেবু জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না তাই বর্ষা মৌসুমে
বৃষ্টিপাতের সময় গাছের গোড়ায় যাতে পানি না জমে সেজন্য নালা করে পানি নিষ্কাশনের
ব্যবস্থা করতে হবে।
পোকামাকড়
ও রোগ ব্যবস্থাপনা : লেবু ফসলে প্রায় ১৬ প্রজাতির পোকামাকড় আক্রমণ করে থাকে। এর মধ্যে
উল্লেখযোগ্য হলো লেবুর প্রজাপতি পোকা, লিফ মাইনার, সাইলিড বাগ,
থ্রিপস, ছাতরা পোকা, ফল
ছিদ্রকারী পোকা।
লেবুর প্রজাপতি পোকা : লেবুর
প্রজাপতি পোকার কীড়া পাতার কিনারা থেকে খাওয়া শুরু করে। এ পোকা মূলত নার্সারিতে ও
ছোট গাছে আক্রমণ করে। সাধারণত ফেব্রুয়ারি, জুলাই ও আগস্ট
মাসে এ পোকার আক্রমণ বেশি হয়ে থাকে। প্রতিকার হিসেবে পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ করতে হবে।
সম্ভব হলে ডিম ও কীড়াসহ পাতা সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। আলোক ফাঁদ দ্বারা
পূর্ণাঙ্গ পোকা ধরে মেরে ফেলতে হবে। আক্রমণ বেশি হলে কচি পাতায় স্পর্শ ও পাকস্থলী
বিষ (সাইপারমেথ্রিন ১০ ইসি, ফেনিট্রোথিয়ন ৫০ ইসি) অথবা
অন্তর্বাহী বা প্রবাহমান বিষ (ডাইমেথয়েট ৪০ ইসি,
কার্বোসালফান ২০ ইসি) জাতীয় কীটনাশক ২ মিলি/লিটার পানি বা ১
গ্রাম/লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পরপর ৩-৪ বার গাছে ভালোভাবে স্প্রে করতে
হবে।
লেবু
পাতার ছোট সুড়ঙ্গকারী পোকা : লিফ মাইনার বা সুড়ঙ্গকারী পোকার কীড়াগুলো পাতার
উপত্বকের ঠিক নিচের সবুজ অংশ খেয়ে আকা-বাঁকা সুড়ঙ্গের মতো সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে
গাছের পাতার কিনারার দিক মুড়ে পুত্তলিতে পরিণত হয়। আক্রমণের মাত্রা তীব্র হলে
গাছের পাতা কুঁকড়ে যায় ও বিবর্ণ হয়ে শুকিয়ে ঝরে পড়ে। আগস্ট ও অক্টোবর মাসে এ পোকার
আক্রমণ বেশি হয়ে থাকে। প্রতিকার হিসেবে পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ করতে হবে। সম্ভব হলে ডিম
ও কীড়াসহ পাতা সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। গ্রীষ্ম ও শরৎকালে নতুন পাতা গজানোর
সময় কচি পাতায় স্পর্শ ও পাকস্থলী বিষ (সাইপারমেথ্রিন ১০ ইসি, ফেনিট্রোথিয়ন ৫০ ইসি) অথবা অন্তর্বাহী বা প্রবাহমান বিষ (ডাইমেথয়েট ৪০ ইসি,
কার্বোসালফান ২০ ইসি) জাতীয় কীটনাশক ২ মিলি/লিটার পানি বা ১
গ্রাম/লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পরপর ৩-৪ বার গাছে ভালোভাবে স্প্রে করতে
হবে।
লেবুর
থ্রিপস পোকা : লেবুর থ্রিপস পোকা লেবুর কচিপাতা ও কচি ফলের রস চুষে খায়। আক্রান্ত পাতা
ওপরের দিকে বেঁকে নৌকার মতো আকৃতি ধারণ করে এবং পাতা খসখসে ও পুরু হয়ে যায়।
আক্রান্ত ফল বড় হওয়ার সাথে সাথে ধূসর বা রুপালি বর্ণের দাগ পড়ে এবং খসখসে হয়ে যায়।
প্রতিকার হিসেবে সাদা আাঠালো ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে। আক্রমণ বেশি হলে কচি পাতায়
স্পর্শ ও পাকস্থলী বিষ (সাইপারমেথ্রিন ১০ ইসি, ফেনিট্রোথিয়ন
৫০ ইসি) অথবা অন্তর্বাহী বা প্রবাহমান বিষ (ডাইমেথয়েট ৪০ ইসি,
কার্বোসালফান ২০ ইসি) জাতীয় কীটনাশক ২ মিলি/লিটার পানি বা ১
গ্রাম/লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পরপর ৩-৪ বার গাছে ভালোভাবে স্প্রে করতে
হবে। এছাড়া আক্রান্ত গাছে ফিপ্রোনিল ১ মিলি হারে মিশিয়ে অথবা ২/৩ বার স্প্রে করতে
হবে। অ্যাডমায়ার ২০০ এসএল বা টাফগর ৪০ ইসি ২মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন
অন্তর ২/৩ বার স্প্রে করতে হবে।
লাল পিঁপড়া : লাল পিঁপড়া
কয়েকটি পাতা একত্র করে বাসা তৈরি করে। এতে গাছের পাতা নষ্ট হয়ে যায় এবং সালোক
সংশ্লেষণ ব্যাহত হয়। এসব বাসায় মিলিবাগ আক্রমণ করে, ফলে গাছে
শুটিমোল্ড রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। গাছ থেকে পিঁপড়ার বাসা অপসারণ করতে হবে। প্রয়োজনে
সেভিন ৮৫ এসপি ২ মিলি/লিটার পানি বা ডারসবান ২০ ইসি ২ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে
পিঁপড়ার বাসায় প্রয়োগ করতে হবে।
লাল
মাকড় : লাল মাকড় লেবুজাতীয় ফলের কচিপাতা ও ফলে আক্রমণ করে। এদের আক্রমণে পাতার নিচের
দিক বাদামি বর্ণ ধারণ করে। পাতা কুঁকড়ে যায় ও গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। আক্রমণের
প্রথম দিকে আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। যে কোনো মাকড়নাশক যেমন
ভারটিম্যাক বা ওমাইট ৫৭ ইসি ১.৫ মিলি লিটার প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে গাছে স্প্রে
করতে হবে।
ছাতরা
পোকা : সাধারণত গ্রীষ্মকালে এ পোকা শাখা প্রশাখা, পাতার
নিচের দিকে এবং ফলের বোঁটার কাছে একত্রে গাঁদা হয়ে থাকে। পূর্ণাঙ্গ পোকা ও নিম্ফ
পাতা, ফল ও শাখা প্রশাখা থেকে রস চুষে খায়। এ পোকা থেকে
নিঃসৃত পদার্থে শুটিমোল্ড নামক ছত্রাকের জন্ম হয়। আক্রমণের প্রথম দিকে পোকাসহ
আক্রান্ত পাতা/কা-/ফল সংগ্রহ করে ধ্বংস করে ফেলতে হবে। তাছাড়া প্রতি লিটার পানিতে
৫ গ্রাম সাবান পানি মিশিয়ে ৭ দিন পরপর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
তাছাড়া পোকার জন্য জৈব বালাইনাশক
হিসেবে বাইকাউ-১ প্রতি শতাংশ জমির জন্য ৪ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করুন।
পাতার এপিট ওপিট এবং ১০-১২ দিন অন্তর কয়েক বার স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
রোগ ব্যবস্থাপনা
ক্যাঙ্কার
: এটি একটি
ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ। কচি পাতা, বাড়ন্ত কুঁড়ি, পাতা ও ফলে এ রোগের আক্রমণ বেশি হয়। আক্রান্ত পাতার উভয় পাশে খসখসে ক্ষতের
সৃষ্টি হয়। ক্ষত অংশের চারদিকে গোলাকার হলুদ কিনারা দেখা যায়। পাতা হলুদ হয়ে ঝরে
পড়ে এবং আক্রান্ত ডগা ওপর দিক থেকে মরতে থাকে। ফলের ওপর আক্রমণ বেশি হলে ফল ফেটে
যায় ও ঝরে পড়ে। ঘন ঘন বৃষ্টি হলে এ রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত বাতাস জনিত
কারণে ও লিফ মাইনার পোকার আক্রমণে গাছের ডাল ও পাতায় যে ক্ষতের সৃষ্টি হয় তার ভেতর
দিয়ে রোগ জীবাণু প্রবেশ করে এ রোগের সৃষ্টি করে।
প্রতিকার : পরিকল্পিতভাবে
পরিচ্ছন্ন চাষাবাদের মাধ্যমে জাড়া লেবুর বাগান স্থাপন করতে হবে। রোগের প্রাদুর্ভাব প্রকট হলে
কুপ্রাভিট ৮০ ডব্লিউপি (কপার অক্সিক্লোরাইড) প্রতি লিটার পানিতে ৭ গ্রাম হারে
১০-১৫ দিন পরপর স্প্রে করতে হবে। বোর্দোমিশ্রণ (১০০ গ্রাম তুঁতে ও ১০০ গ্রাম চুন
লিটার পানিতে মিশিয়ে) ৭-১০ দিন পরপর স্প্রে করতে হবে।
স্ক্যাব
: লেবুর
চামড়ার ওপর ছোট ছোট বাদামি বা লালচে বাদামি দাগ দেখা যায়। এ দাগগুলো দ্রুত বৃদ্ধি
পেয়ে খসখসে হয়ে যায় যা দেখতে অনেকটা দাদ রোগের মতো মনে হয়। কিছু কিছু দাগ গভীর হয়
আবার কিছু কিছু দাগ বাইরের দিকে খাঁড়া থাকে। এ রোগ ব্যবস্থাপনায় ম্যানকোজের জাতীয়
ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২.০ গ্রাম হারে ১০-১৫ দিন পরপর স্প্রে করতে হবে।
লেবু গাছের আগা মরে যাওয়া রোগ হলে প্রথমে
লেবু গাছের যে অংশটুকু মরে গেছে সেখান থেকে কিছু সুস্থ অংশসহ ধারালো চাকু
দ্বারা সুন্দরভাবে কেটে ফেলতে হবে। তারপর কাটা অংশে বর্দোপেস্ট এর প্রলেপ
দিতে হবে। সেক্ষেত্রে ১ লিটার পানিতে ১০০ গ্রাম তুঁত ও ১০০ গ্রাম চুন
মিশিয়ে বর্দোপেস্ট তৈরি করতে হয়। এছাড়া কপার অক্সিক্লোরাইড গ্রুপের যে
কোনো ছত্রাকনাশক ৪ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭ থেকে ১০ দিন পরপর ১/২
বার স্প্রে করা। সেসাথে লেবু বাগানটিকে সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
এসব নিয়ম মেনে চললে লেবু গাছের আগা মরা রোগ দমন করতে পারবেন।
বীজ বপন:ছিটিয়ে এবং সারি করে বপন করা যায়। সারিতে বপনের ক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সেমি রাখতে হবে। খরিফ-২ মৌসুমে ছিটিয়ে বোনা যায়। প্রতি হেক্টরে ৩৫-৪০ কেজি বীজ দরকার হয়। ছিটিয়ে বপনের ক্ষেত্রে বীজের পরিমাণ কিছু বেশি দিতে হবে।এলাকা ভেদে বপন সময়ের তারতম্য দেখা যায়। খরিফ-১ মৌসুমে মধ্য-ফাল্গুন থেকে ৩০শে ফাল্গুন (ফেব্রুয়ারির শেষ হতে মধ্য-মার্চ) এবং খরিফ-২ মৌসুমে ১লা ভাদ্র থেকে ১৫ই ভাদ্র (আগস্টের ১৫-৩১)। তবে মধ্য-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বপন করা যায়।
বারি মাস-৩ (হেমন-):গাছের আকার মধ্যম। স্থানীয় জাতের মত লতানো হয় না। ফল পাকলে কালো হয়। শুটিতে ঘন শুং আছে। বীজের রং কালচে। বীজের আকার স্থানীয় জাতের চেয়ে বেশ বড়। হাজার বীজের ওজন ৪০-৪৫ গ্রাম। ডাল রান্নার সময়কাল ৩০-৩৭ মিনিট। আমিষের পরিমাণ ২১-২৪%। জীবনকাল ৬৫-৭০ দিন। ফলন হেক্টরপ্রতি ১.৫-১.৬ টন। এ জাত হলদে মোজাইক ভাইরাস রোগ সহনশীল।
বাজারের সবচেয়ে জনপ্রিয় চালের নাম মিনিকেট। ঝকঝকে, ঝরঝরে চিকন এই চালের দাম কিছুটা বেশি হলেও ক্রেতাদের প্রথম পছন্দ মিনিকেট। কিন্তু অবাক করার ব্যাপার হল পৃথিবীতে মিনিকেট নামে কোন ধানের জাতই নেয় অথচ বাজারের মিনিকেট চালের ব্যবসা চলছে রমরমা। আর এই মিনিকেট চাল ক্যান্সারের জন্য দায়ী।এখন প্রশ্ন জাগতে পারে, যে ধানের অস্তিত্ব নেই সেই নামের চাল আসে কোথায় থেকে? আসলে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি মিনিকেট চাল আসে উত্তর বঙ্গের শস্যভাণ্ডার দিনাজপুরে। এখানে এক শ্রেণির চাল কলের মালিক আছেন যারা মোটা চাল থেকে মেশিনের মাধ্যমে চাল সরু এবং চিকন করে মিনিকেট বলে চালিয়ে দিচ্ছে বাজারে। কাটিং এবং পলিশ করার জন্য চালে ব্যবহার করা হচ্ছে ভিবিন্ন ধরনের রাসায়নিক যা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষজ্ঞদের মতে এতে চালের পুষ্টিগুন যেমন কমে যায় তেমনি তা আমাদের দেহে ক্যান্সার এবং নানা রকম রোগের জন্য দায়ী।‘১৯৯৫ সালের দিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ভারতের কৃষকদের মাঝে সে দেশের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট নতুন জাতের চিকন ‘শতাব্দী’ ধানবীজ বিতরণ করে। মাঠপর্যায়ে চাষের জন্য কৃষকদের এ ধানবীজের সঙ্গে আরো কিছু কৃষি উপকরণসহ একটি মিনি প্যাকেট দেয়া হয়। ওই প্যাকেটটাকে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট বলত ‘মিনি কিটস’ বলে। সেখান থেকেই ‘শতাব্দী’ ধানের নাম হয়ে যায় ‘মিনিকেট’।তবে নামের পেছনে ঘটনা যা-ই থাক, মিনিকেট নামে কোনো চালের জাত নেই এটাই বাস্তবতা। মোটা চালকে পলিশ করে মিনিকেট চাল বলে বিক্রি করা হচ্ছে দেশের বাজারে।খোঁজ নিয়ে মিনিকেট চাল বানানোর একটা যান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা গেছে। চলুন দেখে নিই প্রক্রিয়াটি।অটোরাইস মিলে এমন অতিবেগুনি রশ্মি রয়েছে যার ডিজিটাল সেন্সর চাল থেকে সকল কালো চাল, পাথর, ময়লা সরিয়ে ফেলে। এর পর এই চাল চলে যায় অটোমিলের বয়লার ইউনিটে সেখানে ৫ টি ধাপে মোটা চাল সাদা রং ধারণ করে। এর পর পলিশিং মেশিনে মোটা চাল কেতে চিকন করা হয়। আর চকচকে করার জন্য ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ক্যামিকেল যা মানবদেহে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ‘মিনিকেট’ নামে বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত কোনো জাতের ধান নেই। বিআর ২৮, কল্যাণী, স্বর্ণা, গুটিস্বর্ণা, লাল স্বর্ণা, আইঅর-৫০, জাম্বু ও কাজল লতা জাতের ধান ছেঁটে মিনিকেট বলে বস্তায় ভরে বিক্রি করা হচ্ছে। বাজারে এ চালের ব্যাপক চাহিদার জন্য ‘মিনিকেট’ নামে প্রতারণার ব্যবসা চলছে জমজমাট।তথ্যসূত্রঃ ইত্যাদি নিউজ
--পুনরায় বন্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাযুক্ত নিচু জমিতে জলমগ্নতা সহিষ্ণু জাত যেমন- ব্রি ধান ৫১, ব্রি ধান ৫২, ব্রি ধান ৭৯, বিনা ধান ১১ ও বিনা ধান ১২ নির্বাচন করা যেতে পারে । এ জাতগুলি দুই সপ্তাহ পর্যন্ত পানিতে নিমজ্জিত থাকলেও আশানুরূপ ফলন দিতে সক্ষম।--বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর নাবীতে রোপনের জন্য আলোক সংবেদনশীল উফশী জাত যেমন- বিআর ২২, বিআর ২৩, ব্রি ধান ৪৬ বিনাশাইল এবং নাইজারশাইলসহ স্থানীয় জাতসমূহ নির্বাচন করা যেতে পারে। নাবীতে রোপণের ক্ষেত্রে প্রতি গোছায় চারার সংখ্যা হবে ৪-৫ টি এবং রোপণ দূরত্ব হবে ২০দ্ধ১৫ সে.মি. । আলোক অসংবেদনশীল ও স্বল্পমেয়াদী জাত ( বিনা ধান ৭, বিনা ধান ১৬, বিনা ধান ১৭) এর বীজ সরাসরি বপন করা যেতে পারে।
ছাদের আকার ও
অবস্থান : ছাদের আকার ছোট, মাঝারি বা বড় হতে পারে। এ আকার বিবেচনায় ছাদের
কোন অংশে, কি কি, কত সংখ্যক বিভিন্ন ফল, সবজি, মসলা ও ঔষধি গাছ চাষ করা
যাবে তা শুরুতেই নির্ধারণ করা প্রয়োজন। নির্ধারিত ছাদ কত তলা বিশিষ্ট,
আশপাশে কত তলা বিশিষ্ট বিল্ডিং বা বড় আকারের গাছপালা আছে, সারা দিনে সেখানে
আলো-বাতাস বা রোদ পাওয়ার সুবিধা বিবেচনায় বাগান সৃষ্টি করতে হয়। ছাদের
অবস্থান অতি উঁচু হলে ঝড়-বাতাসের প্রভাব বেশি পড়ে। এজন্য বেশি লম্বা আকারের
ফল গাছ ছাদে রোপণ করা ঠিক হবে না। এমন অবস্থানে গাছ হেলে পড়া, ডাল ভেঙে
যাওয়া, ফল ঝরে পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এজন্য এক্ষেত্রে গাছকে ছেঁটে রেখে
বেশি ওপরের দিকে বাড়তে না দেয়া ভালো।
এছাড়া যেসব গাছ কম উচ্চতা বিশিষ্ট ও পাশের্^
বেশি বাড়ে তা দিয়ে ছাদ বাগান সাজানো প্রাধান্য দেয়া উচিত। একই কারণে কলা,
পেঁপে এ ধরনের লম্বা আকারের গাছ অতি উঁচু ছাদে রোপণ না করাই উত্তম। ছাদে
রোদের তাপ বা প্রচ-তা সরেজমিনের তুলনায় বেশি। সরাসরি রোদ পড়া এবং তার
প্রতিবিম্ব প্রতিফলনের কারণে এমনটা হয়। এ জন্য ছাদ বাগান সৃষ্টিতে ৫০-৭০%
রোদ প্রতিরোধী ঘন নেট ৭-৮ ফুট ওপরে ফিট করে ছাদের গাছের জন্য অনুকূল পরিবেশ
সৃষ্টি করা যেতে পারে।
ছাদে বাগান স্থাপন উপযোগী করা :
প্রথমে অনেকেই ছোট বড় নানা প্রকার টবে গাছ লাগিয়ে ছাদ বাগান শুরু করে। তবে
এ ব্যবস্থায় খুব একটা সফলতা আনা সম্ভব হয় না। এ জন্য ছাদে রোপিত গাছের
শিকড় যেন বেশি ছড়াতে পারে এবং বেশি সংখ্যক গাছ রোপণ করা যায় অথচ ছাদের কোনো
ক্ষতি হয় না এ ব্যবস্থা শুরুতেই নেয়া দরকার।
বক্স তৈরি করা : বেশির ভাগ
ছাদ বাগানি ছাদের কিনারগুলো ২-৩ ফুট চওড়া ও ২-৩ ফুট উঁচু করে বক্স তৈরি করে
নিয়ে সেগুলো পটিং মিডিয়া দিয়ে ভরাট করে তাতে গাছ রোপণ করে থাকে। অনেকে
নিচে ৮-১২ ইঞ্চি ফাঁক রেখে ঢালাই করে নিয়ে মজবুত করে এ বক্স বানিয়ে নেয়।
কেউবা বক্সের নিচের অংশ ২-৩ ইঞ্চি উঁচু করে এ অংশ ঢালাই করে তার ওপর সরাসরি
ইটের পাতলা গাঁথনি দিয়ে কম খরচে অনুরূপ লম্বা বক্স বানিয়ে নেয়। বিকল্প
ব্যবস্থায় টিনের/প্লাস্টিকের স্টাকচার তৈরি করে অথবা জাহাজ ভাঙা বাথটবের
আকারের পাত্র সংগ্রহ করে তা বক্স/টবের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে।
পটিং মিডিয়া দিয়ে বক্স/টব ভরাট করা : সাধারণত
নার্সারি থেকে গোবর মেশানো ভিটে মাটি সংগ্রহ করে তা গাছ রোপণের কাজে
ব্যবহার করা হয়। যেহেতু ফসলি জমির মতো ছাদ বাগানে লাগানো গাছের শিকড় ছড়ানোর
সুযোগ কম, এ জন্য ভালো মানের পটিং মিডিয়া দিয়ে এবং এ নিচের অংশে পানি
নিষ্কাশন ও সহজভাবে গাছের শিকড় ছড়ানোর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। বক্সের
বিভিন্ন স্তর যেভাবে উপযোগী করা যেতে পারে তা নি¤œরূপ :
ক. তলার প্রথম অংশ : তৃতীয় গ্রেডের ইটের কম দামি ছোট আকারের খোয়া/টুকরা দিয়ে ৩-৪ ইঞ্চি ভরাট করা;
খ. তার ওপরের স্তরে ২-৩ ইঞ্চি পুরু করে কাঠ কয়লা দিয়ে এ দ্বিতীয় স্তর ভরাট করা;
গ. ৩য় স্তর ২-৩ ইঞ্চি পুরু করে নারিকেলের ছোবড়ার টুকরা অথবা নারিকেলের ছোবড়া দিয়ে সাজানো;
ঘ. ৪র্থ স্তর ২-৩ ইঞ্চি পুরু মোটা বালু (সিলেট স্যান্ড) বা ক্ষুদ্র পাথর কুচি/ইটের চিপস দিয়ে ভরাট করা;
ঙ. শেষের বা ওপরের অংশ ২-২.৫ ফুট ভালো মানের পটিং মিডিয়া দিয়ে ভরাট করা হলে ছাদ বাগানের গাছের জন্য বেশি উপযোগী হবে।
পটিং মিডিয়া তৈরির পদ্ধতি : বিদেশে
প্রধানত পিটমস, পিটসয়েল ও জৈব পদার্থ (কম্পোস্ট) দিয়ে তৈরি রেডিমেড পটিং
মিডিয়া বিভিন্ন স্থানীয় নার্সারিতে পাওয়া যায়। এমন কি কোন ধরনের গাছ রোপণ
করা হবে তার জন্য ভিন্নতর মিডিয়া পাওয়া যায়। ভালো মানের মিডিয়া তৈরিতে এ
দেশে যা পাওয়া যায় তার একটা আনুপাতিক হার নিম্নে দেয়া হলো :
ক. কোকোডাস্ট বা নারিকেলের ছোবড়ার গুঁড়া - ২৫%
খ. মোটা বালু (সিলেট স্যান্ড) - ১০%
গ. ভিটে মাটি (যা নার্সারিতে পাওয়া যায়) - ২৫%
ঘ. আর্বজনা পচা/পচা গোবর - ৩০%
ঙ. তৃতীয় গ্রেডের ইটের ক্ষুদ্র চিপস/খোয়া - ১০%
এগুলো
ভালোভাবে মিশিয়ে বক্স/টবের অবশিষ্ট অংশ ভরাট করে তাতে গাছ লাগানো হলে গাছ
দ্রুত বাড়বে, বেশি ফলন পাওয়া যাবে। মিডিয়ার সাথে কিছু পরিমাণ করাত কলের
গুঁড়া, ভার্মি কম্পোস্ট অথবা নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত কম্পোস্ট
ব্যবহার করা এবং তার সাথে কিছু হাড়ের গুঁড়া ও খৈল মেশানো ভালো।
ছাদে গাছ রোপণ : ছাদে বাগান
তৈরিতে নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে উন্নত জাতের সুস্থ-সবল চারা/কলম সংগ্রহের
গুরুত্ব অপরিসীম। এ বাগানে যেসব দীর্ঘমেয়াদি ও মধ্য মেয়াদি ফল গাছ রোপণ করা
হবে তা বারোমাসী জাতের হলে ভালো হয়। অন্যথায় ৫-৬ মাস একাধারে ফল পাওয়া যায়
এমন জাতের গাছ রোপণ করা উচিত। খুব কম সময় ধরে ফল পাওয়া যায় (লিচু) এমন গাছ
ছাদের জন্য নির্বাচন করা ঠিক না। বাগানকে এমনভাবে সাজাতে হবে যেন তা সব
সময় কোনো না কোনো গাছে ফুল ফল ধরা অবস্থা বিরাজ করে।
ছাদ বাগানের জন্য উপযোগী ফল গাছের মধ্যে :
আম, বিদেশি কাঁঠাল (আঠা, ভোতাবিহীন রঙ্গিন জাত যা রোপণের দুই বছর পর ফল
দেয়), পেয়ারা, বারোমাসী লেবু (কাগজি, সিডলেস, এলাচি), মাল্টা, কমলা, থাই
বাতাবি, কুল (টক ও মিষ্টি), ডালিম, শরিফা, সফেদা, আমলকী, বারোমাসী আমড়া,
জামরুল, অরবরই, বিলিম্বি, করমচা, ড্রাগন অন্যতম।
শাকসবজির : বেগুন, টমেটো, ঢেঁড়স, চুকুর,
ক্যাপসিকাম, শিম, বরবটি, শসা, করলা, লাউ, ধুন্দল, বারোমাসী সজিনা, লালশাক,
ডাঁটাশাক, পুঁইশাক, কলমিশাক, ব্রোকলি, মুলা।
মসলা জাতীয় : মরিচ, ধনেপাতা, বিলাতি ধনিয়া, পুদিনা, কারিপাতা, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, গোলমরিচ, পাম।
ঔষধিগুণ বিশিষ্ট : অ্যালোভেরা, তুলসী, থানকুনি, চিরতা, স্টিভিয়া, গাইনোরা।
ফুল জাতীয় : গোলাপ, বেলী, টগর, জুঁই, গন্ধরাজ, জবা, টিকোমা, জারবেরা, শিউলি, এলামন্ডা, বগুনভিলা ও বিভিন্ন মৌসুমি ফুল।
গাছের রোপণ ও পরিচর্যা : উন্নত কাঙিক্ষত
জাতের কলম করা গাছ রোপণ করে গাছে কাঠি বা খুঁটি দিয়ে সোজা করে রাখতে হবে।
তাতে গাছ হেলে পড়া বা নড়ে গিয়ে দুর্বল হওয়া রোধ হবে। প্রয়োজনে গাছের
অপ্রয়োজনীয় কিছু ডাল বিশেষ করে ওপরের দিকে বেশি বাড়ন্ত ডাল কমিয়ে গাছকে
বেশি উঁচু না করে পাশে বাড়তে সহায়তা দিতে হবে। গাছের আকার বেশি ছোট হলে
অপেক্ষাকৃত ছোট টবে বা সিমেন্টের পরিত্যক্ত তৈরি ব্যাগে কিছু সময় সংরক্ষণ
করে পরবর্তীতে বড় হলে তা পর্যায়ক্রমে বক্স/বড় টবে রোপণ করা ভালো। টবে
সংরক্ষিত গাছ সরাসরি ছাদে না রেখে নিচে এক সারি ইটের ওপর বসানো দরকার। তাতে
টবের অতিরিক্ত পানি সহজে বের হবে, ছাদের জন্য ভালো হবে। ড্রামে সংরক্ষিত
গাছে রোদের তাপে বেশি গরম হয়। এজন্য চট/ছালা দিয়ে ড্রামের চারধার ঢেকে দিলে
তা অনেকটা রোধ হবে। গাছে পানি সেচ দেয়ার ফলে উপরিভাগের মাটি শক্ত হয়ে চট
ধরে। মাঝে মাঝে নিড়ানি দিয়ে ওপরের স্তর ভেঙে দেয়া হলে তা রোধ হবে। এ
ব্যবস্থায় আগাছা দমন করা যাবে ও ভেতরে বায়ু চলাচল সুবিধা হবে। খরা মৌসুমে
দীর্ঘমেয়াদি বড় গাছের গোড়ার চার ধারে শুকনা কচুরিপানা বা খড়কুটা, শুকনো
পাতা দিয়ে মালচিং দেয়া হলে রস সংরক্ষিত থাকবে, ঘাস গজানো রোধ হবে এবং পরে
এগুলো পচে খাদ্য হিসেবে কাজে লাগবে।
গাছের অবস্থান নির্ণয় : কোন
কোন গাছ বেশি রোদ পছন্দ করে (কাগজি লেবু, ড্রাগন ফল) কোন গাছ আধা ছায়ায়
ভালো হয় (এলাচি লেবু, জামরুল), আবার কোনো গাছ ছায়া পছন্দ করে (লটকন,
রামবুটান)। এজন্য ছাদ বাগান থেকে বেশি সুফল পেতে ছাদে রোদের/আলো-বাতাস
প্রাপ্তি অবস্থা বুঝে গাছের অবস্থান চূড়ান্ত করা প্রয়োজন।
পানি সেচ : অতিরিক্ত পানি
দেয়া এবং অতি কম দেয়া উভয়ই গাছের জন্য ক্ষতিকর। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বেশি
পানি দেয়ার ফলে বিভিন্ন রোগে গাছ আক্রান্ত হয়, এমনকি মারা যায়। এ জন্য
গাছের গোড়া শুকালেই কেবল পানি দেয়া যাবে, গোড়া ভেজা থাকলে কোনো মতেই তাতে
পানি দেয়া যাবে না। কিছু গাছ বেশি পানি গ্রহণ করে (ড্রাগন, নারিকেল) অনেক
গাছে পানি কম লাগে (শিম, মরিচ, বেগুন)। বৃষ্টি বা নালায় জমে থাকা পানি গাছ
বেশি পছন্দ করে, বিশুদ্ধ পানি নহে। তবে সকাল বেলা গাছে পানি সেচ দেয়া
উত্তম।
পোকা ও মাকড় দমন : প্রাথমিক
অবস্থায় শুরুতে সীমিত সংখ্যক পোকা বা তার ডিমের গুচ্ছ দেখা যায়। নিয়মিত
ছাদ বাগান পরীক্ষা করে দেখা মাত্র পোকা বা পোকার ডিমগুলো সংগ্রহ করে মেরে
ফেলা ভালো। পাতার নিচে ভাগে পোকামাকড় অবস্থান করে। অনেক ক্ষেত্রে বয়স্ক
পাতায় পোকামাকড় বেশি দিন আশ্রয় নেয়। এ জন্য পাতা হলুদ হওয়া মাত্র পাতার
বোটা রেখে তা ছেঁটে দিতে হয়। অতি ঝাল ২-৩ গ্রাম মরিচের গুড়া এক লিটার
পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন ছেঁকে নিয়ে তাতে ২ গ্রাম ডিটারজেন্ট পাউডার ও
এক চা চামচ পিয়াজের রস একত্রে মিশিয়ে ৮-১০ দিনের ব্যবধানে স্প্রে করলে জৈব
পদ্ধতি অবলম্বনে গাছকে পোকার হাত থেকে নিরাপদ রাখা যায়। মাইট বা ক্ষুদ্র
মাকড় খালি চোখে দেখা যায় না। লিচু, মরিচ, বেগুন, গাঁদা ফুলে মাইটের উপদ্রব
বেশি দেখা যায়। মরিচের গুড়া পদ্ধতিতেও এ মাকড় দমন করা যায়। যেহেতু
পোকামাকড়ের অবস্থান পাতার নিচে এ জন্য এ অংশ ভালোভাবে স্প্রে করে পোকা দমনে
কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। কীটনাশক ব্যবহার কালে খেয়াল রাখতে হবে যেন তার
টকসিসিটি কম সময় থাকে (ডেকামেথ্রিন দলীয় হতে পারে তবে ইমিডাক্লোরোপ্রিড
দলীয় নয়)।
সার প্রয়োগ : মাছ, মাংস ও
তরকারি ধোয়া পানি গাছে ব্যবহার করলে গাছের খাবারের অভাব কিছুটা পূরণ হয়।
এছাড়াও মিশ্র সার, হাড়ের গুড়া মাঝে মাঝে এবং অনুখাদ্য (দস্তা, বোরন,
ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ) বছরে একবার প্রয়োগ করা ভালো। মাছের কাঁটা,
হাড়ের টুকরা, ডিমের খোসা, তরিতরকারির পরিত্যক্ত অংশ, পাতা, একটা ড্রামে
পঁচিয়ে নিয়ে ছাদ বাগানে ব্যবহার করা ভালো। কয়েক বছরের বয়স্ক গাছের গোড়ার
চারধারে সাবধানে কিছু মাটি উঠিয়ে ফেলে নতুন ভাবে পটিং মিডিয়া দিয়ে ভরাট করা
হলে গাছের স্বাস্থ্য ফেরানো সহজ হয়। সম্ভব হলে গাছকে ছাঁটাই করে কিছু
মাটিসহ উঠিয়ে নিয়ে সার মিশ্রিত মাটি পরিবর্তন করার ব্যবস্থা নেয়া যায়। এ
ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ছাড়া আগানো উচিত হবে না। জেনে শুনে তা করা যেতে পারে।
অপেক্ষাকৃত ছোট টব থেকে বড় টবে গাছ অপসারণ করার মাধ্যমে গাছকে স্বাস্থ্যবান
করা যায়। যারা ছাদ বাগানে অভিজ্ঞ তাদের বাগান পরিদর্শন করে ও সফলতার
দিকগুলো জেনে বা দেখে শিখে তা নিজ বাগানে প্রয়োগ করা উত্তম। ফুল-ফল ঝরা
রোধে ও ফল ধরা বাড়াতে নানা প্রকার অনুখাদ্য/হরমোন (সিলভামিক্স, লিটোসেন,
ফ্লোরা প্রয়োগ করে অনেকে সুফল আহরণ করে থাকে।
একটা সুন্দর ছাদ বাগান দিতে পারে পরিবারের
সুস্থ পরিবেশ ও নিরাপদ চাহিদামতো প্রতিদিনের তাজা খাবার। এক তথ্য মতে যাদের
ছাদ বাগান আছে তাদের পরিবারে শান্তি, যাদের নেই তাদের তুলনায় বেশি। আসুন
আমরা যার যতটুকু সুবিধা আছে তথায় ভালোবাসার পরশে পরিচর্যায় প্রতি ছাদ
বাগানকে সুন্দর সফলভাবে গড়ে তুলি ও তা থেকে নির্মল সুফল আহরণ করি।
এম. এনামুল হক
সাবেক মহাপরিচালক, ডিএই এবং সদস্য বিশেষজ্ঞ পুল (APA), কৃষি মন্ত্রণালয়,
এটাবপেয়ারার ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমনে হয়েছে। (Guava Fruit Borer)লহ্মণফলের বাড়ন্ত অবস্থায় পূর্ণ বয়স্ক পোকা বোঁটার কাছে খোসার নীচে ডিম পাড়ে।ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে বোঁটার নিকট ফলের শাশ ও বীজ খেতে থাকে।বোঁটার নিকট করাতের গুড়ার মত পোকার মল জমে, স্থানটি কলো হয়।ফল কাটলে ভিতরে কীড়া খাওয়ার লহ্মণ ও কীড়া দেখা যায়।ফলের গুটি পচে যায়, অপরিপক্ক ও পরিপক্ক ফল ঝড়ে যায়।প্রতিকারবাগান ও গাছ পরিস্কার পরিছন্ন রাখা,বৎসরে দুইবার সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করা।বর্ষা মৌসুম শেষে গাছের অপ্রয়োজনীয়, মৃত, অর্ধমৃত ডালপালা ছাঁটাই করে আলোবাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করা।আক্রান্ত অংশ পোকাসহ সংগ্রহ করে পুতে ফেলা।আক্রান্ত ফল সংগ্রহ করে পুতে ফেলা,পাকা ফল দ্রুত সংগ্রহ করা।গাছে মুকুল আসার পূর্বে ১ম বার, মটর দানার মত হলে ২য় বারএবং মার্বেল দানার মত হলে ৩য় বার অনুমোদিত কীটনাশক স্প্রে করা।ল্যাম্ডাসাইহেলোথ্রিন২.৫ইসি (ক্যারাটে/ফাইটার/এন্টিক)১মিঃলিঃ/লিটার পানি স্প্রে।
বর্তমান ডিজিটালাইজেশনের যুগে কৃষি ভিত্তিক সেবা কম সময়ে, কম খরচে দেবার প্রচেষ্ঠা হলো কৃষি বাতায়ন। কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানের আলাদা ওয়েবসাইট থাকলেও প্রয়োগিক জ্ঞান বা সমস্যার সমাধানে কৃষি বাতায়ন একটি সমন্বিত তথ্য সরবরাহকারী হিসেবে কাজ করবে বলে আশা করি। এছাড়াও ৩৩৩১ এর মাধ্যমে যে কোন কৃষক বা কৃষিজীবী সরাসরি সম্প্রসারন কর্মীদের কাছে থেকে সেবা পেতে পারেন। কৃষি উপকরণ , কৃষি পন্য, আধুনিক চাষ পদ্ধতি, বিভিন্ন রোগ বালাই এর তথ্য পেতে পারে খুব সহজেই।
গ্রীষ্মকাল এবং বর্ষাকালকলম করার উপযুক্ত সময়। মে থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত কলম করার উপযুক্ত সময়। কেননা এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকে যা কলম জোড়া লাগার জন্য সহায়ক। আম, কাঠাল, লিচু, জামরুল, ডালিম,গোলাপজাম, লেবু, পেয়ারা, জলপাই কামরাঙ্গা, আমলকি, বরই ইত্যাদি ফল গাছে কলম করা যায়।
কলম্বো লেবু একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ও রপ্তানিযোগ্য ফসল। এ লেবুর রস নয় মূলত বাকল খাওয়া হয়। এর আকার সাধারণ লেবুর চেয়ে বেশ বড়। এর চামড়া বেশ পুরু তবে রসের পরিমাণ খুবই কম। লেবুটির চামড়ার একটি বিশেষ মিষ্টি গন্ধ রয়েছে। খোসা দিয়ে আচারও তৈরি করা হয়। বর্তমানে সিলেট অঞ্চলসহ বাংলাদেশের প্রায় অঞ্চলে এ লেবুর চাষ হচ্ছে। জলবায়ু ও মাটি : আর্দ্র ও উঁচু পাহাড়ি অঞ্চলে এ লেবু ভালো জন্মে। প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এমন পাহাড়ি অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনযুক্ত অম্লীয় মাটি এটি চাষের জন্য বেশি উপযোগী। ২৫-৩০ সেলসিয়াস গড় তাপমাত্রা প্রয়োজন। মাটির পিএইচ মান ৫-৬ হলে ভালো হয়। লেবু চাষের জন্য হালকা দোঁ-আশ ও নিষ্কাশন ক্ষমতা সম্পন্ন অম্লীয় মাটি প্রয়োজন। বংশবিস্তার : বীজ (চারা) ও অঙ্গজ (কলম) দুইভাবে বংশবিস্তার করা যায়। সাধারণত গুটি কলম দিয়ে বংশবিস্তার করা হয়। অঙ্গজ উপায়ে উৎপন্ন চারায় ২ থেকে ৩ বছরেই ফল ধরতে শুরু করে। মাদা তৈরি : চারা বা কলম রোপণ করার ১৫-২০ দিন আগে ২.৫ মিটার থেকে ৩.৫ মিটার দূরত্বে ৬০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য, ৬০ সেন্টিমিটার প্রস্থ এবং ৬০ সেন্টিমিটার গভীরতা বিশিষ্ট গর্ত তৈরি করতে হবে। গর্তের ওপরের মাটির সাথে ২০ কেজি জৈব সার, ২০০ গ্রাম টিএসপি, ২০০ গ্রাম এমওপি সার ভালোভাবে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে দিতে হবে। প্রতি হেক্টর জমিতে ১১১১-১৬০০টি চারা রোপণ করা যায়। রোপণ পদ্ধতি : লেবুর চারা বা কলম সারি বা বর্গাকার পদ্ধতিতে লাগানো উচিত। ফলে বাগানের আন্তঃপরিচর্যা ও ফল সংগ্রহ করা সহজ হয়। রোপণ সময় : মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। তবে যদি সেচ সুবিধা থাকে তাহলে সারা বছরই চারা লাগানো যায়। সার প্রয়োগ পদ্ধতি : সার তিন কিস্তিতে গাছের গোড়া হতে কিছু দূরে ছিটিয়ে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে বা চাষ দিয়ে মাটি সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। পাহাড়ের ঢালে ডিবলিং পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। প্রথম কিস্তি বর্ষার প্রারম্ভে অর্থাৎ বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে এবং দ্বিতীয় কিস্তি মধ্য ভাদ্র থেকে মধ্য কার্তিক মাসে এবং তৃতীয় কিস্তি মাঘ-ফাল্গুন মাসে প্রয়োগ করতে হবে। অঙ্গ ছাঁটাই : গাছের গোড়ার দিকে জল শোধক শাখা বের হলেই কেটে ফেলতে হবে। এছাড়া গাছের ভেতরের দিকে দুর্বল ডালপালা মধ্য কার্তিক (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) মাসে ছাঁটাই করে দিতে হবে। ডালপালা ছাঁটাই করার পর কর্তিত স্থানে বোর্দোপেস্টের প্রলেপ দিতে হবে যাতে ছত্রাক আক্রমণ করতে না পারে। পানি সেচ ও নিষ্কাশন : খরা মৌসুমে ২-৩ বার সেচ প্রয়োগ করা দরকার। লেবু জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না তাই বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাতের সময় গাছের গোড়ায় যাতে পানি না জমে সেজন্য নালা করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। পোকামাকড় ও রোগ ব্যবস্থাপনা : লেবু ফসলে প্রায় ১৬ প্রজাতির পোকামাকড় আক্রমণ করে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো লেবুর প্রজাপতি পোকা, লিফ মাইনার, সাইলিড বাগ, থ্রিপস, ছাতরা পোকা, ফল ছিদ্রকারী পোকা। লেবুর প্রজাপতি পোকা : লেবুর প্রজাপতি পোকার কীড়া পাতার কিনারা থেকে খাওয়া শুরু করে। এ পোকা মূলত নার্সারিতে ও ছোট গাছে আক্রমণ করে। সাধারণত ফেব্রুয়ারি, জুলাই ও আগস্ট মাসে এ পোকার আক্রমণ বেশি হয়ে থাকে। প্রতিকার হিসেবে পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ করতে হবে। সম্ভব হলে ডিম ও কীড়াসহ পাতা সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। আলোক ফাঁদ দ্বারা পূর্ণাঙ্গ পোকা ধরে মেরে ফেলতে হবে। আক্রমণ বেশি হলে কচি পাতায় স্পর্শ ও পাকস্থলী বিষ (সাইপারমেথ্রিন ১০ ইসি, ফেনিট্রোথিয়ন ৫০ ইসি) অথবা অন্তর্বাহী বা প্রবাহমান বিষ (ডাইমেথয়েট ৪০ ইসি, কার্বোসালফান ২০ ইসি) জাতীয় কীটনাশক ২ মিলি/লিটার পানি বা ১ গ্রাম/লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পরপর ৩-৪ বার গাছে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে। লেবু পাতার ছোট সুড়ঙ্গকারী পোকা : লিফ মাইনার বা সুড়ঙ্গকারী পোকার কীড়াগুলো পাতার উপত্বকের ঠিক নিচের সবুজ অংশ খেয়ে আকা-বাঁকা সুড়ঙ্গের মতো সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে গাছের পাতার কিনারার দিক মুড়ে পুত্তলিতে পরিণত হয়। আক্রমণের মাত্রা তীব্র হলে গাছের পাতা কুঁকড়ে যায় ও বিবর্ণ হয়ে শুকিয়ে ঝরে পড়ে। আগস্ট ও অক্টোবর মাসে এ পোকার আক্রমণ বেশি হয়ে থাকে। প্রতিকার হিসেবে পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ করতে হবে। সম্ভব হলে ডিম ও কীড়াসহ পাতা সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। গ্রীষ্ম ও শরৎকালে নতুন পাতা গজানোর সময় কচি পাতায় স্পর্শ ও পাকস্থলী বিষ (সাইপারমেথ্রিন ১০ ইসি, ফেনিট্রোথিয়ন ৫০ ইসি) অথবা অন্তর্বাহী বা প্রবাহমান বিষ (ডাইমেথয়েট ৪০ ইসি, কার্বোসালফান ২০ ইসি) জাতীয় কীটনাশক ২ মিলি/লিটার পানি বা ১ গ্রাম/লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পরপর ৩-৪ বার গাছে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে। লেবুর থ্রিপস পোকা : লেবুর থ্রিপস পোকা লেবুর কচিপাতা ও কচি ফলের রস চুষে খায়। আক্রান্ত পাতা ওপরের দিকে বেঁকে নৌকার মতো আকৃতি ধারণ করে এবং পাতা খসখসে ও পুরু হয়ে যায়। আক্রান্ত ফল বড় হওয়ার সাথে সাথে ধূসর বা রুপালি বর্ণের দাগ পড়ে এবং খসখসে হয়ে যায়। প্রতিকার হিসেবে সাদা আাঠালো ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে। আক্রমণ বেশি হলে কচি পাতায় স্পর্শ ও পাকস্থলী বিষ (সাইপারমেথ্রিন ১০ ইসি, ফেনিট্রোথিয়ন ৫০ ইসি) অথবা অন্তর্বাহী বা প্রবাহমান বিষ (ডাইমেথয়েট ৪০ ইসি, কার্বোসালফান ২০ ইসি) জাতীয় কীটনাশক ২ মিলি/লিটার পানি বা ১ গ্রাম/লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পরপর ৩-৪ বার গাছে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে। এছাড়া আক্রান্ত গাছে ফিপ্রোনিল ১ মিলি হারে মিশিয়ে অথবা ২/৩ বার স্প্রে করতে হবে। অ্যাডমায়ার ২০০ এসএল বা টাফগর ৪০ ইসি ২মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন অন্তর ২/৩ বার স্প্রে করতে হবে। লাল পিঁপড়া : লাল পিঁপড়া কয়েকটি পাতা একত্র করে বাসা তৈরি করে। এতে গাছের পাতা নষ্ট হয়ে যায় এবং সালোক সংশ্লেষণ ব্যাহত হয়। এসব বাসায় মিলিবাগ আক্রমণ করে, ফলে গাছে শুটিমোল্ড রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। গাছ থেকে পিঁপড়ার বাসা অপসারণ করতে হবে। প্রয়োজনে সেভিন ৮৫ এসপি ২ মিলি/লিটার পানি বা ডারসবান ২০ ইসি ২ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে পিঁপড়ার বাসায় প্রয়োগ করতে হবে। লাল মাকড় : লাল মাকড় লেবুজাতীয় ফলের কচিপাতা ও ফলে আক্রমণ করে। এদের আক্রমণে পাতার নিচের দিক বাদামি বর্ণ ধারণ করে। পাতা কুঁকড়ে যায় ও গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। আক্রমণের প্রথম দিকে আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। যে কোনো মাকড়নাশক যেমন ভারটিম্যাক বা ওমাইট ৫৭ ইসি ১.৫ মিলি লিটার প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে গাছে স্প্রে করতে হবে। ছাতরা পোকা : সাধারণত গ্রীষ্মকালে এ পোকা শাখা প্রশাখা, পাতার নিচের দিকে এবং ফলের বোঁটার কাছে একত্রে গাঁদা হয়ে থাকে। পূর্ণাঙ্গ পোকা ও নিম্ফ পাতা, ফল ও শাখা প্রশাখা থেকে রস চুষে খায়। এ পোকা থেকে নিঃসৃত পদার্থে শুটিমোল্ড নামক ছত্রাকের জন্ম হয়। আক্রমণের প্রথম দিকে পোকাসহ আক্রান্ত পাতা/কা-/ফল সংগ্রহ করে ধ্বংস করে ফেলতে হবে। তাছাড়া প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম সাবান পানি মিশিয়ে ৭ দিন পরপর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে। তাছাড়া পোকার জন্য জৈব বালাইনাশক হিসেবে বাইকাউ-১ প্রতি শতাংশ জমির জন্য ৪ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করুন। পাতার এপিট ওপিট এবং ১০-১২ দিন অন্তর কয়েক বার স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। রোগ ব্যবস্থাপনা ক্যাঙ্কার : এটি একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ। কচি পাতা, বাড়ন্ত কুঁড়ি, পাতা ও ফলে এ রোগের আক্রমণ বেশি হয়। আক্রান্ত পাতার উভয় পাশে খসখসে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। ক্ষত অংশের চারদিকে গোলাকার হলুদ কিনারা দেখা যায়। পাতা হলুদ হয়ে ঝরে পড়ে এবং আক্রান্ত ডগা ওপর দিক থেকে মরতে থাকে। ফলের ওপর আক্রমণ বেশি হলে ফল ফেটে যায় ও ঝরে পড়ে। ঘন ঘন বৃষ্টি হলে এ রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত বাতাস জনিত কারণে ও লিফ মাইনার পোকার আক্রমণে গাছের ডাল ও পাতায় যে ক্ষতের সৃষ্টি হয় তার ভেতর দিয়ে রোগ জীবাণু প্রবেশ করে এ রোগের সৃষ্টি করে। প্রতিকার : পরিকল্পিতভাবে পরিচ্ছন্ন চাষাবাদের মাধ্যমে জাড়া লেবুর বাগান স্থাপন করতে হবে। রোগের প্রাদুর্ভাব প্রকট হলে কুপ্রাভিট ৮০ ডব্লিউপি (কপার অক্সিক্লোরাইড) প্রতি লিটার পানিতে ৭ গ্রাম হারে ১০-১৫ দিন পরপর স্প্রে করতে হবে। বোর্দোমিশ্রণ (১০০ গ্রাম তুঁতে ও ১০০ গ্রাম চুন লিটার পানিতে মিশিয়ে) ৭-১০ দিন পরপর স্প্রে করতে হবে। স্ক্যাব : লেবুর চামড়ার ওপর ছোট ছোট বাদামি বা লালচে বাদামি দাগ দেখা যায়। এ দাগগুলো দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে খসখসে হয়ে যায় যা দেখতে অনেকটা দাদ রোগের মতো মনে হয়। কিছু কিছু দাগ গভীর হয় আবার কিছু কিছু দাগ বাইরের দিকে খাঁড়া থাকে। এ রোগ ব্যবস্থাপনায় ম্যানকোজের জাতীয় ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২.০ গ্রাম হারে ১০-১৫ দিন পরপর স্প্রে করতে হবে।